Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

রেললাইনে বসে মোবাইলে গেম, ট্রেনের ধাক্কায় মৃত ২

স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, মোবাইলের কয়েকটি জনপ্রিয় ‘ফায়ারিং গেমে’ (পাবজি, ফ্রি ফায়ার) আসক্ত ছিলেন ওই দুই কিশোর।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামনগর শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২০ ০০:২৯
Share: Save:

কানে হেডফোন। রেললাইনে বসে নজর হাতের স্মার্টফোনে। তাই ট্রেনের শব্দ শুনতে পায়নি দু’জনে। শেষে এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হল দুই কিশোরের।

বুধবার নববর্ষের সন্ধ্যায় রামনগর-১ ব্লকের বিরামপুরে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। মৃত দুই কিশোর অপূর্ব দাস (১৯) এবং সুব্রত পাত্র (১৯) গোবরা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরামপুর এবং ফতেপুর গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, মোবাইলের কয়েকটি জনপ্রিয় ‘ফায়ারিং গেমে’ (পাবজি, ফ্রি ফায়ার) আসক্ত ছিলেন ওই দুই কিশোর। বুধবারও দু’জনে বাড়ির লাগোয়া রেললাইনের উপরে বসে ওই গেম খেলছিলেন। তাতে তাঁরা এতটাই মশগুল হয়ে গিয়েছিলেন যে, ওই রুটে আসা হাওড়াগামী কাণ্ডারী এক্সপ্রেসের শব্দ শুনতে পাননি। পুলিশ অবশ্য দু’জনের গেম খেলার বিষয়ে নির্দিষ্ট করে জানায়নি। তবে তারা সাফ জানিয়েছে, দু’জনেরই কানে হেডোফোন ছিল।

রেল সূত্রের খবর, বিরামপুরের একেবারে পাশ দিয়ে গিয়েছে দিঘা-হাওড়া রেললাইন। সন্ধ্যা সওয়া ৭টা নাগাদ সেই লাইনে যাচ্ছিল কাণ্ডারী এক্সপ্রেস। ধাক্কা লাগার পরে ট্রেনের চালক কিছুটা দূরে গিয়ে ট্রেন থামান। ততক্ষণে দুই বন্ধু ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছেন। দিঘা থানার জিআরপি সেখানে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরে তা দিঘা মোহনা থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে কাঁথির এসডিপিও অভিষেক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যে দুজন মারা গিয়েছেন, তাঁদের কানে হেডফোন লাগানো ছিল। তবে ট্রেন আসার সময় তাঁরা গেম খেলছিলেন, না অন্য অন্য কিছু করছিলেন, তা এখনও সঠিকভাবে জানা যায়নি।’’

স্থানীয় সূত্রের খবর, অপূর্ব এবং সুব্রত দুজনেই গরিব পরিবারের ছেলে। অপূর্বের বাবা দিনমজুরের কাজ করেন। আর্থিক কারণে উচ্চমাধ্যমিকের পর আর পড়াশোনা হয়নি অপূর্বের। একই রকম পরিস্থিতি সুব্রতরও। তাঁর বাবা গৌতম খাদ্য দফতরের গুদামে ঠিকা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। সুব্রত রামনগর কলেজে প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করতেন। পুলিশ যায় বলুক, স্থানীয়দের সাফ দাবি, রেললাইনের পাশে ইন্টারনেটের স্পিড ভাল থাকায় ওই দু’জনে সেখানে বসে গেম খেলছিলেন। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান বিশ্বমুকুল দে বলেন, ‘‘গেম খেলায় ওই দুই যুবক মগ্ন ছিলেন। তাই ট্রেনের আওয়াজ তাঁদের কানে পৌঁছয়নি।’’

অপূর্ব এবং সুব্রত যে ধরনের গেম খেলছিলেন, সাম্প্রতিক কালে বহু যুবক সেই খেলায় আসক্ত হয়েছেন। কখনও অনলাইনে গেম খেলে অর্থ উপার্জন করা বা কখনও নেহাতই মজার জন্য ওই খেলা খেলতে গিয়ে অসুস্থ হয়েছেন অনেকে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এমন বহু খবর সামনে এসেছে। লাগাতার গেম খেলে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর উদাহরণও রয়েছে।

যুব সমাজের মোবাইল এবং ইন্টারনেটে গেম খেলার আসক্তি নিয়ে চিন্তিত মনোবিদেরাও। মনস্তত্ত্ব বিশেষজ্ঞ মোহিত রণদীপ বলেন, ‘‘মোবাইলের গেম এক ধরনের নেশা। অভিভাবকদের একাংশের জন্য ছোটবেলা থেকে ছেলেমেয়েরা মোবাইল এবং টিভির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। সেখান থেকে তাদের নজর ঘোরানোর সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে এভাবে বারবার কম বয়সী ছেলেমেয়েদের জীবন চলে যাচ্ছে।’’ মনস্তত্ত্ববিদের কথায়, ‘‘কম বয়সীদের জীবনে বিকালে মাঠে গিয়ে খেলার সময় কমে গিয়েছে। সেই সুযোগ পেলে ছেলেমেয়েদের মোবাইলের আসক্তি দূর করা যাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Train Accident PUBG Ramnagar Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy