Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
পর্যটক টানতে উদ্যোগী বন দফতর

নতুন সাজ চিল্কিগড়ের কনকদুর্গার

লালমাটির রাস্তার দু’পাশে প্রাচীন বনস্পতির ঘন জঙ্গল। সেই পথ উজিয়ে গেলেই জঙ্গলের মাঝে চিল্কিগড়ের শতাব্দী প্রাচীন কনকদুর্গা মন্দির। এই চির চেনা ছবিটার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে এবার চিল্কিগড় মন্দির ও সংলগ্ন এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়ন ও সৌন্দর্যায়নের কাজ হচ্ছে। কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রকের বরাদ্দ ৯৮ লক্ষ টাকায় এই প্রকল্পটি রূপায়ণের দায়িত্বে রয়েছে মেদিনীপুর বন বিভাগ।

মন্দির চত্বরে চলছে কাজ। ছবি:  দেবরাজ ঘোষ।

মন্দির চত্বরে চলছে কাজ। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

কিংশুক গুপ্ত
জামবনি শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৩৩
Share: Save:

লালমাটির রাস্তার দু’পাশে প্রাচীন বনস্পতির ঘন জঙ্গল। সেই পথ উজিয়ে গেলেই জঙ্গলের মাঝে চিল্কিগড়ের শতাব্দী প্রাচীন কনকদুর্গা মন্দির। এই চির চেনা ছবিটার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে এবার চিল্কিগড় মন্দির ও সংলগ্ন এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়ন ও সৌন্দর্যায়নের কাজ হচ্ছে। কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রকের বরাদ্দ ৯৮ লক্ষ টাকায় এই প্রকল্পটি রূপায়ণের দায়িত্বে রয়েছে মেদিনীপুর বন বিভাগ। চিল্কিগড়কে ঝাড়গ্রাম ট্যুরিজম সার্কিটের অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। ডুলুং নদির ধারে ৬৩ একর জঙ্গল এলাকার মধ্যে রয়েছে কনকদুর্গার মন্দির। চিল্কিগড় রাজ পরিবারের কুলদেবী হলেন কনকদুর্গা। রাজ পরিবারের এক উত্তরপুরুষের সভাপতিত্বে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে গঠিত কমিটি মন্দির পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। মন্দির সংলগ্ন জঙ্গলে রয়েছে প্রায় সাড়ে তিনশো প্রজাতির দুষ্প্রাপ্য প্রাচীন গাছগাছড়া ও ভেষজ উদ্ভিদ। চিল্কিগড়ের জঙ্গল এলাকাটি অবশ্য বনভূমির আওতায় পড়ে না। সেক্ষেত্রে আধুনিক ভাবে এলাকার সৌন্দর্যায়নে কোনও বাধা ছিল না। কিন্তু সে পথে হাটেনি প্রশাসন। প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রেখেই পরিকাঠামো উন্নয়ন ও সৌন্দর্যায়নের কাজ হচ্ছে। ডিএফও বিজয় সালিমঠ বলেন, “চিল্কিগড়ের চির চেনা ছবিটার বদল না করেই দর্শনার্থী ও পর্যটকদের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো উন্নয়ন ও সৌন্দর্যায়নের কাজ চলছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। শীতে পর্যটকরা চিল্কিগড়কে নতুন সাজে পাবেন।”

কেমন সেজে উঠছে চিল্কিগড়? জঙ্গলপথে ঢোকার আগে তৈরি হচ্ছে বিশাল তোরণ। মন্দির প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীদের জন্য জঙ্গলঘেঁষে তৈরি হয়েছে একাধিক মানানসই বসার জায়গা। মন্দিরের চারপাশ বাঁধিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে শিশুদের উদ্যান। মন্দিরের সামনে তৈরি হবে বাহারি আলোর সাজে জলের সুদৃশ্য ফোয়ারা। থাকবে গাড়ি পাকিং করার জায়গা। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মন্দির সংলগ্ন ডুলুং নদী লাগোয়া জঙ্গলটি চড়ুইভাতির জন্য প্রসিদ্ধ। তাই সেখানে তৈরি হচ্ছে পিকনিক শেড, পর্যাপ্ত বসার জায়গা। এ ছাড়া শৌচাগার, জলের ব্যবস্থাও হচ্ছে মন্দির প্রাঙ্গণে। ডিসেম্বরের মধ্যেই সেজে উঠবে মন্দির প্রাঙ্গণ। মন্দির সংলগ্ন পরিখায় বোটিংয়ের ব্যবস্থাও হবে। চিল্কিগড়ে গিয়ে দেখা গেল মন্দির প্রাঙ্গণে জোর কদমে কাজ চলছে। কলকাতা থেকে বেড়াতে আসা স্বরূপ রায়, হুগলির নয়নতারা সাপুই, সোদপুরের অনন্ত পালিতেরা আগেও চিল্কিগড়ে এসেছেন। তাঁদের বক্তব্য, “মন্দির প্রাঙ্গণে পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রয়োজন ছিল। সৌন্দর্যায়নের ফলে চিল্কিগড়ের আকর্ষণ বাড়বে।” মন্দিরের পুরোহিত আতঙ্কভঞ্জন ষড়ঙ্গী ও গৌতম ষড়ঙ্গীর বক্তব্য, “প্রতি দিনই অসংখ্য দর্শনার্থী এখানে আসেন। বিশেষ দিনগুলিতে দর্শনার্থী অনেক বাড়ে। এ ছাড়া শীতের সময় জঙ্গলে চড়ুইভাতি করতেও আসেন অনেকে। মন্দির সংলগ্ন এলাকার উন্নয়ন হলে সকলে উপকৃত হবেন।”

১৭৪৯ সালে ‘তিহারদ্বীপা গড়’ বা জামবনি পরগনার রাজা গোপীনাথ সিংহ মত্তগজ স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে আশ্বিন মাসের শুক্ল সপ্তমী তিথিতে কনকদুর্গার মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। রানি গোবিন্দ মণির হাতের কঙ্কণ দিয়ে তৈরি করা হয় দেবীর মূর্তি। চতুর্ভুজা দেবী এখানে অশ্ববাহিনী। পরে গোপীনাথের দৌহিত্র কমলাকান্ত দেও ধবলদেব চিল্কিগড়ের রাজা হন। সেই থেকে কমলাকান্তের উত্তরসূরিরাই মন্দিরের সেবাইত। মন্দিরের প্রথম পূজারি রামচন্দ্র ষড়ঙ্গির উত্তরসূরিরা বংশানুক্রমে মন্দিরের পূজকের দায়িত্বে। কনকদুর্গার প্রাচীন মন্দিরটি জরাজীর্ণ হয়ে যাওয়ায় ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে রাজ পরিবারের উদ্যোগে পাশেই নতুন মন্দির তৈরি করা হয়। ১৯৬৮ সালে কনকদুর্গার আদি প্রাচীন সোনার মূর্তিটি চুরি যায়। ফলে নতুন একটি অষ্টধাতুর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। তারপরও আরও কয়েক বার মূর্তি চুরি গিয়েছে। ২০১১ সালের ২১ জুলাই রাতে মন্দিরের দরজা ভেঙে চতুর্থবার মূর্তি চুরি যায়। এরপর ওই বছরেই ২৮ সেপ্টেম্বর ফের অষ্টধাতুর বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখন ওই সর্বশেষ নতুন মূর্তিতেই দেবীর পুজো হয়। নিরাপত্তার জন্য দেবীর মন্দিরের গর্ভগৃহে বসানো হয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy