বাড়িতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মৃতার বইপত্র, স্কুলব্যাগ। ছবি: সোহম গুহ
যে দু’টো মেয়ে একসঙ্গে পড়তে আসত, তাদের একজন অন্য জনকে খুন করিয়েছে! এখনও এটা বিশ্বাসই করতে পারছেন না পটাশপুর থানার কোটবাড়ের কিশোরীদের স্কুলের বাংলার শিক্ষক। তাঁদের স্কুলের ষোলো বছরের এক ছাত্রী প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠে সহপাঠিনীর সঙ্গে এমন কাণ্ড করতে পারে, তা মানতে পারছেন না স্কুলের কেউই।
মঙ্গলবার খড়াই বাজারে একটি মিষ্টি দোকানে বসে স্কুলের বাংলার শিক্ষক জানান, ওই দুই কিশোরীর মধ্যে সম্পর্ক ছিল ভাল। স্কুলে কারোরই আচরণ খারাপ ছিল না। পঞ্চম শ্রেণি থেকে ওই দুই কিশোরী স্থানীয় স্কুলে পড়ত। কেউ কখনও তাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ জানায়নি। একই মত, ওই দুই কিশোরীর গৃহশিক্ষকেরও। তিনিও ঘটনাটা এখনও বিশ্বাস করে উঠতে পারছেন না। তাঁর কথায়, “ওরা আমার কাছে নবম শ্রেণি থেকে পড়ত। আমি যতদূর বুঝতাম, ওদের সম্পর্ক খুবই ভাল। কয়েক মাস ধরে অবশ্য অভিযুক্ত কিশোরী পড়তে আসছিল না। সেই থেকে আর ওর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই।” তবে তাঁর সংযোজন, “দু’জনেই খুব ভাল বন্ধু ছিল। এমন পরিণতি ঘটবে স্বপ্নেও ভাবিনি।”
দশম শ্রেণির ওই দুই কিশোরীর এক বান্ধবী জানিয়েছে, ওই কিশোরীদের স্কুলে বিভাগ আলাদা ছিল। তা সত্ত্বেও ওই দু’জনের বন্ধুত্ব ছিল অটুট। তবে এই ছাত্রীটির কথায়, “কয়েক মাস ধরেই অভিযুক্ত মেয়েটির চালচলন বদলে গিয়েছিল। বাড়ি থেকে স্কুলে এলেও ক্লাস করত না। উল্টে রফিজুলের মোটরবাইকে চেপে ঘুরে বেড়াত। আবার স্কুলের সময় পার হলে বাড়ি ফিরে যেত।” স্কুলের পরিচালন সমিতির সদস্য ও পঁচেট গ্রামপঞ্চায়েতের উপপ্রধান দুর্গাপদ পাহাড়ি জানান, “স্কুলে দুজনেই ভাল স্বভাবের ছাত্রী হিসেবে পরিচিত ছিল। এমন ঘটনা ঘটবে আমরা আশা করিনি।”
পঁচেট গ্রামপঞ্চায়েতের প্রাক্তন সিপিএম প্রধান ও বতর্মান সদস্য নজিবুর মল্লিক জানান, শনিবার ভোর রাতে নিহত ছাত্রীর খোঁজে যখন তার পরিবারের সদস্যরা গিয়েছিলেন, সেই সময় তাঁদের সঙ্গে গিয়েছিল অভিযুক্ত ছাত্রীটিও। সেই গিয়ে নিহত ছাত্রীটিকে সনাক্তও করেছিল। ধৃত ছাত্রী জেরায় পুলিশকে জানিয়েছে, তার সঙ্গে সহপাঠিনীর দাদার শারিরীক সম্পর্ক হওয়ার পরও ওই যুবক তার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে দেয়। তারই প্রতিহিংসা নিতে ধৃত ওই তরুণী তার বর্তমান প্রেমিক রফিজুলকে ব্যবহার করে। তবে ছেলের সঙ্গে ওই কিশোরীর সম্পর্কের কথা মানতে চাননি নিহত কিশোরীর বাবা। গোটা ঘটনায় স্তম্ভিত পটাশপুরের বিধায়ক ও রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী জ্যোতির্ময় কর। প্রাক্তন অধ্যাপক জ্যোতির্ময়বাবু বলেন, “নাবালক পড়ুয়াদের মধ্যে বতর্মানে একটা অসহিষ্ণুতা কাজ করছে। আর তার জন্য তারা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে নৃশংস ঘটনা ঘটাতেও পিছ পা হচ্ছে না। কোটবাড়ের ঘটনা তারই প্রমাণ।”
যে বছর ষোলোর মেয়েটা এত হাসিখুশি ছিল, বন্ধুর সঙ্গে একসঙ্গে খেলা করত, সেই মেয়ের এত আক্রোশের কথা জানতে পেরে অবাক গ্রামের বাসিন্দারাও। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ছোট থেকেই ওই দুই কিশোরী অভিন্ন হৃদয় বন্ধু ছিল। একসঙ্গেই স্থানীয় একটি স্কুলে যেত তারা। দুই কিশোরীর সঙ্গে এলাকার বাসিন্দাদের সম্পর্কও ছিল ভাল। নিহত কিশোরীর পরিবারের পাশে থাকার পাশাপাশি অভিযুক্ত কিশোরীর হাসি মুখটাও কিছুতেই যেন ভুলতে পারছেন না তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy