Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Threat call

খেলা, মেলায় দেদার খরচ, সৌমেন মহাপাত্রকে ফোন করে টাকা দাবি নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতার?

খেলা এবং মেলার আয়োজনে খরচ হয়েছে দেদার। বকেয়া মেটাতে তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রকে ‘হুমকি’ ফোন করার অভিযোগ।

TMC worker allegedly called Saumen Kumar Mahapatra and threatens him

সৌমেন মহাপাত্রকে হুমকি ফোনের অভিযোগ। — ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:১০
Share: Save:

খেলা এবং মেলার আয়োজনে খরচ হয়ে গিয়েছে দেদার। সেই বকেয়া মেটাতে তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রকে ‘হুমকি’ ফোন করার অভিযোগ উঠল নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের ভুতার মোড়ের জনা কয়েক তৃণমূল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। ভাইরাল হয়েছে সেই কথোপকথনের অডিয়ো (যদিও সেই অডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)। এমন ফোন যে তাঁর কাছে এসেছিল তা ঠারেঠোরে স্বীকার করে নিয়েছেন সৌমেন। অবশ্য কারা তাঁকে ফোন করেছিল তা তাঁর অজ্ঞাত বলে দাবি করেছেন।

নন্দীগ্রামের গড়চক্রবেড়িয়া পঞ্চায়েতের ভুতার মোড় সংলগ্ন এলাকায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উৎসবের আয়োজন করেছিল স্থানীয় একটি ক্লাব। ক্লাব সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই উৎসবের উদ্বোধনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল সৌমেনকে। কিন্তু সেখানে সৌমেন অনুপস্থিত ছিলেন বলেও মেলার আয়োজকদের একটি অংশের বক্তব্য। বদলে নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ উদ্বোধন করেন ওই অনুষ্ঠানের। ক্লাব সূত্রে জানা গিয়েছে, নন্দীগ্রামের জোড়াফুল শিবিরের তরফে মেলা কমিটির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ২ হাজার টাকা। আরও জানা গিয়েছে, মেলা শেষ হওয়ার পর কিছু টাকা দেনা হয় আয়োজকদের। এর পরই ক্ষুব্ধ ক্লাব সম্পাদক শেখ ওহিদুল-সহ স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা টাকা চেয়ে সৌমেনকে ‘হুমকি’ দিয়ে ফোন করেন বলে অভিযোগ।

অডিয়োয় প্রাথমিক ভাবে দু’জনের কণ্ঠ শোনা গিয়েছে। এক জন বলছেন, ‘‘স্যর বলছেন তো?’’ অন্য জন উত্তর দেন, ‘‘কে বলছেন?’’ পাল্টা বলা হয়, ‘‘আমরা ভুতারমোড় শান্তি উন্নয়ন সমিতি থেকে বলছি।’’ এর পর দ্বিতীয় কণ্ঠের ব্যক্তি উত্তর দেন, ‘‘বলুন।’’ প্রথম ব্যক্তি বলেন, ‘‘স্যর আপনাকে ইনভাইট (আমন্ত্রণ) করেছিলাম। আপনাকে প্রধান অতিথি হিসাবে, প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রেখেছিলাম। আপনি আমাদের সময় দেননি। আসেননি। কিন্তু আমরা আপনার কাছ থেকে আর্থিক ভাবে সাহায্য চেয়েছিলাম। আমরা তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী। সেই জায়গা থেকে আমরা আপনার কাছ থেকে টাকা চেয়েছিলাম। এখনও পর্যন্ত চলছে উদ্যোগ। কিন্তু আমরা দেনায় পড়ে গিয়েছি। আপনাদের কাছে একটা আশায় ছিলাম। আগে শুভেন্দু অধিকারী প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা দিত। কিন্তু এখনও দল থেকে আমরা একটা টাকাও পাইনি।’’

এর উত্তরে দ্বিতীয় ব্যক্তি কিছুটা রাগত স্বরে বলেন, ‘‘তোমরা এক কাজ করো, শুভেন্দু অধিকারীর দলেই চলে যাও।’’ তখন প্রথম ব্যক্তি ক্ষোভের সুরে পাল্টা বলেন, ‘‘ঠিক আছে, ঠিক আছে। ভুতারমোড় কী করতে পারে সেটা দেখানো হবে। ঠিক আছে।’’ এর পর ক্রমশই সুর চড়তে থাকে দু’পক্ষের। উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। দ্বিতীয় ব্যক্তি পাল্টা বলেন, ‘‘এই তোমরা চেঁচিও না। গরম দেখিও না। আমি চুরি করিনি। শোনো আমাকে গরম দেখাবে না। কী করবে ভুতারমোড়?’’

এর পর প্রথম ব্যক্তি এবং তাঁর সঙ্গীরা বলেন, ‘‘ভুতার মোড় কী করবে? ভুতারমোড় করেছে বলেই তো আপনারা আজ চেয়ারে বসে আছেন। ভুতার মোড়ের মানুষ সংগ্রাম করেছিল বলেই আপনারা এই সমস্ত জায়গাগুলো পেয়েছেন।’’

এই সময় দ্বিতীয় ব্যক্তি বলেন, ‘‘এই শোনো শোনো, একটা কথা বলি তোমাদের। আমার পাশে থাকতে হবে না। ওখানকার দায়িত্বে কুণালবাবু আছেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলো। আমার চুরি করা টাকা নেই যে আমি দেব। ওই জানোয়ার ছেলেটা কে যে আমাকে কল করেছিল? আমার চুরি করা টাকা নেই যে আমি টাকা দেব। তোমরা যে ব্যবহার করেছ, যে ছেলেটি বড় বড় কথা বলেছে সে কে? আমি এক পয়সাও দিতে পারব না।’’

প্রথম কণ্ঠ বলেন পাল্টা বলেন, ‘‘আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, দলের কাছ থেকে যে টাকাটা এসেছে সেটা আমরা নিইনি। যে দু’হাজার টাকা দিয়েছেন সেটা আমরা দিয়ে দেব। আপনি চা-পানি খেয়ে নেবেন।’’

এই ঘটনা নিয়ে সৌমেন বলেন, ‘‘যাঁরা আমাকে ফোন করেছে, তাঁরা কেন ফোন করেছেন, তাঁদের পরিচয় কী, তাঁরা কোন দলের, আমি কিছুই জানি না। আমি দলের নিচুতলার নেতৃত্বকে বলেছি, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার জন্য।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমি একটা কথা স্পষ্ট বলতে চাই, আমি কোনও শিল্পপতি নই। আমার কাছে টাকার পাহাড়ও নেই। তাই আমি কারও আশাপূরণ করতে পারব না। কেউ আমার কাছে টাকার আশা করলে সেটা পূরণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’’ যাঁর বিরুদ্ধে সৌমেনকে ফোন করার অভিযোগ সেই ওহিদুল অবশ্য এই বিতর্ক নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে তাঁকে ফোন করা হলে ওহিদুল জানান, তিনি ব্যস্ত।

এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে মাঠে নেমেছে বিজেপি। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘তৃণমূল টাকা তোলার দল। এখন এমন পরিস্থিতি যে দলের জেলা সভাপতিকেই ফোন করে তোলা আদায় করতে চাইছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Threat call Soumen Mahapatra TMC Nandigram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy