তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাঁ পাশে দুর্গাশঙ্কর পান, ছায়া দোলই। ছবি: সুদীপ আচার্য।
এক সময় সিপিএমের গড় ছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা। ২০১১ সালে পরিবর্তনের ঝড়ের পরেও চন্দ্রকোনা বিধানসভা আসন এবং এলাকার ক্ষীরপাই পুরসভা ধরে রেখেছিল সিপিএম। সেই চন্দ্রকোনাতেও অবশেষে পরিবর্তনের ছবি! সোমবার কলকাতার ধর্মতলায় শহিদ দিবসের সভায় চন্দ্রকোনার সিপিএম বিধায়ক ছায়া দোলই আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে যোগ দিলেন। ক্ষীরপাইয়ের সিপিএম পুরপ্রধান দুর্গাশঙ্কর পান এবং দলের তিন কাউন্সিলরও এ দিন তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন। এর ফলে, আগামী বছর নির্বাচনের আগেই ক্ষীরপাই পুরসভায় ক্ষমতায় আসতে চলেছে তৃণমূল। জেলায় একমাত্র এই পুরসভাই সিপিএমের দখলে ছিল।
এ দিনের দলবদলের ফলে চন্দ্রকোনায় সিপিএমের অস্তিত্ব তলানিতে এসে ঠেকল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের মতে, “সিপিএম বলে জেলায় যে আর কিছুই নেই, সোমবার ফের তা প্রমাণ হয়ে গেল।” যদিও সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার বলেন, “কেউ দলে বহুদিন থাকার পর ক্লান্ত হয়ে গেলে এমন সিদ্ধান্ত নেন। এতে দলের কোনও ক্ষতি হবে না।”
গত কয়েকমাস ধরেই শোনা যাচ্ছিল চন্দ্রকোনার সিপিএম বিধায়ক ছায়া দোলই তৃণমূলে যোগ দেবেন। শেষমেশ এ দিন তাই সত্যি হল। দলত্যাগী বিধায়ক এ দিন বলেন, “আমি নামেই বিধায়ক ছিলাম। আমার কোনও স্বাধীনতা ছিল না। দলের বাইরে কাউকে সার্টিফিকেট দিলেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হত। উন্নয়নের ক্ষেত্রেও দলের সিদ্ধান্তকেই মান্যতা দিতে হত। তাই বিধায়কের পদ চলে যাবে জেনেও এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
ছায়াদেবীর তুলনায় দুর্গাশঙ্করবাবুর দলবদল অনেকটাই অপ্রত্যাশিত। তিনি বলেন, “আমার সিপিএমের বিরুদ্ধে বলার কিছু নেই। ক্ষীরপাই পুর-শহরের সার্বিক উন্নয়ন এবং বেকার ছেলেদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যেই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” তিনি ছাড়াও যে তিন সিপিএম কাউন্সিলর এ দিন তৃণমূলে যোগ দেন, তাঁরা হলেন মানসী মান্ডি, বংশী প্রামানিক ও চম্পা পাল।
ছাত্রাবস্থায় ছাত্র পরিষদ করেছেন দুর্গাশঙ্করবাবু। বাবা বিশ্বনাথ পান ছিলেন কংগ্রেস নেতা। বিশ্বনাথবাবু ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ক্ষীরপাই পুরসভার চেয়ারম্যানও ছিলেন। তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার পর দুর্গাশঙ্করবাবু ১৯৮০ সালে নির্দল প্রার্থী হিসেবে জিতে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ফের ১৯৯০ সালের পুর-নির্বাচনে দিতে বাম পুরবোর্ডের চেয়ারম্যান হন তিনি। সেই থেকে টানা ২৪ বছর তিনি চেয়ারম্যান ছিলেন। দুর্গাশঙ্করবাবু-সহ মোট চার কাউন্সিলর এ দিন তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় এই পুরসভাও তৃণমূলের দখলে চলে এলো। এই পুরসভায় ১০টি ওয়ার্ড। গত পুর-নির্বাচনে ৭টিতে জিতে ক্ষমতায় এসেছিল সিপিএম। তৃণমূল জিতেছিল ৩টি ওয়ার্ডে। এ দিন চার সিপিএম কাউন্সিলর দলবদল করায় তৃণমূলের কাউন্সিলর বেড়ে হল ৭।
এ দিনের এই দলবদল নিঃসন্দেহে সিপিএমের কাছে আঘাত। ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু সিপিএমের ঝুলিতে যে সামান্য কয়েকটি বিধানসভা আসন ছিল, তার একটি চন্দ্রকোনা। এই বিধানসভা বরাবর সিপিএমের দখলে ছিল। দীর্ঘ ১৫ বছর টানা ওই কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন গুরুপদ দত্ত, তার আগে উমাপতি চক্রবর্তী। ২০১১ সালে বিধানসভা আসনটি সংরক্ষিত হওয়ায় চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের বান্দিপুর পঞ্চায়েতের ভোতাখালি গ্রামের পার্শ্ব শিক্ষিকা ছায়া দোলইকে প্রার্থী করে সিপিএম। রাজনীতিতে আনকোরা হলেও সাদামাঠা পরিবারের ওই বধূ তৃণমূল প্রার্থী শিবরাম দাসকে ২৭০০ ভোটে হারিয়ে দেন। তার আগে ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে গোটা রাজ্যে তৃণমূল ভাল ফল করলেও চন্দ্রকোনা বিধানসভায় দাঁত ফোটাতে পারেনি। আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের বাম প্রার্থী শক্তিমোহন মালিক ২০ হাজারের বেশি ভোটে চন্দ্রকোনা থেকে এগিয়ে ছিলেন। পরের বছর পুরভোটেও ঘাটাল মহকুমার পাঁচটি পুরসভার মধ্যে চন্দ্রকোনার রামজীবনপুর বাদে বাকি দু’টি ক্ষীরপাই ও চন্দ্রকোনা পুরসভা নিজেদের দখলেই রেখেছিল সিপিএম। তবে ২০১২ সালে চন্দ্রকোনার সিপিএমের চেয়ারম্যান অরুণ সাহার প্রতি অনাস্থা আনে তৃণমূল। আস্থাভোটে জিতে তৃণমূল পুরবোর্ড দখল করে নেয়।
বিধায়ক এবং ক্ষীরপাই পুরসভার চেয়ারম্যান-সহ চার কাউন্সিলরের তৃণমূলে যোগদানের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলই। বারবার বৈঠক করেছেন তিনি। শঙ্করবাবু জানিয়েছেন, আগামী বছর ক্ষীরপাই পুর-নিবার্চনে দুর্গাশঙ্করবাবুকে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী করেই তৃণমূল ভোটে লড়বে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় জানিয়েছেন, জেলায় সিপিএমের আরও বহু নেতা-কর্মী তাঁদের দলে আসার জন্য যোগাযোগ করছেন। সে সব প্রস্তাব নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy