Advertisement
০৬ জুলাই ২০২৪
ইস্তফা তৃণমূলের ওয়ার্ড সভাপতিরও

ভোটে লড়তে না পেরে পক্ষ বদল, অস্বস্তি গেরুয়া শিবিরে

ভোটে লড়ার ছাড়পত্র দেয়নি দল। তাই এ বার পক্ষ বদল। পুরভোটের আগে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন ৭ জন বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মী। রবিবার খড়্গপুরের খরিদায় শহর তৃণমূলের কার্যালয়ে একটি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তাঁদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন শহর তৃণমূলের সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক অজিত মাইতিও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৩৮
Share: Save:

ভোটে লড়ার ছাড়পত্র দেয়নি দল। তাই এ বার পক্ষ বদল। পুরভোটের আগে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন ৭ জন বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মী। রবিবার খড়্গপুরের খরিদায় শহর তৃণমূলের কার্যালয়ে একটি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তাঁদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন শহর তৃণমূলের সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক অজিত মাইতিও। এ দিন তৃণমূলে যোগ দেন বিজেপির জেলা মজদুর মোর্চার সদস্য বজরং ভর্মা, শহর সাধারণ সম্পাদক তাপস সাহা, ওয়ার্ড সভাপতি বলবন্ত সিংহ-সহ ৭ জন। এ দিন শাসকদলের অস্বস্তি বাড়িয়ে তৃণমূল থেকে ইস্তফা দিয়েছেন তৃণমূলের ২৩ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি নরেন্দ্রনাথ দোলুই। এ বার ওই ওয়ার্ড থেকেই নরেন্দ্রনাথবাবুর বউমা সীমারানি দলুই বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন। যদিও নরেন্দ্রনাথ দলের প্রচারে বেরবেন বলে আশাবাদী তৃণমূলের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী।

প্রার্থী বাছাই নিয়ে শুরু থেকেই অস্বস্তিতে বিজেপি। দলের প্রার্থী তালিকা প্রত্যাহারের দাবিতে খড়্গপুরে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপির একাংশ কর্মী। বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ ও শহর সভাপতি প্রেমচাঁদ ঝার কুশপুতুলও পোড়ানো হয়। দলের ১৮ জন বিক্ষুব্ধ কর্মী নির্দল হিসেবে মনোনয়ন জমা দেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তাঁদের মধ্যে চার জন মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। প্রার্থী বাছাই নিয়ে খড়্গপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান জহরলাল পাল ও দলের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরীর কোন্দল মেটাতে হিমশিম খেতে হয়ে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বকেও।

খড়্গপুরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে সদ্য কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে আসা অরবিন্দ পাণ্ডের স্ত্রী মঞ্জু পাণ্ডেকে তৃণমূল প্রার্থী করায় দলের ওয়ার্ড সভাপতি নরেন্দ্রনাথ দোলুইয়ের ক্ষোভ ছিলই। যদিও তিনি দলের পাশেই থাকবেন বলে জানিয়েছিলেন। এ দিন ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণা করে নরেন্দ্রনাথবাবু বলেন, “দল ছাড়তে চেয়ে তৃণমূলের শহর সভাপতির কাছে ক্যুরিয়ারের মাধ্যমে ইস্তফা পত্র পাঠিয়ে দিয়েছি।’’ হঠাৎ ভোটের আগে দল ছাড়ার কারণ কী? তাঁর বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলের শহর নেতৃত্বকে আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে, এই দলে এখন আমার আর জায়গা নেই। তাই ওয়ার্ড কমিটির পাঠানো প্রার্থী তালিকাকে গুরুত্ব না দিয়ে সদ্য দলে আসা এক জনকে প্রার্থী করা হয়েছে।” যদিও অন্য দলে যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে নরেন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘এখনও অন্য কোনও দলে যোগ দেওয়ার কথা ভাবিনি। তবে আমার বউমা বিজেপির প্রার্থী হওয়ায় তাঁর সমর্থনে প্রচার করব।” এ বিষয়ে দেবাশিসবাবু বলেন, “নরেন্দ্রনাথবাবু অনেক দিন ধরেই দল থেকে সরে গিয়েছেন। তাই ওঁর সরে যাওয়ায় ভোটে কোনও প্রভাব পড়বে না।”

এ দিন তৃণমূলে যোগ দেওয়া ৭ জন বিজেপির নেতা-কর্মীই শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। এই ওয়ার্ড থেকেই ভোট লড়ছেন দেবাশিস চৌধুরী। তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, ওই ওয়ার্ড থেকে একসঙ্গে এত জন তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় দেবাশিসবাবুর জয়ের সম্ভাবনা আরও বাড়ল। এ দিন শহর তৃণমূল সভাপতি বলেন, “আমার ওয়ার্ডে বিজেপি কোনও স্থান পাবে না। তৃণমূলের পক্ষেই মানুষ রায় দেবে। তবে আমার ধারণা, কংগ্রেসের সঙ্গে লড়াই হতে পারে।”

দলের একাংশ নেতার প্রতি ক্ষোভ থেকেই যে ভোটের আগে দল ছেড়েছেন, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন দলত্যাগী বিজেপির নেতা-কর্মীরা। তৃণমূলে আসা বিজেপি র ১৭ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি বলবন্ত সিংহ বলেন, “প্রার্থী নির্বাচনের জন্য ওয়ার্ড থেকে ১১ জনের নাম প্রস্তাব করেছিলাম। সেই তালিকায় আমাদেরও কয়েকজনের নাম ছিল। কিন্তু দলের শহর, জেলা ও রাজ্য নেতৃত্ব আমাদের তালিকায় গুরুত্ব দেয়নি। তার পরিবর্তে সদ্য দলে আসাকে এক জনকে প্রার্থী করেছে। তাই দলের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে আমরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছি।” রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, ভোটের আগে দলের সাত জন নেতা-কর্মী শাসকদলে যোগ দেওয়ায় কিছুয়া অস্বস্তিতে বিজেপির জেলা নেতৃত্ব। এ প্রসঙ্গে বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “যাঁরা তৃণমূলে গিয়েছে তাঁদের আগে থেকে দলের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছিল। আমাদের শহর সভাপতিকে ওঁদের ওপর নজর রাখতেও বলা হয়েছিল। তাই ওঁদের দল বদল কোনও প্রভাব ফেলবে না।’’ প্রার্থী তালিকা নিয়ে অভিযোগ প্রসঙ্গে তুষারবাবু বলেন, ‘‘প্রার্থী তালিকার বিষয়টি শহর কমিটি দেখেছে। তাই শহর কমিটির কাছে এর ব্যাখ্যা চাইব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE