জেলা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ জানাতে যাচ্ছেন কংগ্রেস বিধায়ক জ্ঞান সিংহ সোহন পাল।
রেলশহরে পুরবোর্ড গঠনে মরিয়া তৃণমূল বিরোধীদের ভাঙাতে হুমকি আর ভয় দেখানো চালিয়েই যাচ্ছে। রবিবার গভীর রাতে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বামুনপাড়া কংগ্রেসের এক নব-নির্বাচিত কাউন্সিলরের বাড়িতে ঢুকে শূন্যে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে। ওই কাউন্সিলরের নাম অপর্ণা ঘোষ। দুষ্কৃতীরা হানার সময় বাড়িতে একা ছিলেন অপর্ণাদেবীর ননদ গৌরী ঘোষ। অভিযোগ, অপর্ণাদেবী ও তাঁর স্বামী কংগ্রেস নেতা মধু ঘোষকে না পেয়ে দরজা ভাঙার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা, জানলার কাচও ভাঙে। মধুবাবুকে তৃণমূলে যোগ দিতে হবে বলে দুষ্কৃতীরা হুমকি দেয়।
সোমবার দুপুরে জেলা মহিলা কংগ্রেস নেত্রী হেমা চৌবের সঙ্গে গিয়ে গৌরীদেবী থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন। পরপর দলীয় কাউন্সিলরদের বাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠায় এ দিনই বর্ষীয়ান কংগ্রেস বিধায়ক ‘রেলশহরের চাচা’ জ্ঞানসিংহ সোহনপাল পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের সঙ্গে দেখা করেন। পুলিশ সুপার অবশ্য এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, “আমি জেলার পুলিশ সুপার। যে কেউ আমার সঙ্গে দেখা করতে আসতে পারেন। অফিসে এসে আমাকে কে কী বললেন, আমিই বা কী বললাম, তা সংবাদমাধ্যমকে জানাতে আমি বাধ্য নই।”
কংগ্রেস সূত্রে খবর, গত কয়েকদিনের খড়্গপুরের পরিস্থিতির কথা জানিয়ে দলের কাউন্সিলরদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি পুলিশ সুপারের কাছে জানান চাচা। প্রার্থীদের পরিবারের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। ৪ জুন কাউন্সিলররা যাতে নির্বিঘ্নে পুরসভায় উপস্থিত হতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করার আর্জিও জানানো হয়। পুলিশের এক সূত্রে খবর, প্রবীণ বিধায়ককে পুলিশ সুপার আশ্বাস দিয়েছেন, “খড়্গপুরে কিছু ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি দেখছি। পুলিশ যথাযথ পদক্ষেপই করছে।”
এ দিন সকালে চাচার নেতৃত্বে কংগ্রেসের এক প্রতিনিধিদল মহকুমাশাসকের সঙ্গেও দেখা করেন। দলে ছিলেন দলের জেলা সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া, শহর সভাপতি অমল দাস। কংগ্রেস নেতৃত্ব শহরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পুরবোর্ড গঠনের আগে পর্যন্ত শহরের সার্বিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি জানান। জেলা ও শহর কমিটির পক্ষ থেকে লিখিত আবেদনও মহকুমাশাসকের কাছে করা হয়। দলের জেলা সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া বলেন, “খড়্গপুর শহরের আইনশৃঙ্খলা একেবারে ভেঙে পড়েছে। প্রশাসনিক উদাসীনতায় দুষ্কৃতীরা শহরে রাজ করছে। আমাদের কাউন্সিলর ও তাঁদের পরিবার এখন আক্রান্ত। আমাদের বিধায়করা বিধানসভায় ওয়াক-আউট করেছে। চাচার নেতৃত্বে এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’ মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “আমার কাছে বিধায়ক জ্ঞানসিংহ সোহনপাল-সহ কংগ্রেস প্রতিনিধিরা এসেছিলেন। ওঁরা সার্বিকভাবে শহরের সুষ্ঠু নিরাপত্তা ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে। আমি পুলিশকে শহরের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার কথা বলেছি।’’
খড়্গপুর পুরসভার ফল এ বার ত্রিশঙ্কু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কংগ্রেস-সিপিএম জোট বোর্ড গড়বে বলে ইঙ্গিত মিললেও পরিস্থিতি ঘুরে যায় গত ২৪ মে থেকে। ওই দিন খরিদায় ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর সুনিতা গুপ্তর স্বামী রাজুকে লক্ষ করে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এরপরই গর্জে ওঠে শহর। শাসক-দুষ্কৃতী-পুলিশের অশুভ আঁতাঁতের প্রতিবাদে ২৬ মে বাম-বিজেপি-কংগ্রেস ঐক্যবদ্ধ হয়ে বন্ধ ডাকে। ২৮ মে সুনিতা গুপ্ত-সহ চার বিজেপি কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেন। এরপর থেকে শুরু হয় কংগ্রেস কাউন্সিলরদের বাড়িতে হামলা। রবিবার দুপুরে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের নিমপুরায় হামলা চলে কংগ্রেস কাউন্সিলর ভেঙ্কট রামনার বাড়িতে। বাড়িতে ছিলেন না রামনা। তবে তাঁর স্ত্রীর কাছে দুষ্কৃতীরা রামনাকে তৃণমূল যোগ দিতে হবে বলে জানিয়ে যায়। চার রাউন্ড গুলি চালানোরও অভিযোগ ওঠে। কেউ হতাহত হয়নি। এ বার গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে শহরের একসময়ের ত্রাস রেলমাফিয়া বাসব রামবাবুর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। পুলিশ অবশ্য এখনও কাউকে গ্রেফতার করেনি।
ওই ঘটনার রেশ না কাটতেই রাতেই রবিবার রাতে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর অপর্ণাদেবীর বাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠে। তবে ওই কাউন্সিলর ও তাঁর স্বামী বাড়িতে ছিলেন না। অপর্ণাদেবীর ননদ গৌরীদেবীর অভিযোগ, রাত একটা থেকে আধঘন্টা একদল দুষ্কৃতী অকথ্য গালমন্দ করে মধুবাবুকে ডাকতে থাকে। বাড়ির দরজা ভাঙার চেষ্টা করে। সাড়া না পেয়ে জানলার কাচ ভেঙে দেয়। তারপর শূন্যে গুলি ছোড়ে। ইন্দার বামুনপাড়া ঘটনাস্থলে এ দিন গিয়েছিলেন টাউন থানার আইসি দীপক সরকার। আগের দু’টি ঘটনায় গুলির চলার প্রমাণ মেলেনি বললেও এ বার কিন্তু গুলি চলার শব্দ এলাকাবাসী পেয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
একের পর এক হামলার ঘটনায় খড়্গপুর এখন সন্ত্রস্ত। সোমবার বিকেলে শহরে প্রতিবাদ মিছিল করে বামেরা। বাসস্ট্যান্ড থেকে শহরের গোলবাজার পর্যন্ত মিছিলের আগে পথসভায় ছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। সূর্যবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন পুরসভাগুলি বিরোধীশূন্য করতে হবে। তাই মানুষের রায়কে পদদলিত করে শাসকদল ছলে-বলে-কৌশলে এই পুরসভা দখল করতে চাইছে।” সন্ধেয় রাম মন্দির থেকে বিজেপিও মিছিল করে। শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবিতে ওই মিছিলে বিজেপির মজদুর মোর্চা-সহ বিভিন্ন শাখা সংগঠন যোগ দিয়েছিল। ছিলেন বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়, শহর সভাপতি প্রেমচাঁদ ঝা, মজদুর মোর্চার জেলা সভানেত্রী রিনা সিংহ প্রমুখ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy