প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রাস্তা তৈরিতে গতি আনতে এ বার সব দফতরকে নিয়ে কমিটি গঠন করল প্রশাসন। ফলও মিলছে হাতেনাতে। চলতি আর্থিক বছরে প্রায় সাড়ে ৩০০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে জেলা প্রশাসন। এখনও হাতে রয়েছে এক মাসেরও বেশি সময়। এই সময়ে আরও কিছুটা রাস্তা তৈরি হবে বলেই প্রশাসনিক কর্তাদের আশা।
কী ভাবে কমিটি গঠন করা হল? প্রশাসন জানিয়েছে, জেলাশাসক, সভাধিপতি, অতিরিক্ত জেলাশাসক, কর্মাধ্যক্ষ, ইঞ্জিনিয়ার, এজেন্সিদের পাশাপাশি কমিটিতে রাখা হয়েছে বন দফতর, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও পূর্ত দফতরকেও। কোনও এলাকায় কাজ করতে গিয়ে সমস্যা দেখা দিলেই বনাধিকারিক, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। দ্রুত সমস্যা মিটিয়ে কাজ শুরু হচ্ছে কাজ। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) পাপিয়াঘোষ রায়চৌধুরীর কথায়, “এতে ভাল ফল মিলছে। যে কাজ করতে দীর্ঘ টালবাহানা হত, এখন তা দ্রুত হচ্ছে।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে মূলত চারটি সমস্যা দেখা দিত। প্রথম সমস্যা, সিন্ডিকেট রাজ। বহু এলাকায় সিন্ডিকেট বানিয়ে শাসক দলের নেতারা বেশি দামে বালি সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনতে বাধ্য করাত বলে অভিযোগ। ঠিকাদারেরা কাজ করতে রাজি হচ্ছিলেন না। বাধ্য হয়ে সরকারকে অন্য সিদ্ধান্ত নিতে হত। এখন কেন্দ্রীয় দুই সংস্থাকে দিয়ে সেই কাজ করাতে হচ্ছে। দ্বিতীয় সমস্যা, রাস্তা তৈরির ক্ষেত্রে মাঝ পথে কারও রায়তি জমি পড়ে গেলে। কিছু ক্ষেত্রে জমি থেকে মাটি নেওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা হত। তৃতীয় সমস্যা ছিল, বন দফতর। অনেক ক্ষেত্রেই রাস্তার কিছু কিছু অংশ বন দফতরের জমির উপর দিয়ে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে বন দফতর জমি দিতে রাজি হত না। আর চতুর্থ সমস্যা, কারিগরি সংক্রান্ত। ঝাড়গ্রাম মহকুমা পাথরে এলাকা। যেখানে সব ক্ষেত্রে সাধারণ পদ্ধতি প্রয়োগ হয় না।
এই ধরনের সমস্যা এলেই সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হত। বন দফতরের ক্ষেত্রে সমস্যা হলে, সাধারণত বিট অফিসার বা রেঞ্জারদের পাঠিয়ে দেওয়া হত। যাঁরা কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারতেন না। আলোচনা করে জানাবেন বলে চলে যেতেন। পরে ডিএফও-র সঙ্গে আলোচনা করতে সময় নিতেন। তাতে দীর্ঘ সময় ব্যয় হত। রায়তি জমির ক্ষেত্রেও সমস্যা থাকলে পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, প্রশাসনের দ্বারস্থ হতে হত। ব্যয় হত সময়।
এ সব অভিজ্ঞতা থেকেই প্রশাসন এ বার প্রতিটি বিভাগের সর্বোচ্চ পদাধিকারিদের নিয়ে কমিটি তৈরি করেছে। যে কমিটির বৈঠকে প্রতিটি দফতরের আধিকারিকদের উপস্থিতিও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এমনকি যেখানে সমস্যা সেখানে সর্বোচ্চ আধিকারিকরা পৌঁছেও যাচ্ছেন। সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটিয়ে কাজ করা হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে কেন্দ্রীয় সংস্থা কাজ করছে। ফলে সিন্ডিকেট সংক্রান্ত ঝামেলা করা যাবে না, তা সংশ্লিষ্ট এলাকার নেতা-কর্মীদের জানিয়ে দিয়েছেন দলীয় নেতৃত্বই। ফলে এখন সেই সমস্যা অনেকটাই কমেছে।
বন দফতরের জমি সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিয়েছিল ঝাড়গ্রামে। তা-ও মিটিয়ে ফেলা গিয়েছে। চন্দ্রকোনা এলাকায় রায়তি জমি নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। বিনপুরে সমস্যা দেখা দিয়েছিল মাটির স্তর নিয়ে। এই কারগরি সমস্যাও মেটানো গিয়েছে জেলা পরিষদ ও পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে। তারই জেরে এ বার চলতি আর্থিক বছরে সাড়ে ৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি রাস্তা তৈরি করা সম্ভব হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy