ঝাড়গ্রামের পর্যটন প্রসারে সরকারি স্তরে প্রচার রয়েছে। ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি ঘিরে ট্যুরিজম সার্কিট তৈরির কাজও চলছে জোর কদমে। কিন্তু পর্যটনের মরসুমে অরণ্যশহরে উপযুক্ত জায়গা পেতে হিমশিম খেতে হয় পর্যটকদের। মাওবাদী ভয় কাটিয়ে ছন্দে ফেরা ঝাড়গ্রামে পর্যটকদের থাকার জায়গা নেই। সরকারি স্তরে উদ্যোগ সিন্ধুতে বিন্দুবৎ। বেসরকারি স্তরে পর্যটকদের থাকার মতো নতুন হোটেল সে ভাবে তৈরি হচ্ছে না। আগাম বুকিং না করলে দুর্ভোগ পোহাতে হয় পর্যটকদের।
সম্প্রতি ঝাড়গ্রাম হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্য বলছে, পর্যটন-পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হয়েছে। অশান্তির দিনগুলিতে পর্যটক ঝাড়গ্রামে আসতে চাইতেন না। ২০১০ সালে বড়দিনের ছুটতে মাত্র ২৬ জন পর্যটক ঝাড়গ্রামে এসেছিলেন। ২০১১ সালে বর্ষশেষের সপ্তাহে এসেছিলেন ১৩৮ জন। ২০১২ সালে খরা কাটিয়ে সংখ্যাটা দেড় হাজার ছাড়ায়। ২০১৩ সালে হাজার তিনেক পর্যটক আসেন। হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন কর্মকারের দাবি, “২০১৪-র নভেম্বর-ডিসেম্বর এবং বর্ষবরণের সপ্তাহ মিলিয়ে এবার পর্যটকের সংখ্যাটা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বিদেশি পর্যটকেরাও এখন ঝাড়গ্রামে আসছেন। পর্যটকের থাকার জায়গা দিতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছি।”
কেন এই সমস্যা? সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, অরণ্যশহরে ছোট বড় মিলিয়ে ১৭ লজ-হোটেল, অতিথিশালা রয়েছে। এর মধ্যে সাতটিতে পর্যটক থাকার মতো উপযুক্ত পরিকাঠামো রয়েছে। কিন্তু তাতে এক দিনে মেরে কেটে সাড়ে তিনশো জন থাকতে পারেন। অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত পর্যটনের মরসুমে ৬ মাসে দশ-বারো হাজার পর্যটক আসেন। কিন্তু শীতের মরসুমে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসেন অরণ্যশহরে। মধুসূদনবাবুর কথায়, “শীতের ছুটির দিনগুলিতে বিশেষত, বড়দিনের ছুটিতে ও বর্ষবরণের সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসেন। এ ছাড়া অন্য ছুটির দিনগুলি ও দোলের সময়ও পর্যটক আসেন। তখন সমস্যা হয়। এবার বর্ষশেষ ও বর্ষবরণের সপ্তাহে আগাম বুকিং করে যাঁরা আসেননি, তাঁদের জায়গা দেওয়া সম্ভব হয়নি।”
ঝাড়গ্রামে সরকারি লজ-হোটেলের সংখ্যাটাও হাতে গোনা। অরণ্যশহরের কদমকানন এলাকায় পুরসভার ‘বনানী অতিথি নিবাস’টি ২০১০ সালের এপ্রিল থেকে সিআরপিএফের দখলে। বাম জমানায় জঙ্গলমহলের অশান্তি পর্বের সময় থেকেই ১৬ হাজার বর্গফুটের অতিথি নিবাসে সিআরপি’র ১৮৪ নম্বর ব্যাটালিয়নের হেড কোয়ার্টার করা হয়েছে। অথচ সেখানে কয়েকশো পর্যটক থাকার পরিকাঠামো ছিল। ঝাড়গ্রাম শহরের উপকন্ঠে বাঁদরভুলায় জঙ্গলের মধ্যে রাজ্য বন উন্নয়ন নিগমের প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্রটি অবশ্য বছর খানেক হল চালু হয়েছে। কিন্তু সেখানে মাত্র ৬টি ঘরে ১২ জনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ঝাড়গ্রাম মল্লদেব রাজপ্রাসাদের মূল ভবনের একতলায় ও প্রাঙ্গণের একটি ভবনে ঐতিহ্যপ্রাচীন ‘দি প্যালেস রিসোর্ট’-টি রাজ পরিবার ও পর্যটন দফতরের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হয়। সেখানে তিনটি ডর্মিটারি ও দু’টি ডিলাক্স স্যুইট-সহ দশটি ঘর রয়েছে। ম্যানেজার অশ্রুকুমার মাইতি জানান, সংস্কারের কাজ চলায় এখন দু’টি ডিলাক্স স্যুইট-সহ আটটি ঘরে বুকিং নেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে ২৫ জনের থাকার ব্যবস্থা। পর্যটন দফতর ও রাজ পরিবারের যৌথ উদ্যোগে রাজপ্রাসাদের সিংহদরজার বাইরে পৃথক ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স তৈরির কাজ চলছে। সেটি তৈরি হলে বেশ কিছু পর্যটকের থাকার জায়গা হবে।
বেসরকারি স্তরে কেন ঝাড়গ্রামে হোটেল তৈরি হচ্ছে না? ঝাড়গ্রাম হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন কর্মকার বলেন, “২০০৯-১১ মাওবাদী সন্ত্রাস পর্বে লজ-হোটেল মালিকেরা এতটাই ক্ষতির সম্মুখীন হন, যে নতুন করে হোটেল সম্প্রসারণের বা নতুন হোটেল তৈরির ঝুঁকি নিতে চান না অনেকে। তা ছাড়া অরণ্যশহরে এসে পর্যটকেরা নিরিবিলি পরিবেশে থাকতে চান। সে জন্য আগ্রহী কেউ কেউ নতুন করে হোটেল ব্যবসায় নামতে চান বটে। কিন্তু ফাঁকা জমি পাওয়াটাই সমস্যা।”
ঝাড়গ্রামকে কেন্দ্র করে ট্যুরিজম সর্কিট গড়ে তোলার কথা প্রায়ই বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আশপাশে দর্শনীয় স্থানগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নে অর্থবরাদ্দ করে কিছু উন্নয়ন-কাজও হচ্ছে। কিন্তু পর্যটকেরা কোথায় থাকবেন তা নিয়ে সরকারি বা বেসরকারি স্তরে কোনও রকম ভাবনাই নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy