Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

মানসের জামানত জব্দ করার ডাক

কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়ার খাসতালুকে দাঁড়িয়েই তাঁর জামানত জব্দ করার ডাক দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার সবংয়ে তেমাথানির জনসভায় মমতা বলেন, “এই মাটিতেই মানস ভুঁইয়ার জামানত জব্দ করুন। মানস ভুঁইয়াকে ধরে এখানে ঢুকিয়ে দিন।” ঘাটালে দেব পাঁচ লক্ষ ভোটে জিতবেন দাবি করে তাঁর কটাক্ষ, “যতই কোটি কোটি টাকা খরচ করুন মানসবাবু, গ্যাস বেলুনটা ফেটে যাবে।”

কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়ার নির্বাচনী প্রচার। বুধবার দাসপুরে।—নিজস্ব চিত্র।

কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়ার নির্বাচনী প্রচার। বুধবার দাসপুরে।—নিজস্ব চিত্র।

সুমন ঘোষ
সবং শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:০৬
Share: Save:

কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়ার খাসতালুকে দাঁড়িয়েই তাঁর জামানত জব্দ করার ডাক দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বুধবার সবংয়ে তেমাথানির জনসভায় মমতা বলেন, “এই মাটিতেই মানস ভুঁইয়ার জামানত জব্দ করুন। মানস ভুঁইয়াকে ধরে এখানে ঢুকিয়ে দিন।” ঘাটালে দেব পাঁচ লক্ষ ভোটে জিতবেন দাবি করে তাঁর কটাক্ষ, “যতই কোটি কোটি টাকা খরচ করুন মানসবাবু, গ্যাস বেলুনটা ফেটে যাবে।”

এ দিন পশ্চিম মেদিনীপুরে তিনটি জনসভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমটি বেলদায়, মেদিনীপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সন্ধ্যা রায়ের সমর্থনে। বাকি দু’টি দেবের সমর্থনে সবং এবং ঘাটালে। সবংয়ে মমতা বলেন, “সন্তোষ রাণা এক বার মানস ভুঁইয়ার সঙ্গে মিটিং করছে, আর মানস ভুঁইয়া সন্তোষ রাণার সঙ্গে মিটিং করছে। যারা বড়-বড় কথা বলে আর ওসি বদলি করে নির্বাচনে জিততে পারবে মনে করছে, তাদের থোঁতা মুখ ভোঁতা করে দেবেন।” ২০০৯ সালের জুলাইয়ে বর্ধমানে মঙ্গলকোটের ধান্যরুখী গ্রামে সিপিএমের লোকজনের তাড়া খেয়ে মানসবাবুর পালিয়ে আসার প্রসঙ্গও তোলেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর কটাক্ষ, “এখন খুব ভাব হয়েছে। কোথায় ছিল যখন মঙ্গলকোটে কাপড় তুলে দৌড়তে হয়েছিল আর ‘বুদ্ধবাবু বাঁচাও, বুদ্ধবাবু বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছিলেন।”

কংগ্রেস-তৃণমূল জোট ভাঙার আগে রাজ্যের সেচমন্ত্রী ছিলেন সবংয়ের কংগ্রেস বিধায়ক মানসবাবু। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য শুনে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “উনি আমার সম্পর্কে যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, আমি তার পাল্টা মুখ খুললে রাজনৈতিক দূষণ হবে। মনে হচ্ছে, উনি নার্ভাস হয়ে পড়েছেন। ওঁর বিশ্রাম প্রয়োজন।” মঙ্গলকোটের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সে দিন যে সিপিএমের লোকেরাই ওই পরিস্থিতি তৈরি করেছিল, তা জানাতে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেছিলাম। কিন্তু তৃণমূল নেত্রী ওই ঘটনার কথা যে ভাবে বলে বেড়াচ্ছেন, তাতে মনে হচ্ছে, ওই দিন আমাদের সকলের লাশ পড়ে গেলে উনি খুশি হতেন।”

বামপ্রার্থীর সঙ্গে বৈঠকের অভিযোগও নস্যাৎ করে দিয়েছেন মানসবাবু। উল্টে তিনি বলেন, “ওঁদের প্রার্থীই (দেব) তো সন্তোষ রাণার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন।” এ প্রসঙ্গে সন্তোষবাবুর বক্তব্য, “আমরা সকলের সঙ্গে সৌজন্য বজায় রেখে চলি। সেটাই চলা উচিত। তবে মানসবাবুর সঙ্গে দেখা খুব কমই হয়। বৈঠকের তো প্রশ্নই নেই।”

তেমাথানি মাঠের সভায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রায় ১৭ মিনিটের বক্তৃতার বেশির ভাগটাই জুড়ে ছিল বিধায়কের সমালোচনা। ডেবরা-সবং রাস্তা সংস্কার এবং কেলেঘাই-কপালেশ্বরী প্রকল্পের কাজ শুরুর ক্ষেত্রে মানসবাবুর কৃতিত্ব নস্যাৎ করে মমতা বলেন, “যিনি বলে বেড়াচ্ছেন টাকা এনে দিয়েছেন, এটা তাঁর জমিদারির টাকা নয়। রাজ্য সরকারই রাস্তা সংস্কার করেছে। কেলেঘাই-কপালেশ্বরী সংস্কারেও প্রায় ৭০০ কোটি টাকা দিয়েছে। সেই কাজ চলছে।” এ প্রসঙ্গে মানসবাবু বলেন, “১৯৮২ সাল থেকে আমি কেলেঘাই-কপালেশ্বরী প্রকল্পের জন্য লড়াই করছি। তখন তো উনি (মমতা) সাংসদও ছিলেন না। এই প্রকল্পের প্রাথমিক কাজও শুরু হয়েছিল বামফ্রন্টের আমলে। ওঁর স্মৃতিশক্তি যে এত দুর্বল, তা জানা ছিল না।”

ঘাটাল কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূল সন্ত্রাস চালাচ্ছে বলে সম্প্রতি সরব হয়েছিলেন মানসবাবু। তার পরেই নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে কেশপুর এবং পিংলার ওসি-কে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই প্রসঙ্গে মমতার তোপ, “বারো ভুঁইয়ার এক ভুঁইয়া, এতই মানুষের ভালবাসা থাকে, জিততে পারো, তা হলে ওসি, আইসি, বিডিও, ডিএম, এসপি-র বিরুদ্ধে নালিশ করছ কেন?” ব্যক্তি-আক্রমণও বাদ যায়নি। মানসবাবুর ছেলে বিদেশে থাকেন। সরাসরি সে কথা না তুলেও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দেশের লোক বিদেশে ঘর তৈরি করছে। আর কিছু বলছি না। নিজেদের ছেলেমেয়েরা কোথায় পড়ে জিজ্ঞেস করুন তো? কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, লন্ডন। এত খরচ আসে কোত্থেকে?” এ প্রসঙ্গে মানসবাবুর জবাব, “আমার ছেলে বিদেশে ডাক্তারি পড়াচ্ছে। ও নিজের যোগ্যতায় ওখানে গিয়েছে।”

দেব অবশ্য ব্যক্তি-আক্রমণে যাননি। তিনি বলেন, “অনেকে বলছেন, দেব কি জেতার পর আদৌ আসবে? আমি কথা দিচ্ছি, আগের সাংসদ যত বার এসেছেন, আমি তার চেয়ে বেশি বার আসব। আগে যে কাজ হয়েছে, তার চেয়ে বেশি কাজ, অনেক ভাল কাজ করার চেষ্টা করব।”

অন্য বিষয়গুলি:

suman ghosh sabang manas bhunia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy