Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Dhupguri

West Bengal Lockdown: পথকুকুরের খাবার অভুক্ত পরিযায়ী শ্রমিকের পাতে, ‘অমানবিক’ বলে সমালোচনায় ধূপগুড়ি

শহরবাসীদের একাংশ ‘অমানবিক’ বলে ছিছিক্কার করলেও অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দাবি, ওই শ্রমিকের খিদে মেটাতেই তাঁকে খাবার দেওয়া হয়েছিল।

ধূপগুড়ির এই ছবির ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

ধূপগুড়ির এই ছবির ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ধূপগুড়ি শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২১ ১৪:০২
Share: Save:

রাস্তার ধারে কংক্রিটের ছাউনির নীচে বসে ভিন্ রাজ্যের এক পরিযায়ী শ্রমিক। হাতে খবরের কাগজের পাতা মুড়িয়ে ধরা। তাতে রান্না করা খাবার হাতা দিয়ে ঢেলে দিচ্ছেন এক ব্যক্তি। লকডাউনের সময় অসহায় মানুষের মুখে খাবার তুলে দিয়ে বহু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনই মানবিকতার উদাহরণ দিচ্ছেন। তবে মঙ্গলবার ধূপগুড়ির এই ছবির ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

অভিযোগ, পথকুকুরদের জন্য তৈরি খাবার খেতে দেওয়া হয়েছে ওই পরিযায়ী শ্রমিককে। এ নিয়ে শহরবাসীদের একাংশ একে ‘অমানবিক’ বলে ছিছিক্কার করলেও অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দাবি, ওই শ্রমিকের খিদে মেটাতেই তাঁকে খাবার দেওয়া হয়েছিল। পথকুকুরদের জন্য হলেও তা টাটকা খাবার। গোটা ঘটনায় গত বছর লকডাউনের সময় উত্তরপ্রদেশে আসা পরিযায়ীদের উপর জীবাণুনাশক স্প্রে করার দৃশ্য মনে পড়িয়ে দিচ্ছে।

অতিমারি পরিস্থিতিতে সরকারি-বেসরকারি বহু সংগঠনই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। কোভিড আক্রান্তদের জন্য বিনামূল্যে ওষুধপত্র বা অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা, তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে মানুষজনের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো খাবারও তুলে দিচ্ছে। তবে মঙ্গলবারের ওই ভিডিয়ো ঘিরে আপাতত বিতর্ক চরমে ধূপগুড়িতে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, শহরের পরিস্থিতি কি এতটাই খারাপ যে কুকুরের খাবার মানুষকে খেতে দেওয়া হচ্ছে? গত বছর লকডাউনে বহু মানুষের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা তথা সমাজসেবী অসীম পাল। চলতি বছরেও সে কাজে খামতি নেই তাঁর। গোটা ঘটনায় সরব হয়ে অসীম বলেন, ‘‘এটা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ধূপগুড়ি শহরের পরিস্থিতি এতটাও খারাপ হয়নি যে, পশুদের খাবার মানুষকে খেতে হবে। শহরে বহু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিনামূল্যে মানুষের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে।’’

সমালোচনার মুখে পড়ে আত্মপক্ষ সমর্থনে নেমেছে ওই পরিবেশপ্রেমী সংগঠন। সংগঠনের এক সদস্য বলেন, ‘‘কুকুরের জন্য খাবার নিয়ে এসেছিলাম। তবে লকডাউনের সময় না ক্ষুধার্ত লোকজন খেতে চাইছিল (কুত্তে কে লিয়ে লায়ে থে। লেকিন লোগ মাঙ রহে। লকডাউনকে টাইম লোগ ভুখে থে)।’’

গোটা ঘটনাকে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বলে মনে করছেন ধূপগুড়ির বাসিন্দা তথা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্ণধার অনিরুদ্ধ দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘এটা খুব দুর্ভাগ্যের। যাঁরা এ কাজ করেছেন, তাঁরা হয়তো অজান্তেই করে ফেলেছেন। তবে এতে ধূপগুড়ির বদনাম হয়ে গেল। ওই অভুক্ত শ্রমিকের জন্য অন্য খাবারের ব্যবস্থা করা উচিত ছিল। কারণ, ওটা কুকুরের খাবার। এটা মানুষের পাশাপাশি প্রশাসনকেও অপমান করা। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’’

বিতর্ক সত্ত্বেও তা মানতে নারাজ ওই পরিবেশপ্রেমী সংগঠন। তাদের দাবি, ‘‘পশুদের একদম টাটকা খাবার দেওয়া হয়। তাদের খাওয়ানোর আগে আমরা নিজেরা তা চেখে দেখি। তা ছাড়া, মনে হয় না কারও বাড়িতেই পশুদের জন্য আলাদা করে রান্না করা হয়। লকডাউনের সময় সব দোকান বন্ধ। ওই পরিযায়ী অভুক্ত ছিলেন। তাই বাধ্য হয়েই তাঁকে কুকুরের খাবার দেওয়া হয়েছিল।’’

প্রশাসনের একাংশ একে প্রচারের জন্য তৈরি করা বিতর্ক বলে দাবি করছে। ধূপগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান রাজেশ কুমার সিংহ বলেন, ‘‘প্রশাসন, বিডিও অফিস-সহ বহু সংগঠন অসহায় মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। পথকুকুরের খাবার না দিয়ে ওই শ্রমিককে বাড়ি থেকে রান্না করা বা কেনা খাবার খাওয়ানো উচিত ছিল। নিজেদের প্রচারে আনার জন্য এমনটা করা হয়েছে। ধূপগুড়ি থানাকে ঘটনার তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করব। যে বা যারা এমন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ধূপগুড়ি শহরবাসী তথা পুরসভা ও প্রশাসনকে হেয় করার জন্য চক্রান্ত করা হচ্ছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy