এক দিকে, মাওবাদী প্রভাবিত জঙ্গলমহল। অন্য দিকে, কেশপুর-গড়বেতা-সবংয়ের মতো রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রবণ এলাকা। লোকসভা নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে তাই আধা সামরিক বাহিনী চেয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ২৫০ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী চাওয়া হয়েছিল। তবে আশ্বাস মিলেছে ২০০ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী পাওয়ার। জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারি বলেন, “প্রয়োজনীয় আধাসামরিক বাহিনী দেবে বলে কমিশন জানিয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করা।” জেলা পুলিশ সুপার শিসরাম ঝাঁঝোরিয়ারও বক্তব্য, “হামলার আশঙ্কা থাকবেই। আমরাও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে সব প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
প্রাক্-নির্বাচন পর্বে জেলায় এখনও বড় কোনও অশান্তি হয়নি। তবে কেশপুরে মাঝেমধ্যেই বাড়ি ভাঙচুর, মারামারি, পতাকা খুলে ফেলার মতো ঘটনা ঘটেছে। কিছু জায়গা থেকে হুমকি, ভয় দেখানোরও অভিযোগ আসছে। জেলায় প্রথম দফার নির্বাচন ৭ মে। ইতিমধ্যে মনোনয়ন শুরু হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় বাহিনী এখনও আসেনি। পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী এলেই রুট মার্চ শুরু হয়ে যাবে। থাকবে পুলিশি টহলও। কোনও এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পেলেই জোরকদমে তল্লাশি চালানো হবে। কেশপুর, গড়বেতা, চন্দ্রকোনা, সবং, পিংলা, ডেবরা-সহ যে সব এলাকা বেশি উত্তেজনাপ্রবণ, সেখানেই বেশি আধা সেনা পাঠানো হবে বলে খবর।
কিষেনজির মৃত্যুর পর থেকে গত আড়াই বছরে জঙ্গলমহলে মাওবাদী সক্রিয়তা থিতিয়েছে। কোনও নাশকতার ঘটনাও ঘটেনি। প্রশাসন সূত্রের অবশ্য ব্যাখ্যা, এর মানে এই নয় যে জঙ্গলমহল পুরোপুরি মাওবাদী শূন্য। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, জেলায় এখনও দু’টি স্কোয়াড রীতিমতো সক্রিয়। একটি বিকাশের, অন্যটি মদন মাহাতোর। বিকাশের স্কোয়াড লালগড় ও গোয়ালতোড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর মদনের স্কোয়াড কাজ করছে বেলপাহাড়িতে। ঝাড়খণ্ড সীমানা দিয়েও মাওবাদীরা যাতায়াত করছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। কিন্তু তারা এ রাজ্যে থাকছে না। বৈঠক করেই চলে যাচ্ছে। একটি ডেরায় বেশিক্ষণ থাকছেও না। দ্রুত জায়গা বদল করায় পুলিশও তাদের নাগাল পাচ্ছে না। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জঙ্গলমহলে মাওবাদীরা এখন জনবিচ্ছিন্ন। তাই হামলা চালানোর সাহস পাচ্ছে না। তবে পুলিশের আশঙ্কা, ছোটখাট ঘটনা না ঘটিয়ে বড়সড় হামলার ছক কষছে মাওবাদীরা। এক পুলিশ কর্তার কথায়, “ছোটখাট ঘটনা ঘটলেও পুলিশের নজর সে দিকেই থাকবে। তাই সে রকম কিছু করে ওরা ভুল করতে চাইছে না। যদি করে তো বড় কিছুই করবে। এটাই আমাদের বড় দুশ্চিন্তা।”
মাওবাদী মোকাবিলায় এমনিতেই জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর একাধিক ক্যাম্প রয়েছে। জওয়ানেরা নিয়মিত তল্লাশি অভিযান চালান। কিন্তু দীর্ঘদিন মাওবাদী হামলা না হওয়ায় সেই প্রক্রিয়ায় কিছুটা শিথিলতা এসেছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। ভোটের মুখে অবশ্য কোনও রকম ঝুঁকি নিতে নারাজ প্রশাসন। তাই পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়া হয়েছে। যাতে রাস্তা-জঙ্গল-বুথ সব কিছুই জায়গাতেই কড়া নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা যায়। নির্বিঘ্নে মেটানো যায় লোকসভা ভোট-পর্ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy