সিপিআই নেতা সন্তোষ রাণা।
বর্ষীয়ান সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত এ বার লোকসভার ভোটে না দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর্জি মেনে তাঁকে অব্যাহতিও দিয়েছে সিপিআই।
এই পরিস্থিতিতে গুরুদাসবাবুর নির্বাচনী কেন্দ্র ঘাটাল থেকে বামফ্রন্টের প্রার্থী হতে পারেন সিপিআইয়ের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক তথা মেদিনীপুরের প্রাক্তন বিধায়ক সন্তোষ রাণা। দলীয় সূত্রে খবর, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সন্তোষবাবুকেই এ বার ঘাটাল থেকে লোকসভার ভোটে লড়তে হবে। প্রার্থী হিসেবে তাঁর নামে সিলমোহর পড়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। এ প্রসঙ্গে রবিবার সন্তোষবাবু বলেন, “দল যা নির্দেশ দেবে, তা মেনে চলব।”
পশ্চিম মেদিনীপুরে লোকসভা কেন্দ্র মোট তিনটি। ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর এবং ঘাটাল। গত লোকসভা নির্বাচনে এই তিনটি কেন্দ্রই বামেদের দখলে আসে। মেদিনীপুর থেকে জেতেন সিপিআইয়ের প্রবোধ পাণ্ডা, ঘাটালে সিপিআইয়ের গুরুদাস দাশগুপ্ত এবং ঝাড়গ্রাম থেকে জয়ী হন সিপিএম প্রার্থী পুলিনবিহারী বাস্কে। তবে, এ বার পরিস্থিতি আলাদা। লোকসভা নির্বাচনের লড়াই যে কঠিন হতে চলেছে, তা মানছেন ফ্রন্টের জেলা নেতৃত্বও। সাধারণত, রাজ্যের তিনটি লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী দেয় সিপিআই। মেদিনীপুর, ঘাটাল এবং বসিরহাট। দলীয় সূত্রে খবর, এ বারও মেদিনীপুর কেন্দ্রে প্রার্থী হচ্ছেন প্রবোধ পাণ্ডা। বসিরহাট থেকে প্রার্থী হচ্ছেন নুরুল হুদা। ঘাটাল কেন্দ্রের জন্য গোড়ায় সিপিআইয়ের রাজ্য নেতৃত্ব গুরুদাসবাবুর নামই প্রস্তাব করেছিলেন। তবে, বর্ষীয়ান ওই সাংসদ নিজের সিকি শতকের সংসদীয় রাজনীতির ইনিংসে দাঁড়ি টানার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কে প্রার্থী হবেন তা নিয়ে ফের আলোচনা শুরু হয়। তখনই উঠে আসে সন্তোষ রাণার নাম। রবিবার সিপিআইয়ের এক জেলা নেতা বলেন, “গুরুদাসবাবু ভোটে না দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ঘাটাল কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে আমরা সন্তোষদার নাম প্রস্তাব করেছিলাম। এ বার তাতে সিলমোহর পড়তে চলেছে।”
এখন মেদিনীপুরে থাকলেও সন্তোষবাবুর আদি বাড়ি সবংয়ের দশগ্রামে। কৃষক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাঁর জেলা রাজনীতিতে উত্থান। এক সময় দলের দশগ্রাম শাখা কমিটির সম্পাদক ছিলেন। সেটা ১৯৬৮ সাল। ১৯৭০ সালে তিনি দলের সবং লোকাল কমিটির সম্পাদক হন। আশির দশকের মাঝামাঝি দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যপদ পান সন্তোষবাবু।
ঘাটাল কেন্দ্র থেকে এক সময় জিততেন প্রয়াত গীতা মুখোপাধ্যায়। তাঁর মৃত্যুর পর এই আসনে সিপিআইয়ের প্রার্থী হন গুরুদাসবাবু। সেই ১৯৮০ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত যতগুলো লোকসভা নির্বাচন হয়েছে, তার সবক’টিতেই এই কেন্দ্র থেকে জিতেছে বামেরা। ঘাটালে বামেদের প্রাপ্ত ভোটের হারও বরাবর বেশি। ১৯৮০ সালে এই লোকসভা কেন্দ্রে বামেদের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৫৭.১০ শতাংশ। ১৯৮৪ সালে ৫৩.৬৩ শতাংশ, ১৯৮৯-এ ৫৮.১১ শতাংশ, ১৯৯১ সালে ৫৪.৯৬ শতাংশ, ১৯৯৬ সালে ৫৪.৮২ শতাংশ, ১৯৯৮ সালে ৫৪.৮০ শতাংশ। ১৯৯৯ সালে ৪৯.১০ শতাংশ, ২০০৪ সালে ৬১.৯২ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে ৫৩.৭১ শতাংশ। মাঝে শুধু ২০০০ সালের উপ-নির্বাচনে জেতেন তৃণমূল প্রার্থী বিক্রম সরকার। তখন রাজনৈতিক চাপানউতোরে অগ্নিগর্ভ ছিল কেশপুর।
এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। রাজ্যে পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে ঘাটালেও ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে বামেরা। এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ডেবরা, পিংলা, দাসপুরে গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনেও বামেরা পযুর্দস্ত হয়েছে। ফ্রন্ট নেতৃত্ব অবশ্য মনে করেন, পঞ্চায়েত নির্বাচন বিনা যুদ্ধে শেষ হয়েছে। জনমতের প্রতিফলন তাতে ঘটেনি। লোকসভায় তা হবে না। আক্রমণ হলে প্রতিরোধ হবে। ফ্রন্টের জেলা আহ্বায়ক তথা সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকারও দলের অন্দরে বলছেন, “২০০৯ সালে জেলার তিনটি লোকসভা আসনেই আমরা জয়যুক্ত হয়েছিলাম। তখনও মাওবাদী আক্রমণে জেলা রক্তাক্ত হয়ে উঠেছিল। তা-ও আমরা পেরেছি।” তাঁর বক্তব্য, “আমরা জানি, আক্রমণ কমবে না। চক্রান্ত কমবে না। তবে, জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদের মধ্য দিয়েই পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy