সপরিবার পুলসাইবাবু। — নিজস্ব চিত্র।
ছুটির আনন্দ বদলে গেল বিষাদে!
সাতদিনের ছুটি নিয়ে খড়্গপুরের কর্মস্থল থেকে ওড়িশায় সপরিবার বাড়ি যাচ্ছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থা বিএসএনএল-এর আধিকারিক বাপুহরি পুলসাই মারাণ্ডি। মঙ্গলবার সকালে ঝাড়গ্রামের বালিভাসায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে গাড়ি উল্টে প্রাণ গেল বছর চল্লিশের বাপুহরি ও তাঁর সাড়ে তিন বছরের শিশুকন্যা তানিশার। বালিভাসা এলাকায় এর আগেও একাধিকবার দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এ দিন ঘটনার পরই প্রায় ঘণ্টা দেড়েক জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখে স্থানীয়রা। দীর্ঘক্ষণ যান চলাচল ব্যাহত হয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে। জাতীয় সড়কে অবরোধ করার জন্য দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বালিভাসায় যান নিয়ন্ত্রণের জন্য রাস্তার দু’দিকে ‘গার্ড-রেল’ দিয়ে রেখেছে পুলিশ। এ জন্যই বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
পুলিশ ও বিএসএনএল সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলসাইবাবুর আদিবাড়ি ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার জামদা থানার বান্ডুডুমা গ্রামে। তবে কর্মসূত্রে পরিবার নিয়ে খড়্গপুরের ইন্দায় দফতরের আবাসনে থাকতেন তিনি। বান্ডুডুমার বাড়িতে যাওয়ার জন্য সাতদিনের ছুটি নিয়েছিলেন পুলসাইবাবু। এ দিন সকালে নিজের গাড়িতে স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েকে নিয়ে খড়্গপুর থেকে রওনা দেন তিনি। পুলসাইবাবু নিজেই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, একের পর এক ঘটনার জেরে পাঁশকুড়া থানার পুলিশের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে যান জেলা পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক। তারপরেই পাঁশকুড়া থানার ওসির বদলি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঝাড়গ্রামের বালিভাসার কাছে একটি গাড়িকে ওভারটেক করার সময় উল্টোদিক থেকে একটি বড় লরি চলে আসায় সজোরে ব্রেক কষেন পুলসাইবাবু। মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি উল্টে যায়। ঘটনাস্থলেই ছোট তানিশার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে স্থানীয় মানিকপাড়া বিট হাউসের পুলিশ গিয়ে গুরুতর জখম অবস্থায় পুলসাইবাবু এবং তাঁর স্ত্রী ও ছেলেকে উদ্ধার করে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। পুলসাইবাবুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিত্সকরা।
পুলসাইবাবুর ৯ বছরের ছেলে আদর্শনারায়ণকে গুরুতর জখম অবস্থায় ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পুলসাইবাবুর স্ত্রী অর্চনাদেবীকে প্রাথমিক চিকিত্সার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে ছুটে আসেন বিএসএনএল-এর খড়্গপুর টেলিকম জেলার জিএম মীরা মারডি-সহ পদস্থ আধিকারিকরা। আসেন ঝাড়গ্রামের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অশ্বিনীকুমার মাঝিও। বান্ডুডুমা থেকে আসেন পুলসাইবাবুর পরিবারের লোকজন।
বিএসএনএল-এর খড়্গপুর টেলিকম জেলার জিএম মীরা মারডি বলেন, “ওড়িশায় গ্রামের বাড়িতে যাবেন বলে পুলসাইবাবু সাত দিনের ছুটি নিয়েছিলেন। কোথা থেকে কী যে হয়ে গেল!” অর্চনাদেবীকে অবশ্য স্বামীর মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি। এ দিন হাসপাতালের মেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে ছেলে আদর্শনারায়ণের পাশে বসেছিলেন অর্চনাদেবী। বারবার জানতে চাইছিলেন স্বামী ও মেয়ের কথা। অর্চনাদেবী বলেন, “সকাল সাড়ে সাতটায় ছুটির মেজাজে খড়্গপুর থেকে আমরা রওনা দিয়েছিলাম। কিন্তু বালিভাসার কাছে আচমকা সামনে একটি লরি চলে আসায় মুহূর্তে সব তালগোল পাকিয়ে গেল।”
পুলসাইবাবুর ভাই ফুলসাই মারাণ্ডি বলেন, “কাল রাতে দাদার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। বলেছিলেন দুপুরের মধ্যে বৌদি-ভাইপো-ভাইঝিদের নিয়ে বাড়িতে পৌঁছে যাবেন। কিন্তু মাঝপথে এমন বিপর্যয় ঘটবে কে জানত!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy