মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণের জন্য চাই জমি। সরকারি জমি যথেষ্ট নয়। তাই চাই রায়তি (ব্যক্তিগত মালিকানাধীন) জমিও। সেই জমির প্রশ্নে যাতে কোনও সমস্যা না হয় সে বিষয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিল প্রকল্পের জন্য গঠিত ‘পারচেজ কমিটি’। মঙ্গলবার মেদিনীপুরে জমি সংক্রান্ত প্রথম বৈঠকে বসে ওই কমিটি। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, জোর করে কারও জমি নেওয়া হবে না। রায়তি জমির মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের সম্মতি আদায় করবে প্রশাসন। সেই সম্মতির ভিত্তিতে সরকার নির্ধারিত মূল্যে জমি কেনা হবে। সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া জানালেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু হবে মাস্টার প্ল্যানের কাজ।
প্রশাসন সূত্রের খবর, মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণের ক্ষেত্রে এ দিনের বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের এই প্রকল্প বাস্তবে রূপ দিতে গেলে চাই জমি। বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন জমি আন্দোলন করে উঠে আসা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পরই নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জোর করে কারও জমি নেওয়া হবে না। কিন্তু সরকারি জমি পর্যাপ্ত নয়। সুতরাং চাই রায়তি জমিও। এ দিনের বৈঠকে ঠিক হয়েছে সরকারের বিভিন্ন দফতরের নিয়ন্ত্রণে থাকা জমি প্রথমে সেচ দফতরকে হস্তান্তর করা হবে। কারণ, ওই দফতরের তত্ত্বাবধানেই গড়ে উঠছে মাস্টার প্ল্যান। এর পর যে রায়তি জমি লাগবে সে ক্ষেত্রে জমি মালিকদের সম্মতিই হবে প্রধান ভিত্তি। জোর তো করা হবেই না, বরং আলোচনার মাধ্যমে সম্মতি আদায় করে সরকারি মূল্যে কেনা হবে সেই জমি। এ দিন বৈঠকের পর জেলা শাসক খুরশিদ আলি কাদেরি বলেন, ‘‘ঘাটালকে বন্যার হাত থেকে বাঁচাতে মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন মাস্টার প্ল্যানের দ্রুত রূপায়ণ। সব প্রক্রিয়া চলছে। সরকারি জমি রয়েছে। তবে রায়তি জমিও কিনতে হবে। পারচেজ কমিটির বৈঠক হয়েছে। নিয়ম মেনে সব পদক্ষেপ করা হবে।’’
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি চন্দ্রেশ্বর খাল নতুন করে খননের আগেই তার প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছিলেন গ্রামবাসীরা। ‘চন্দ্রেশ্বর নদী খনন প্রতিবাদ কমিটি’ তৈরি করে প্রতিবাদে নেমেছে তারা। এই খাল খনন প্রস্তাবিত ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের অন্তর্ভুক্ত। চন্দ্রেশ্বর খালটি দাসপুরের গুড়লির কাছে শিলাবতী নদীর সঙ্গে মেশানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন জমি। প্রক্রিয়া শুরু না হলেও সব দিক বাঁচিয়ে অর্থাৎ বসতি এলাকা বাদ রেখে জমি নেওয়ার ভাবনাচিন্তা করেছে প্রশাসন। তবে আন্দোলনকারীদের বক্তব্য ছিল, নদীর সঙ্গে সংযোগ হলেই বর্ষায় ডুবে যাবে গোটা এলাকা।ফলে ত্রিফসলি জমির ফসল ঘরে ঢুকবে না। সেখানেই আপত্তি আন্দোলনকারীদের। হয়তো নেহাতই ঘটনাচক্র। তবে এই পরিপ্রেক্ষিতেই আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এ দিনের বৈঠক। কারণ, প্রশাসনের একাংশের মতে, এ দিনের বৈঠকের ফলে মাস্টার প্ল্যান প্রকল্প আরও এক ধাপ এগাল। সেচ দফতরের দাবি, খাল খনন হলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বর্ষায় কোনও প্রভাব পড়বে না।
এ দিনের ওই বৈঠকে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান প্রকল্পটি রুপায়ণের জন্য কোন কোন এলাকায় কত পরিমাণ জমি জরুরি, তা নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে সরকারি জমি হস্তান্তর ও সম্মতির ভিত্তি জমি কেনার বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেছেন আধিকারিকেরা। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, চন্দ্রশ্বর খান খননের জন্য (দাসপুর এলাকায় যে সব জমির উপর দিয়ে খাল কাটা হবে) জমি এবং ঘাটাল শহরে শিলাবতীর পশ্চিম পাড়ে চার কিলোমিটার মতো নদী থেকে উঁচু পাঁচিল তৈরি হবে। তার জন্য সেখানে বেশ কিছু জমি কিনবে সরকার।
লোকসভা ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান একাই বাস্তবায়িত করবে রাজ্য। ভোট মিটতেই বল গড়াতে শুরু করেছে। এ বার এসেছে জমির প্রশ্ন। সেচমন্ত্রী আহ্বান জানিয়েছেন ঘাটালবাসীকে। শুনিয়েছেন আশার বাণীও। তাঁর কথায়, ‘‘ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মাস্টার প্ল্যানের কাজ শুরু হয়ে যাবে। ঘাটালবাসীর কাছে আবেদন, ঘাটালকে বন্যার হাত থেকে বাঁচাতে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্পের বাস্তবায়নের জন্য আপনারা এগিয়ে আসুন। সাহায্য করুন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy