—নিজস্ব চিত্র।
জলন্ত হুলা শরীরে গেঁথে হাতির মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় ঝাড়গ্রাম। স্বাধীনতা দিবসের দিনে পিঠে জ্বলন্ত লোহার রড বিঁধে থাকা হাতিটির সেই যন্ত্রণাকাতর চিৎকার ভুলতেই পারছেন না স্থানীয় মানুষেরা। তাঁদের প্রশ্ন, হাতি তাড়াতে গিয়ে কী ভাবে এত নিষ্ঠুর আচরণ করতে পারলেন হুলা পার্টির লোকেরা? যদিও বন দফতরের দাবি, হুলা পার্টির কেউ ওই জ্বলন্ত লোহার রড ছোড়েনি। রড ছোড়া হয়েছিল জনতার ভিড় থেকে।
বৃহস্পতিবার ভোরে ঝাড়গ্রাম গ্রামীণ এলাকার ধরমপুর হয়ে হাতির দলটি ঢুকে পড়ে ঝাড়গ্রাম শহরে। প্রথমে দলে দু’টি শাবক-সহ মোট পাঁচটি হাতি ছিল। পরে দলের একটি দাঁতাল হাতি আলাদা হয়ে বিদ্যাসাগর পল্লি এলাকায় চলে আসে। সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে কাজে যাওয়ার সময় হাতির দলের সামনে পড়ে যান অনুপ মল্লিক (৫৪)। দাঁতাল হাতিটি অনুপকে শুঁড়ে তুলে আছাড় মারে। তাঁকে উদ্ধার করে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বাকি চারটি হাতি নতুন জেলা কালেক্টরেটের পাশে প্রাচীর ঘেরা ঝোপঝাড়ে ঢুকে পড়ে। দুপুরে ঝাড়গ্রাম শহর লাগোয়া ধরমপুরের শাল জঙ্গলে দাঁতাল হাতিটিকে বন দফতর ঘুমপাড়ানি গুলি করে। তারপর জোয়ালভাঙার জঙ্গলে হাতিটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সকালে শাবক-সহ যে চারটি হাতি নতুন জেলা কালেক্টরেটের পাশে ঝোপ-জঙ্গলে ঢুকে পড়েছিল, তারাও সেখান থেকে সরেনি।
এ দিকে, হাতি আসার খবর পেয়ে লোকজন ভিড় জমান। দিনভর মানুষজন কমেনি, উল্টে বেড়েছে। বিকেলের পর থেকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। হুলা পার্টির দল হুলা জ্বালিয়ে হাতিকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করে। তাতে নয়া কালেক্টরেটের পাশের ঝোপঝাড়ে আশ্রয় নেওয়া চারটি হাতির মধ্যে একটি তাড়া করে হুলা পার্টির লোকজনকে। ওই সময় হাতিকে হুলা ছুডে মারা হয়। কিন্তু তাতে হাতিটির শরীরে লাগেনি। কিছু ক্ষণের মধ্যে একটি হাতির পিঠের জ্বলন্ত হুলার রড গেঁথে যায়। চিৎকার শুরু করে হাতিটি। পরে বন দফতরের আধিকারিকেরা এসে হাতিটিকে অজ্ঞান (ট্র্যাঙ্কুলাইজ়) করে। এর পর শুক্রবার ভোরে হাতিটিকে ঝাড়গ্রাম জুলজিক্যাল পার্কে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসাও করা হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। দুপুর নাগাদ মৃত্যু হয় হাতিটির। অন্য দিকে, বাকি তিনটি হাতি ঘটনার দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবারই রাতের দিকে রাজ কলেজের প্রাচীর ভেঙে ভিতরে ঢুকে যায়। তবে সেখানে বিশেষ কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়েরা। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, হাতি তাড়ানোর নামে কেন হাতিকে আক্রমণ করা হবে। আর হাতি জখম হওয়ার পর পরেই কেন চিকিৎসা শুরু হয়নি? ঘটনা দিনই রাজ কলেজের গেটের বাইরে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন এলাকাবাসীরা। তার পর রাজ কলেজ চত্বর থেকে হুলাপার্টির লোকজনকে বার করে বেধড়ক মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। হাতিপ্রেমীদের প্রশ্ন, কেন বিকেল থেকে হুলা দিয়ে হাতিকে উত্ত্যক্ত করা হল? মানুষজনকে সরিয়ে সন্ধ্যা হলেই হুলাপার্টি দিয়ে হাতিকে জঙ্গলে পাঠানো যেত। অভিযোগ, হাতিকে সরানোর ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিকল্পনার অভাবের জেরেই হাতির মৃত্যু হয়েছে। গ্রামীণ এলাকার মানুষজনের অভিযোগ, গ্রামে তো হাতি প্রায় ঢুকে সব তছনছ করে দেয়, গ্রামে কোনও দিন হাতিকে এ ভাবে মারা হয়নি। শহরের ক্ষেত্রে কেন এ ভাবে হাতিটিকে মারা হল?
ঝাড়গ্রামের ডিএফও উমর ইমাম বলেন, ‘‘শুক্রবার দুপুরে হাতিটি মারা গিয়েছে। আমরা তদন্ত করে দেখছি, জলন্ত হুলা কে বা কারা হাতির শরীর লক্ষ্য করে ছুড়েছিল? আমরা সব দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত শুরু করেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy