চালু হয়নি কাঁথি-৩ ব্লকের জল প্রকল্প। নিজস্ব চিত্র
গ্রাম বাংলায় বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সরবরাহ করতে 'জল স্বপ্ন প্রকল্প' চালু করেছে তৃণমূল পরিচালিত বর্তমান রাজ্য সরকার। জেলার বহু তৃণমূল নেতৃত্বকে একাধিকবার দাবি করতে শোনা গিয়েছে যে, ওই প্রকল্পে বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পরিষেবা পৌঁছে গিয়েছে। তবুও পঞ্চায়েত ভোটের আগে জেলার উপকূলবর্তী এলাকায় শাসকদলের চিন্তার কারণ হয়েছে পানীয় জলের সমস্যা।
জেলায় বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সরবরাহের জন্য সবচেয়ে বড় প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছে নন্দীগ্রামে। নন্দীগ্রাম-১, ২, চণ্ডীপুর ও নন্দকুমার ব্লক এলাকায় বাড়ি বাড়ি নলবাহিত জল সরবরাহের জন্য প্রায় ৯০০ কোটি টাকার জল প্রকল্পের কাজ চলছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায় রাজ্য সরকারের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর ওই জল প্রকল্পের নির্মাণ কাজ চালাচ্ছে। রূপনারায়ণ নদ থেকে জল তুলে পরিস্রুত করে পাইপলাইনের মাধ্যমে ওই চারটি ব্লক এলাকায় সরবরাহ করা হবে। নন্দকুমারের মীরপুর গ্রামের কাছে পাম্প হাউস নির্মাণ কাজ ও জল পরিশ্রুত করার জন্য নন্দকুমারের বনভেড়ার ওয়াটার ট্রিটমেন্টূ প্ল্যাট গড়ার কাজ এখনও চলছে। ২০১৯ সালে কাজ শুরু হয়েছিল। ২০২২ সালের মার্চ মাসের মধ্য ওই কাজ সম্পূর্ণ করার লক্ষ্য মাত্রা নেওয়া হয়। তবে আজও তা সম্পূর্ণ হয়নি। এখন পাম্পহাউস ও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণের কাজ ছাড়াও ওই চার ব্লকে পাইপলাইন বসানোর কাজ চলছে।
প্রতিটি ব্লকে পানীয় জল পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের উদ্যোগে জল সরবরাহ প্রকল্প চালু রয়েছে। তবে প্রায় সব জায়গাতেই জল চাহিদার তুলনায় কম সরবারহ করা হয় বলে অভিযোগ। আপাতত জেলায় ২৭০টি জল সরবরাহ প্রকল্প চালু রয়েছে। কিন্তু তার পরেও অধিকাংশ জায়গায় কয়েক হাজার সাব মার্সিবল পাম্প বসিয়ে ভূগর্ভস্থ জল তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ। পানীয় জল সমস্যা সমাধানে তৃণমূল ব্যর্থ বলেই দাবি করেছে বিজেপি। এ প্রসঙ্গে বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি অসীম মিশ্র বলছেন, "ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহারের উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। কেন্দ্রীয় সরকার জল জীবন মিশন প্রকল্প চালু করেছে। নাম বদল করে সেই প্রকল্প এ রাজ্যে চললেও পূর্ব মেদিনীপুরে তার বাস্তবায়নের হার অত্যন্ত কম।’’
পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি শহর ছাড়া উপকূলবর্তী কাঁথি-১, ৩ এবং দেশপ্রাণ ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় পানীয় জলের সঙ্কট অব্যাহত। একটু গরম পড়তেই মেলে না পানীয় জল। সম্প্রতি জেলায় ‘নব জোয়ার’ কর্মসূচিতে জেলায় আসেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি যাওয়ার পর পানীয় জলের সমস্যা সমাধানের দাবিতে কাঁথি-৩ ব্লকের দুরমুঠে ১১৬ বি জাতীয় সড়কে অবরোধ করেছিলেন এলাকাবাসী। অভিযোগ, প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে ভূগর্ভস্থ জলের আকাল পড়ে। এর ফলে দুরমুঠ, কুসুমপুর এবং মারিশদা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় পানীয় জলের নলকূপ গুলি অকেজো হয়ে যায়। পানীয় জলের সমস্যা প্রসঙ্গে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএমের প্রার্থী ঝাড়েশ্বর বেরা বলছেন, "পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে বিরাট এলাকা জুড়ে। বছরের পর বছর ধরে এই সমস্যা চলছে। কিন্তু শাসকদলের নেতারা শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান।’’ যদিও স্থানীয় প্রশাসন জানাচ্ছে, সম্প্রতি কাঁথি -১ ব্লকের সাবাজপুটে নোনা জলকে পরিষ্কার পানীয় জলের রূপান্তরিত করার একটি প্রকল্প চালু হয়েছে। আর জেলা জুড়ে ভূগর্ভস্থ জলের উপর নির্ভরতা কমাতে নতুন করে সাব মার্সিবল পাম্প বসানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদ।
জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, জেলার ২২৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় 'জল স্বপ্ন প্রকল্পে' ৪০০টি কাছাকাছি জল সরবরাহ প্রকল্প গড়ে তোলা হবে। প্রতিটি প্রকল্পের জন্য কোটি টাকারও বেশি খরচ করা হবে। ইতিমধ্যে জেলার ৬০ শতাংশের কাছাকাছি প্রকল্প সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে বলে দাবি। এ ব্যাপারে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম দাস বলছেন, "জল স্বপ্ন প্রকল্পে বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে যাবে। এতে জলের অপচয় অনেকটাই কমবে।’’ (চলবে)
(তথ্য: কেশব মান্না, আনন্দ মণ্ডল)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy