Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

লাইভের গুঁতো বুড়ো হাড়েও

দলের এক সূত্রে খবর, এই পর্বে নেতা, বিধায়কদের পাড়া- বৈঠক করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাড়া- বৈঠকের পর্ব ফেসবুকে ‘লাইভ’ করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৯ ০০:৫৭
Share: Save:

তৃণমূলের অনেক প্রবীণ নেতা হোয়াটস অ্যাপ ও ফেসবুকের পার্থক্যটুকুও এখনও বোঝেন না। কিন্তু দলের নির্দেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকাতে হবে। তাই আতান্তরে পড়েছেন তাঁরা।

তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনুমান, এই পরিকল্পনার পিছনে রয়েছেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। বিধায়ক ও তৃণমূল নেতাদের জনসংযোগ ঠিকঠাক হচ্ছে কি না সেটা বোঝার চেষ্টা করছেন প্রশান্তের সংস্থার লোকজন। প্রথম পর্বে নেতা, বিধায়কদের নির্দেশ দেওয়া ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির ছবি তুলে নির্দিষ্ট হোয়াটস অ্যাপ নম্বরে পাঠাতে হবে। দলের এক সূত্রে খবর, বিধায়কদের একাংশের এতদিন হোয়াটস অ্যাপ ছিলই না। ওই নির্দেশের পরে তাঁরা সেটি খোলেন। জনসংযোগের প্রথম পর্ব শেষ হতে না হতেই দ্বিতীয় পর্বের নির্দেশিকা পাঠিয়ে দিয়েছে ‘টিম প্রশান্ত’। দলের এক সূত্রে খবর, এই পর্বে নেতা, বিধায়কদের পাড়া- বৈঠক করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাড়া- বৈঠকের পর্ব ফেসবুকে ‘লাইভ’ করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

তৃণমূলের এক জেলা নেতা জানালেন, দিনকয়েক আগে তিনি জেলারই এক প্রবীণ বিধায়ককে ফোন করেছিলেন। তখন ওই বিধায়ক ফেসবুক খুলেছেন কি না জানতে চাইলে সেই বিধায়কের জবাব ছিল, ‘‘যে নম্বরটায় ফোন করেছো, এতেই ওটা (ফেসবুক) আছে! ক’দিন আগেই খুলে ফেলেছি!’’ তখন ওই বিধায়ককে তিনি বোঝান, ‘‘আরে, ফোন নম্বরে যেটা খুলেছেন, সেটা তো হোয়াটস অ্যাপ। আমি ফেসবুকের কথা বলছি।’’ তারপর প্রবীণ বিধায়কের সরল জিজ্ঞাসা ছিল, ‘‘মানে? সেটা আবার কী?’’

জেলার অনেক বিধায়কই দলের নির্দেশের পরে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলতে শুরু করেছেন। যেমন দীনেন রায়। খড়্গপুরের (গ্রামীণ) তৃণমূল বিধায়ক দীনেনের দিন কয়েক আগে ফেসবুকে অভিষেক হয়েছে। ‘টিম- প্রশান্ত’র নির্দেশের পরেই ফেসবুক খুলতে হল? সদুত্তর এড়িয়ে দীনেন বলেন, ‘‘অনেকেই দেখছি ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলছেন। তাই খুলেছি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আজকের দিনে সোশ্যাল মিডিয়ার একটা ভূমিকা তো আছেই।’’ ইতিমধ্যেই ফেসবুকে ‘দিদিকে বলো’র কর্মসূচির ছবি পোস্ট করেছেন দীনেন। ওই কর্মসূচির কিছু অংশ ফেসবুকে ‘লাইভ’ও করেছেন।

তবে পশ্চিম মেদিনীপুরের কয়েকজন তৃণমূল বিধায়ক ও জেলা নেতা এখনও সোশ্যাল মিডিয়ায় সেভাবে সক্রিয় নন। নারায়ণগড়ের তৃণমূল বিধায়ক প্রদ্যোৎ ঘোষের এখনও ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট নেই। প্রদ্যোতের স্বীকারোক্তি, ‘‘তবে হোয়াটস অ্যাপ আছে। ফেসবুকটা খুলে নেবো।’’

জেলা তৃণমূলের এক নেতা জানান, প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা থেকে তৃণমূলের নেতা, বিধায়কদের কাছে প্রায়ই ফোন আসছে। যাঁরা ফোন করছেন, তাঁরা তাঁদের নাম- পরিচয় জানাচ্ছেন না। শুধু বলছেন, ‘পিকে’র অফিস থেকে বলছি।’ দলের ওই সূত্র মানছে, নেতা, বিধায়কেরা ঠিকঠাক জনসংযোগের কাজ করছেন কি না তা জানতে শুধু তাঁদের পাঠানো ছবি, ভিডিয়োর উপরেই ভরসা করছে না ‘টিম- প্রশান্ত’। নেতা-বিধায়কেরা ঠিক কতক্ষণ এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন, ‘লাইভ’ থেকে সেটাই বুঝতে চাইছেন তাঁরা। নেতা, বিধায়কদের সঙ্গে এলাকার মানুষের সম্পর্ক কেমন, লাইভ ও ছবি দেখে সেটাও বুঝতে চাইছেন প্রশান্তের সংস্থার প্রতিনিধিরা। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলছেন, ‘‘ফেসবুকে মত আদানপ্রদানের সুযোগ আছে। তাই নেতা, বিধায়কদের ফেসবুকে সক্রিয় থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’’

নিজের স্মার্টফোন নাড়াচাড়া করতে করতে জেলার তৃণমূলের এক প্রবীণ বিধায়ক বলছিলেন, ‘‘এই ফোনটাই এখনও ঠিক মতো ব্যবহার করতে শিখলাম না। মাঝেমধ্যে একজনকে কল করতে গিয়ে অন্য জনের কাছে ফোন চলে যায়! এখন আবার ফেসবুক!’’

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Prashant Kishor Didi Ke Bolo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy