লোকসভা ভোটকে পাখির চোখ করে ‘একলা চলা’র সিদ্ধান্ত নিল ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)। আদিবাসী সংরক্ষিত ঝাড়গ্রাম আসনে প্রার্থী দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলের নেত্রী চুনিবালা হাঁসদা। রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে চুনিবালা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেই মনে করছে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল। রাজনৈতিক মহলেরও বক্তব্য, লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে জঙ্গলমহলে নিজের ঘর গুছোতে চান এই ঝাড়খণ্ডী নেত্রী। তাই আঞ্চলিক ঝাড়খণ্ডী দলগুলির সঙ্গে এ বার সরাসরি জোটে যাচ্ছেন না তিনি।
২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে চুনিবালা নিজেই ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-র প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়েছিলেন। সে বার ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা-সহ একাধিক আঞ্চলিক দল চুনিবালাকে সমর্থন করেছিল। গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনেও আঞ্চলিক ও ঝাড়খণ্ডী দলগুলির সঙ্গে জোটে গিয়েছিলেন চুনিবালা। ক’য়েক দিন আগে জোটের অন্যতম শরিক ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টি ঝাড়গ্রাম আসনে তাদের দলীয় প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। এরপরই বুধবার ঝাড়গ্রামে ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর এক দলীয় বৈঠকে ঝাড়গ্রাম আসনে একক ভাবে প্রার্থী দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চুনিবালা বলেন, “ঝাড়গ্রাম আসনে আমরা একক ভাবে দলীয় প্রার্থী দেব। এ ব্যাপারে দলীয়স্তরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা সরাসরি কোনও জোটে যাব না। তবে সকলের কাছে সহযোগিতা চাইব।”
এক সময় জঙ্গলমহলের আঞ্চলিক রাজনীতিতে ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-কে সিপিএমের প্রধান প্রতিপক্ষ মনে করা হতো। পঞ্চায়েত স্তরের রাজনীতিতে ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর ভালই প্রভাব ছিল। চুনিবালাদেবীর স্বামী প্রয়াত নরেন হাঁসদা এক সময় বিনপুরের বিধায়ক ছিলেন। চুনিবালাও বিনপুরের প্রাক্তন বিধায়ক। গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে পর্যন্ত জঙ্গলমহলের একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতায় ছিলেন চুনিবালার দলের সদস্যরা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তৃণমূল ঝড়ে চুনিবালার দলকে অনেক ঝাপটা সহ্য করতে হয়েছে। গত তিন বছরে চুনিবালার দলের বেশ কিছু লোকজনকে ভাঙিয়ে নিয়েছে তৃণমূল। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, দলের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদেই রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে একলা চলার কথা বলে লোকসভা ভোটের ময়দানকে বেছে নিয়েছেন চুনিবালা।
জেতা অসম্ভব জেনেও কেন ফের লোকসভা ভোটে দলীয় প্রার্থী দাঁড় করাচ্ছেন? চুনিবালার স্পষ্ট জবাব, “রাজ্যে সিপিএমের পরে এখন তৃণমূলের এক দলীয় শাসন চলছে। উন্নয়নের গল্প ফেঁদে আদিবাসী-মূলবাসীদের ঠকানো হচ্ছে। বড় দলগুলি কেউই বনবাসী মানুষের কথা ভাবে না। আমরা মানুষের কথা বলতে চাই। জেতা-হারাটা আমাদের লক্ষ্য নয়।”
১৯৯৯ সালে দলের প্রতিষ্ঠাতা তথা বিনপুরের বিধায়ক নরেন হাঁসদার মৃত্যুর পরে দলের সভানেত্রী হন নরেন-পত্নী চুনিবালা। ২০০০ সালে বিনপুর বিধানসভার উপনির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হন চুনিবালা। ওই বছরেই আদিত্য কিস্কুর নেতৃত্বে চুনিবালার দল ভেঙে একটি অংশ বেরিয়ে গিয়ে পরে ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টি গঠন করে। ২০০১ সালের বিধানসভা উপ নির্বাচনে বিনপুর আসনে সিপিএমের কাছে পরাজিত হন চুনিবালা। কিন্তু ফের ২০০৬ সালের বিধানসভা ভোটে জিতে তিনি দ্বিতীয় বার বিনপুরের বিধায়ক হন। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে বিনপুর আসনে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের সমর্থনে প্রার্থী হন চুনিবালা। কিন্তু তৃণমূলের একাংশের অন্তর্ঘাতের জেরে তাঁকে হারতে হয় বলে অভিযোগ।
গত বিধানসভা ভোটে পরিবর্তন ঝড়ে লালঘাঁটি জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম, গোপীবল্লভপুর ও নয়াগ্রাম এই তিনটি আসন তৃণমূল দখল করে নেয়। কিন্তু বিনপুর আসনে সিপিএম জয়ী হয়। সিঁদুরে মেঘ দেখে চুনিবালাও গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের আগে ঝাড়খণ্ডী ও আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে সমঝোতা করেন। যদিও শেষ পর্যন্ত চুনিবালার ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) এবং আদিত্য কিস্কুর নেতৃত্বাধীন ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টি উভয়ের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ করেছিল।
তৃণমূল অবশ্য আঞ্চলিক দলগুলির প্রার্থী দেওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চাইছে না। জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ বলেন, “সিপিএমের পায়ের তলায় মাটি নেই। তাই ভোট ভাগ করার জন্য ওরা আঞ্চলিক দলগুলিকে দাঁড় করাচ্ছে। এতে কোনও লাভ হবে না। ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে আমাদের দলীয় প্রার্থী উমা সরেন বিপুল ভোটে জয়ী হবেন।” চুনিবালার পাল্টা জবাব, “পরিবর্তনের পথে ফের পরিবর্তন আসবে। আমরা আশাবাদী।”
তবে ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর প্রার্থী এবারও কী চুনিবালা হবেন? মুচকি হেসে চুনিবালা বলছেন, “আর কয়েক’টা দিন অপেক্ষা করুন। প্রার্থীর নাম ঘোষণা করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy