Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

জমি-জটে থমকে ৪০ স্কুলের অনুমোদন

জমির সংস্থান না হওয়ায় আটকে গেল নতুন স্কুলের অনুমোদন। নতুন স্কুল তৈরির অনুমোদন চাওয়ার আগে স্কুলের নামেই জমি দরকার- তা জানা ছিল না পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শিক্ষা দফতরের। তাই শ্মশান, পুকুরপাড়, এমনকি অন্যের জমিতেও স্কুল তৈরির জন্য অনুমোদন চেয়েছে জেলা। তাই নতুন স্কুল তৈরির প্রস্তাব পাঠালেও অনুমোদন মেলেনি।

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৪ ০২:১২
Share: Save:

জমির সংস্থান না হওয়ায় আটকে গেল নতুন স্কুলের অনুমোদন।

নতুন স্কুল তৈরির অনুমোদন চাওয়ার আগে স্কুলের নামেই জমি দরকার- তা জানা ছিল না পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শিক্ষা দফতরের। তাই শ্মশান, পুকুরপাড়, এমনকি অন্যের জমিতেও স্কুল তৈরির জন্য অনুমোদন চেয়েছে জেলা। তাই নতুন স্কুল তৈরির প্রস্তাব পাঠালেও অনুমোদন মেলেনি।

এই ঘটনায় হতবাক জেলার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। নিজের জমি দেখিয়ে পুনরায় প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে। তা জানার পর সম্প্রতি ভূমি ও ভূমি সংস্কারের কাছে স্কুলের জন্য জমি চেয়ে দরবার করেছেন জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক)। ফলে নতুন স্কুল তৈরির কাজ অনেকটাই পিছিয়ে যেতে বসেছে। এ ব্যাপারে জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) কবিতা মাইতি বলেন, “আমরা কী জমি সংক্রান্ত আইন বুঝি। স্থানীয় গ্রাম শিক্ষা কমিটি এসআই-দের নিয়ে জমি দেখেছেন। গ্রামের মানুষ স্কুলের জন্য শ্মশানের জায়গা দিতে রাজি হয়েছেন, পুকুরপাড় জমি দিতে রাজি হয়েছেন, আমরা তাই পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। এখন ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর বলছে, ওই জমি দেওয়া যাবে না।”

জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিক অরিন্দম দত্ত বলেন, “দিন কয়েক আগে শিক্ষা দফতর জমি সমস্যার বিষয়টি জানিয়েছে। তারপরই আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে কিছু খাস জমি বের করেছি। তা হস্তাম্তরের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। আমি তো অন্যের পুকুরপাড়, শ্মশান- এসব স্কুলের নামে করতে পারি না। তাই সেই সব জায়গায় খাস জমি রয়েছে কিনা বিএলআরও-দের তা দেখতে বলেছি।”

শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী, প্রতি এক কিলোমিটার দূরত্বে একটি করে প্রাথমিক স্কুল করতে হবে। যাতে খুদে পড়ুয়ারা বাড়ির পাশের স্কুলেই পড়তে পারে। বাড়ি থেকে স্কুলের দুরত্ব বেশি হলে ছোট ছোট বাচ্চাদের যাওয়ার সমস্যা দেখা দেবে। এই আইন মেনে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনও প্রতি কিলোমিটারে একটি করে স্কুল তৈরির প্রস্তাব তৈরি করার জন্য পদক্ষেপ শুরু করে। ২০১২ সালে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়। জিআইএস ম্যাপ থেকে দেখে নেওয়া হয় কোন কোন এলাকায় কত দুরত্বে স্কুল রয়েছে। সেই ম্যাপ ধরে দেখা যায়, ওই পরিুকল্পনা বাস্তবায়িত করতে জেলায় ১০৯টি নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রয়োজন। তাহলে প্রতি কিলোমিটারে একটি করে স্কুল হয়ে যাবে। সেই মতো জেলা স্কুল পরিদর্শককে জানিয়ে দেওয়া হয়, তাঁরা যাতে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতরে সেই প্রস্তাব পাঠায়। জেলা স্কুল পরিদর্শক গত বছর ডিসেম্বর মাসে ৮২টি নতুন স্কুলের অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু অনুমোদনের পর দেখা যায় মাত্র ৪২টি স্কুলের অনুমোদন মিলেছে। বাকি ৪০টি স্কুলের অনুমোদন মেলেনি। তখনই জানা যায়, জমি জটের কারণে নতুন স্কুলের অনুমোদন আটকে গিয়েছে।

নতুন স্কুলের অনুমোদনের প্রস্তাব তৈরির ক্ষেত্রে এমনিতেই পিছিয়ে রয়েছে জেলা। এখনও ২৭টি স্কুলের অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবই পাঠানো যায়নি। তার উপর জমি জটে অনুমোদন না হয়ে ফিরে আসা ৪০টি স্কুলেরও প্রস্তাব তৈরি করতে হবে নতুন করে। স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, যে ১০৯টি স্কুলের জন্য সরকারি অর্থ রয়েছে, কেবলমাত্র সঠিকভাবে প্রস্তাব পাঠালেই অনুমোদন পেয়ে যাবে, সেক্ষেত্রেও এত ঢিলেমি কেন? অভিযোগ, জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরের উদাসীনতার কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরের গড়িমসি দেখে বেজায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক জগদীশ প্রসাদ মিনাও। সর্বশিক্ষা অভিযানের জেলা প্রকল্প আধিকারিক নীলাঞ্জন ভট্টাচার্যও জেলা স্কুল পরিদর্শকদের নিয়ে বৈঠক করেন। জেলাশাসক সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, দ্রুত গতিতে প্রস্তাব তৈরি করতে হবে। বিষয়টি তদারকির দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে সর্বশিক্ষা অভিযানের প্রকল্প আধিকারিককে। তারই সঙ্গে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরকে জমি দেখতেও বলা হয়। সেই জমিও দেখা শুরু হয়েছে। জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩৭টি স্কুলের ক্ষেত্রে খাস জমি পাওয়া গিয়েছে। ফলে সেগুলি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে তেমন কোনও জটিলতা নেই। সরকারের এক দফতর অন্য দফতরকে হস্তান্তর করবে। তার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। বাকি ক্ষেত্রে কিভাবে জমি মিলবে তার খোঁজ শুরু হয়েছে।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলিতেই এই সব স্কুল হওয়ার কথা। বিশেষত, মুখ্যমন্ত্রী যে জঙ্গলমহলের উন্নয়নের কথা বারেবারেই বলেছেন, সেই জঙ্গলমহলেই বেশিরভাগ স্কুল হওার কথা। কিন্তু জমিজটে আটকে বিনপুর-২ ব্লকে ৭টি স্কুল, নয়াগ্রামের ৪টি, জামবনির ৬টি-সহ বহু স্কুল। প্রশাসন জানিয়েছে, যে ৪২টি স্কুলের অনুমোদন মিলেছে তার টাকাও ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে। পাথুরে মাটি এলাকার জন্য ১৮ লক্ষ ও অন্য এলাকার জন্য স্কুল প্রতি ১৬ লক্ষ টাকা পাওয়া গিয়েছে। ইতিমধ্যেই অর্ধেক টাকাও ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। জমি জট না থাকলে বা সব স্কুলের প্রস্তাব পাঠানো গেলে একই সঙ্গে সব স্কুলের অনুমোদন মিলে যেত। তা না হওয়ায় গ্রামের পাশের স্কুলে পড়া থেকে বঞ্চিত হবে ওই সমস্ত এলাকার পড়ুয়ারা।

অন্য দিকে, নতুন উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের জন্যও দ্রুত প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে। জেলায় আরও প্রায় ৫২টি নতুন উচ্চ প্রাথমিক করার কথা জানিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু এখনও সেই প্রস্তাবই পাঠাতে পারেনি জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক)। কেন হয়নি? জেলা স্কুল পরিদর্শক সঙ্ঘমিত্র মাকুড়ের কথায়, “ইতিমধ্যেই ২২টি স্কুলের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আরও ৩০টি স্কুলের প্রস্তাব তৈরির কাজ চলছে। সেগুলিও শীঘ্রই পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

land crisis school approval suman ghosh medinipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy