তদন্তে সিবিআই কর্তারা। —নিজস্ব চিত্র।
মঙ্গলবার ঝাড়গ্রামে এমপিএস-এর কৃষিখামার ও বাণিজ্যিক ভবনে হানা দিল সিবিআই। সেখানে দিনভর (সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত টানা আট ঘন্টা) তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করেন সিবিআই অফিসারেরা। সংস্থার আধিকারিক ও কর্মীদের দফায় দফায় জেরা করা হয়। এমপিএস সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগে দু’বার সেবি-র অফিসারেরা এই কৃষিখামারে ও বাণিজ্যিক ভবনে তল্লাশি চালিয়ে গিয়েছেন। তবে সিবিআই এ দিন এখানে প্রথম বার তল্লাশি চালাতে এল।
ঝাড়গ্রাম শহরের উপকন্ঠে বিনপুর থানার দহিজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের দিঘিশোল মৌজায় চারশো একর জায়গা জুড়ে রয়েছে এমপিএস-এর বহুমুখি কৃষিখামার ও বাণিজ্যিক ভবন। এ দিন সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ সিবিআইয়ের ইন্সপেক্টর সৌরভ ঘোষের নেতৃত্বে ৬ জনের একটি দল আচমকা সেখানে হানা দেন। সেখানে তখন ছিলেন এমপিএস-এর ডিরেক্টর অশোককুমার মণ্ডল, এমপিএস-এর দিঘিশোলের প্রকল্পটির জেনারেল ম্যানেজার (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) তপন নাথ, সংস্থার সঞ্চয় প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার তপন দাস, মুখ্য কোষাধ্যক্ষ শঙ্করপ্রসাদ মণি। সংস্থার ওই চার কর্তা ও কর্মীর উপস্থিতিতে বাণিজ্যিক ভবনে নানা ফাইল ও নথিপত্র খতিয়ে দেখেন সিবিআই অফিসারেরা। ওই চার জন-সহ সংস্থার কয়েকজন কর্মীকে জেরা করা হয়। সকাল সাড়ে আটটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত টানা আট ঘন্টা সিবিআইয়ের দলটি সেখানে জেরা ও তল্লাশি চালায়। বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করে সিবিআই। সিবিআইয়ের তদন্তকারী দলটি কৃষিখামার ও সংস্থার বিলাসবহুল রিসোর্টটিও ঘুরে দেখেন। ফিরে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিবিআইয়ের ইন্সপেক্টর সৌরভ ঘোষ বলেন, “কোনও মন্তব্য করার এক্তিয়ার আমাদের নেই। তবে কাউকে গ্রেফতার করা হয় নি। এর বেশি কিছু জানাতে পারব না।”
এমপিএস-এর ডিরেক্টর অশোককুমার মণ্ডল বলেন, “আমরা সিবিআই অফিসারদের তদন্তে সহযোগিতা করেছি। ওরা যা-যা জানতে চেয়েছেন এবং যে সব নথিপত্র চেয়েছেন তা সরবরাহ করা হয়েছে। আমরা ওদের সন্তুষ্ট করেছি। যা যা দরকার মনে হয়েছে, অফিসারেরা তা বাজেয়াপ্ত করেছেন।” সিবিআই এ দিন কী কী বাজেয়াপ্ত করেছে, তা অবশ্য জানাতে চান নি অশোকবাবু। তিনি জানান, বর্তমানে এই কৃষি খামারে ৫৭ জন স্থায়ী কর্মী ও ৬০ জন অস্থায়ী কর্মী রয়েছেন। কিছু উৎপাদন হচ্ছে। রিসোর্টটি খোলা রয়েছে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ বিভাগটিও চালু রয়েছে। তবে মিনারেল ওয়াটার প্রকল্পটি বন্ধ রয়েছে।
১৯৯৩ সালে কৃষি খামারটির কাজ শুরু হয়। ক্রমে বিশাল ওই এলাকায় ছাগল, গরু, মুরগি, শুয়োর পালন, মাছ চাষ এবং জৈবসার ব্যবহার করে বিভিন্ন শাক সব্জি ও ফলের বিশাল বাগান গড়ে তোলা হয়। মিনারেল ওয়াটার তৈরিরও প্ল্যান্ট ছিল। এমপিএস-এর ওই খামারের ভিতরেই রয়েছে বিশাল বিলাস বহুল রিসোর্ট, একাধিক রেস্টুরেন্ট ও আমোদ প্রমোদ ও মনোরঞ্জনের এলাহী আয়োজন। এমপিএস-এর খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ বিভাগও রয়েছে এখানে। অভিযোগ, ওই কর্মকাণ্ড দেখিয়েই বাজার থেকে টাকা তুলত এমপিএস। এ ছাড়া মেহগনি গাছ লাগিয়ে সেই গাছে বিনিয়োগ করানো হত। অর্থাৎ গাছটি বড় হয়ে বিক্রি হলে বিনিয়োগকারী লভ্যাংশ পাবেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে একটি গাছ পিছু কয়েকশো জনকে বিনিয়োগ করানোর অভিযোগও উঠেছিল এমপিএস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
বস্তুতপক্ষে, এই কৃষি খামারটিকে দেখিয়ে বাজার থেকে সংস্থাটি কীভাবে কার কার কাছ থেকে কী পরিমাণ টাকা তুলেছে তা এদিন সংস্থার আধিকারিক ও কর্মীদের কাছ থেকে জানতে চান সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy