Advertisement
১২ জানুয়ারি ২০২৫
Midnapore Medical College

স্যালাইনকাণ্ড: উত্তরবঙ্গের কর্মসূচি ছেড়ে মেদিনীপুরে মিনাক্ষী, সুপারের দফতরে তালা ঝুলিয়ে চলল বিক্ষোভ

স্যালাইনকাণ্ডের প্রতিবাদে রবিবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায় এবং অন্য বাম যুব নেতৃত্ব। হাসপাতাল সুপারের অফিসে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা।

স্যালাইনকাণ্ডের প্রতিবাদে রবিবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে বিক্ষোভ মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়দের।

স্যালাইনকাণ্ডের প্রতিবাদে রবিবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে বিক্ষোভ মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়দের। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:৪৮
Share: Save:

স্যালাইন-বিতর্কে আন্দোলনের ঝাঁজকে পুরোদমে ব্যবহার করতে চাইছে বামেরা। আন্দোলনকে আরও জোরদার করতে চাইছেন বাম নেতৃত্ব। মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের সাংগঠনিক কর্মসূচি ছিল উত্তরবঙ্গে। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে আসা হয়েছে মেদিনীপুরে। রবিবার দুপুরে হাসপাতালে সুপারের দফতরে তালা ঝুলিয়ে দেয় ডিওয়াইএফআই। হাসপাতাল সুপারের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখায় সিপিএম যুব শাখা। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, ময়ূখ বিশ্বাস-সহ অন্য নেতারাও।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মেদিনীপুর শহরের রাস্তায় মিছিল করেন তাঁরা। পরে কুশপুতুল নিয়ে হাসপাতাল সুপারের অফিসের সামনে পৌঁছে যান বিক্ষোভকারীরা। ওই সময়ে সুপারের অফিসের গেট বন্ধ ছিল। প্রথমে সেটি খোলার চেষ্টা করেন ডিওয়াইএফআই কর্মীরা। পরে তালাবন্ধ গেটে নিজেরাও একটি তালা ঝুলিয়ে দেন। যদিও হাসপাতাল চত্বরে কুশপুতুল দাহ করেননি ডিওয়াইএফআই কর্মীরা। পরে হাসপাতাল চত্বর থেকে তাঁরা চলে যান থানার সামনে। সেখানে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন মিনাক্ষীরা।

তিনি বলেন, “পুলিশ-প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য দফতরের যোগসাজশে দুর্নীতির শিকড় ভিতর অবধি পুঁতে না দিলে, জাল ওষুধ পশ্চিমবঙ্গের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে চলতে পারে না।” আরজি কর-কাণ্ডের প্রসঙ্গও উঠে আসে মিনাক্ষীর গলায়। মিনাক্ষীর প্রশ্ন, “দুর্নীতিরোধে পুলিশ নিজের কাজ কেন করতে পারছে না? তা হলে কি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করতে আটকাচ্ছেন? না কি এরা নিজেদের ইচ্ছামতো তদন্ত করছে?”

বস্তুত, স্যালাইন-বিতর্কে শনিবার বাম ছাত্র-যুবদের বিক্ষোভ হয় মেদিনীপুরে। সেখান থেকে বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অস্থায়ী সম্পাদক বিজয় পালকেও গ্রেফতার করা হয়। এ দিকে রবিবার থেকে সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলন রয়েছে খড়্গপুরে। তবে সম্পাদক জেলে থাকলে কী ভাবে সম্মেলন হবে, তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়। এই অবস্থায় আইনি প্রক্রিয়ায় বন্ডে জামিন নিয়ে ছা়ড়ানো হয় বিজয়কে। রবিবার সিপিএমের জেলা সম্মেলন শুরু হচ্ছে খড়্গপুরে।

এক দিকে যখন সাংগঠনিক কর্মসূচি চলছে, তখন স্যালাইন-বিতর্কে আন্দোলন জোরদার করতে চাইছে বামেরা। সেই কারণে উত্তরবঙ্গ থেকে টেনে আনা হয়েছে মিনাক্ষীকে। শনিবার থেকে দক্ষিণ দিনাজপুরে সিপিএমের জেলা সম্মেলন শুরু হয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের ওই কর্মসূচির দায়িত্বে ছিলেন মিনাক্ষী। হরিরামপুরে সিপিএমের প্রকাশ্য সমাবেশে বক্তাও ছিলেন তিনি। কিন্তু স্যালাইনকাণ্ডে আঁচ বাড়ছে দেখেই মিনাক্ষীকে নির্দেশ দেওয়া হয় রাতের ট্রেন ধরে কলকাতায় ফিরে আসার জন্য। কলকাতায় নেমেই মিনাক্ষী সোজা চলে যান মেদিনীপুরের আন্দোলনে।

এসএফআই রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে’র রবিবার নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল ঝাড়গ্রাম জেলায়। সিপিএম নেতৃত্ব তাঁকে পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, ঝাড়গ্রামে যেতে হবে না। পরিবর্তে পশ্চিম মেদিনীপুরে যেতে বলা হয় তাঁকে। দেবাঞ্জন সেখানে পৌঁছেও গিয়েছেন। পাশাপাশি খড়্গপুরের জেলা সম্মেলনের একটি বড় অংশের নেতৃত্ব সেখানে রয়েছেন।

সিপিএমের মধ্যে একটি আত্মসমালোচনা ছিল, দলে কমিটির কোনও নেতৃত্ব নির্বাচনের সম্মেলন হলে, তখন আর আন্দোলনের কথা মাথায় থাকে না। সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, দলের এ বিষয়ে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে যে দুর্নাম ছিল, রবিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘটনার মাধ্যমে তা ঘুচিয়ে দেওয়া গিয়েছে। ঘটনাচক্রে, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম খড়্গপুরে জেলা সম্মেলনে রয়েছেন। সূত্রের খবর, তিনিই সেখান থেকে সবটা নির্দেশ দিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, “আমি মাল্টিটাস্কিংয়ে বিশ্বাস করি। সংগঠনের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার কাজও করতে হবে। আন্দোলনও করতে হবে। কোনও কিছুর জন্য কোনও কিছুকে ফেলে রাখা যাবে না। একসঙ্গে করতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি সেই পথে এগোতে।”

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে সম্প্রতি প্রসূতিদের নিম্নমানের স্যালাইন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নির্দিষ্ট একটি সংস্থার ‘রিঙ্গার ল্যাকটেট’ স্যালাইনের উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধের নির্দেশ আগেই দিয়েছিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। তার পরেও কেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতিদের সেই সংস্থার স্যালাইন দেওয়া হল, তা নিয়ে জোরালো প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তার খোঁজেই শনিবার হাসপাতালে গেল স্বাস্থ্য দফতর গঠিত ১৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি। পাঁচ প্রসূতিকে ওই সংস্থার স্যালাইনই দেওয়া হয়েছিল কি না, সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট সংগ্রহ করেছে তারা। গোটা বিতর্কের আবহে ওই সংস্থার স্যালাইনকে কালো তালিকাভুক্তও করেছে স্বাস্থ্য দফতর। তবে বিতর্ক কমেনি।

শুধু ডিওয়াইএফআই নয়, রবিবার মেদিনীপুর শহরে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি শিবিরও। রাস্তার উপর টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানান বিজেপি কর্মীরা। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছিল একটি কুশপুতুলও। পরে সাদা পোশাকে থাকা পুলিশকর্মীরা সেই কুশপুতুল সরানোর চেষ্টা করেন। তাতে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের। মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিতে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিজেপি কর্মীরা। প্রতিবাদ কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিলেন বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি শঙ্কর গুছাইত, যুব মোর্চার জেলা সভাপতি আশীর্বাদ ভৌমিক-সহ অন্যেরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Midnapore Medical College Midnapore Medical College and Hospital Minakshi Mukherjee DYFI CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy