দাঁতন-২ ব্লকের নয়নজোড়ায় সন্ধ্যা রায়ের সমর্থনে মুকুল রায়ের সভা। —নিজস্ব চিত্র।
সারদা-কাণ্ডে ফের কংগ্রেস ও সিপিএমকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাল তৃণমূল। সোমবার মেদিনীপুর লোকসভার অন্তর্গত ইলাহিগঞ্জে দলীয় প্রার্থী সন্ধ্যা রায়ের সমর্থনে জনসভা করতে এসেছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, “হঠাৎ ভোটের সময় সারদা হইচই শুরু করা হল। সারদার টাকা নিয়ে তৃণমূল নেতাদের কাছে রয়েছে। রাজ্যে ৯১টা চিটফাণ্ড চলে। কোনওটা আমাদের সরকারের আমলে তৈরি হয়নি। কারা তা করার অনুমতি দিয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকার। এখন রাহুল গাঁধী এ নিয়ে বড় বড় কথা বলছেন। কেন্দ্রীয় অথর্মন্ত্রীর স্ত্রীর কাছে ইডি যাচ্ছে না কেন? বুদ্ধদেববাবুকে ডাকছেন না কেন? অসীম দাশগুপ্তের আপ্তসহায়ক কোত্থেকে টাকা এনেছিল। বুদ্ধদেববাবু, বিমানবাবুরা কী জানেন না?”
তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষকে ইডি ডেকে পাঠানোয় বেজায় চটেছেন মুকুলবাবু। তাঁর কথায়, “অর্পিতাকে চিঠি পাঠানো হচ্ছে, আজ মুকুল রায়কে চিঠি পাঠানো হবে, কাল ওকে পাঠানো হবে, তাকে পাঠানো হবে। এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে নোংরা খেলা খেলা হচ্ছে। ইডি কী জানে না, কয়লা কেলেঙ্কারি, ২ জি কেলেঙ্কারি। রাহুল গাঁধীর কাছে কত টাকা আছে তা জানতে যাচ্ছে না কেন ইডি? কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর স্ত্রীর কাছেই যাচ্ছে না কেন? কংগ্রেস সরকারের আমলেই তো এসবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আর সেই সরকারের মাথাতেই রয়েছে রাহুল গাঁধী আর সততার পরাকাষ্ঠা মনমোহন সিংহ।” তারই সঙ্গে মুকুল রায় হুঁশিয়ারি দিতেও ছাড়েননি। তাঁর কথায়, “ভোট শেষ হতে আর ১৯দিন বাকি। ভোটের আগে যারা এসব খেলায় মেতেছেন ভোটের পর কোথায় যাবেন আপনারা মনে রাখবেন না? এ রাজ্যে কংগ্রেস গোল্লা পাবে। বামফ্রন্ট বড় জোর ৭-৮ টা আসন পাবে। দিল্লিতে তৃতীয় বৃহত্তম শক্তি হিসাবে যাবে তৃণমূলই।” তবে অন্যান্য রাজ্যে তৃণমূল প্রার্থীরা জিততে পারবে না বলে নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন মুকুলবাবু।
এদিন ইলাহিগঞ্জে বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ সভা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মুকুলবাবু সেখানে পৌঁছন প্রায় সন্ধে সাড়ে ৬টায়। তখন জমায়েত হওয়া লোকজন সব ফিরে গিয়েছে। রয়েছেন বড় জোর শ’পাঁচেক মানুষ। মুকুলবাবূু নিজেও তাই মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেন, “আমি তো তারকা নই, আমার জন্য মানুষ দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে থাকবেন কেন?” তারই সঙ্গে দলীয় নেতৃত্ব এদিনের দু’টি সভাকে খুব দুরে রাখায় এণন ঘটনা ঘটল বলেও জানিয়েছেন তিনি। একটি সভা ছিল দাঁতনে, আর অন্যটি মেদিনীপুর শহর ঘেঁষা। তবু প্রায় ২১ মিনিট বক্তব্য রাখেন মুকুলবাবু। যেখানে বিগত দিনে সিপিএমের সন্ত্রাসের পাশাপাশি কংগ্রেসের দূর্ণীতির বিরুদ্ধে বেশি সরব ছিলেন তিনি। তবে বিজেপিকেও সাম্প্রদায়িক বলে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। এমনকি সারদা কাণ্ডে সিপিএমকে ইডি না ডাকায় কংগ্রেসেরই সমালোচনা করেছেন তিনি। মুকুলবাবু বলেন, “এখন সিপিএম নেতাকে সারদা প্রশ্নে ডাকবে কেন? এখন যে দু’জনে এক হয়ে গিয়েছে।” বর্তমানে তৃণমূল সন্ত্রাস চালাচ্ছে বলে সিপিএম যে অভিযোগ চালাচ্ছে তা উড়িয়ে দিয়ে মুকুলবাবু বলেন, “সন্ত্রাস ওরা করত। আমরা নই। এসব বলে অপপ্রচার করা হচ্ছে।”
মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুুরের দাঁতন ২ ব্লকের নয়নজোরায় মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সন্ধ্যা রায়ের সমর্থনে জনসভায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “অনেকেই সারদা নিয়ে কেচ্ছা করছে। তবে এটা একটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। চিটফান্ডগুলির সবই বাম আমলে তৈরি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক এই চিটফান্ডগুলির অনুমোদন দিয়েছে। আর রাহুল গাঁধী পশ্চিমবঙ্গে এসে বলছে তৃণমূল চোর।” মুকুলবাবুর হুঁশিয়ারি, “রাহুল গাঁধী ও পি চিদম্বরম কান খুলে শুনে রাখুন, আমাদের লোক অন্যায় করেছে বলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আর আকাশ বিক্রি করে তোমাদের কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। নির্বাচনের দু’দিন আগে হঠাৎ মনে পরে গেল, মুকুল চোর, মমতা চোর।” সভা শেষে সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করেন, সারদা কাণ্ডের তদন্তে অর্পিতা ঘোষকে ডাকা প্রসঙ্গে আপনি কী বলবেন? উত্তরে মুকুলবাবু বলেন, “সারদা সবচেয়ে বেশি বিজ্ঞাপন এবিপিকে দিয়েছে, অর্থাৎ উৎকোচ দিয়েছে। তার কী তদন্ত হবে?”
এছাড়াও মুকুলবাবু বলেন, “প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা কয়েকটি সংবাদ চ্যানেলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কুৎসা ও অপপ্রচার করা হচ্ছে। সেজেগুজে কয়েকজন লোক বসে শুধুমাত্র সরকারবিরোধী কথাই বলে যাচ্ছে।” কংগ্রেস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই নির্বাচনে কংগ্রেস বিরল প্রজাতির দলে পরিণত হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy