কাঁথির ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি-র প্রার্থী নির্মাল্য দাস। সেখানে তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরির ছেলে সুপ্রকাশ গিরি।
শুভেন্দু অধিকারীর নাম করে বিজেপি-কে ভোট দিতে বলছেন শিশির অধিকারী? অডিয়ো টেপ ঘিরে বিতর্ক। — ফাইল চিত্র
পুরভোটে কাঁথিতে বিজেপি প্রার্থীদের জেতাতে ময়দানে নেমেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বাবা তথা কাঁথির তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারী? প্রশ্নটা উঠেছে পুরভোটের আগের দিন অর্থাৎ শনিবার একটি অডিয়ো টেপ ভাইরাল হওয়াকে কেন্দ্র করে। ওই অডিয়ো টেপকে সামনে রেখেই রাজ্যের শাসক শিবিরের দাবি, তৃণমূলের সাংসদ হয়েও বিজেপি-র হয়ে ভোট চাইছেন শিশির। আনন্দবাজার অনলাইন যদিও ওই অডিয়ো টেপের সত্যতা যাচাই করেনি। শিশিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেননি। বরং বলেন, ‘‘ভোট দিতে বলাটা অপরাধ নাকি!’’
শনিবার সকালে যে অডিয়ো টেপ প্রকাশ্যে এসেছে সেখানে শোনা গিয়েছে দু’জনের কণ্ঠস্বর। এক জনের কণ্ঠস্বর শুনে মনে হচ্ছে, তিনি বয়স্ক। অন্য জনের স্বর শুনে মনে হচ্ছে, তিনি অপেক্ষাকৃত তরুণ। ফোন ধরতেই বয়স্ক কণ্ঠের ব্যক্তি বলেন, ‘‘আমি শিশির অধিকারী বলছি বাবা।’’ তরুণ কণ্ঠের ব্যক্তি উত্তর দেন, ‘‘হ্যাঁ, স্যার, বলুন স্যার।’’ এর পর সেই বয়স্ক কণ্ঠের ব্যক্তি অন্য জনের পরিচয় জানতে চান। তখন তরুণ কণ্ঠের ব্যক্তি বলেন, ‘‘আমি ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের নিত্যানন্দ।’’ এর পর নিজেকে শিশির অধিকারী পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘আমার ছেলে বলেছিল, আপনাকে ফোন করে এক বার বলতে। একটু দেখে দেবেন বাবা।’’ তখন নিত্যানন্দ পরিচয়ের ব্যক্তি পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘‘কাকে দেখব স্যার?’’ উত্তরে বয়স্ক কণ্ঠ বলেন, ‘‘শুভেন্দুর প্রার্থী।’’
এর পরই ভিন্ন দিকে মোড় নেয় দু’পক্ষের কথোপকথন। নিত্যানন্দ পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘শুভেন্দুর প্রার্থী মানে কে স্যার বলুন?’’ তখন নিজেকে শিশির হিসাবে পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি উত্তর দেন, ‘‘সে আপনাকে দেখে নিতে হবে। আমি বলতে পারব না।’’ নিত্যানন্দ পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি প্রশ্ন করেন, ‘‘শুভেন্দু তো বিজেপি করেন। আপনিও তা হলে বিজেপি-কে দিতে বলছেন?’’ তখন শিশির পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি জবাব দেন, ‘‘আমি বলব, ভদ্রলোককে দেবেন। চোর-ডাকাতকে দেবেন না। তৃণমূল পার্টিতে যাঁরা আছেন সেটা আপনি আমার থেকে বেশি জানেন। আপনি বুদ্ধিমান লোক। চোর-ডাকাত চেনেন না? আমি খুব বিনীত ভাবে বলছি।’’
এর পর নিত্যানন্দ পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি পাল্টা খোঁচা দেন, ‘‘আপনি যদি সাংসদ পদ ছেড়ে নেমে পড়তেন, তা হলে স্যার, সব জিতে যেত। আর তৃণমূল মাঠে থাকত না।’’
নিজেকে শিশির হিসাবে পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘আমি কেন নামব? আপনি তো পাকা জিনিস। আপনি না করলে ছেড়ে দিন। অত বক্তৃতার কী আছে! না পারলে আপনার বাড়িতে কে যাবে? ভোটাধিকার নিজস্ব অধিকার।’’
নিত্যানন্দ পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি ফোনে পাল্টা খোঁচা দেন, ‘‘জয় বাংলা, জয় বাংলা। বুড়ো বয়সে ভীমরতি।’’
এ প্রসঙ্গে শিশিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ভয়েস রেকর্ডিংটা হায়দরাবাদে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দিতে বলুন। আমার ফোন করার কী আছে? তিনি নিজেই হয়তো ফোন করেছেন। আমি কাউকে যদি ভোট দিতে বলি সেটা কি অপরাধ নাকি?’’
কিছু দিন আগেই শিশিরের সাংসদ পদ খারিজের দাবিতে লোকসভার প্রিভিলেজ কমিটিতে আবেদন করেছে তৃণমূল। লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা এ নিয়ে প্রাথমিক তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন। এই আবহে শনিবার সকালে ওই অডিও টেপ প্রকাশ্যে আসতেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কারণ এখনও তৃণমূলের সাংসদ শিশির। কাঁথির জোড়াফুল শিবিরের নেতাদের বক্তব্য, বয়স্ক লোকের ওই কণ্ঠস্বর শিশিরেরই। তাঁদের দাবি, পুরভোটের আগের দিন কাঁথির বিভিন্ন ওয়ার্ডের দলের প্রথম সারির নেতাদের ধরে ধরে ফোন করে বিজেপি-কে সাহায্য করার আবেদন করেছেন খাতায়কলমে এখনও তৃণমূলে থাকা শিশির।
কাঁথির ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি-র প্রার্থী নির্মাল্য দাস। সেখানে তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরির ছেলে সুপ্রকাশ গিরি। তাঁর কথায়, ‘‘এরা জালিয়াত। সারদা-নারদ করে জালিয়াত পরিবার। শিশিরবাবু মানুষকে ফোন করছেন মানে এদের জমি হারিয়ে গিয়েছে। এক কালে যাঁর নামে ভোট হত, আজ তিনিই ভোট চাইছেন বাড়ি বাড়ি ফোন করে! এটাই লজ্জার।’’
বিজেপি যদিও এতে দোষের কিছু দেখছে না। বিজেপি-র কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুদাম পণ্ডিতের কথায়, ‘‘পুরসভা নির্বাচন অনেকাংশেই রাজনীতির ঊর্ধ্বে। এখানে দলীয় প্রার্থীর চেয়ে বেশি প্রাধান্য পান ভাল প্রার্থী। যে কেউ কাউকে ফোন করে তাঁর পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আবেদন জানাতে পারেন। এটা বেআইনি বিষয় নয়। অযথা শিশিরবাবুকে বদনাম করার জন্য অডিয়ো টেপ ছড়ানো হচ্ছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy