Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Murshidabad

‘ব্রেকআপ বাবা, ডাব বাবা, বোল্ডার বাবা!’ একই অঙ্গে নানা রূপ, কার্তিকের শেষে ভৈরবের দুয়ারে ভক্তের ঢল

কার্তিক মাসের শেষ দিনে বহরমপুর শহরে ১০০-র বেশি ভৈরব পুজো হয়। ২০৯০ সাল পর্যন্ত ‘বাবা’কে পুজো দেওয়ার বুকিং সেরে রেখেছেন ভক্তেরা।

Bhairav

নানা রূপে ভৈরব বাবা। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৪২
Share: Save:

ভাঙা প্রেম কিছুতেই জোড়া লাগছে না? ‘ব্রেকআপ বাবা’র কাছে মানত করতে হবে। অন্য দিকে, ‘ডাব বাবা’ শোনাচ্ছেন, কচি ডাবের সঙ্গে কারণবারি মিশিয়ে গলাধঃকরণ করলেই বিবদমান দু’পক্ষের অশান্তি থিতিয়ে পড়বে। ‘বোল্ডার বাবা’ আবার ব্যক্তিগত, পারিবারিক সমস্যার ঊর্দ্ধে উঠে সামাজিক সমস্যার সমাধানে প্রয়াসী। ভাঙন রোধ করতে গঙ্গাপারের বস্তিবাসীরা সেই ‘বাবা’কে প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাই এমন নাম। এর পর রয়েছেন ‘ইমার্জেন্সি বাবা’। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে নিস্তার পেতে তাঁর দ্বারস্থ হন ভক্তেরা। আসল কথা, বাবা একই। তাঁর রূপ অনেক। কার্তিক মাসের শেষ দিন বহরমপুর শহর জুড়ে ভৈরবের পুজোয় মেতে ওঠেন এলাকাবাসী। নানা রূপে তাঁকে পুজো দেওয়া হয়। এ ভাবেই রয়েছেন ‘কড়াই বাবা’, ‘গালি বাবা’, ‘তেঁতুল বাবা’। বাবাদের ভিড়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল ‘ভৈরব বাবা’ এবং ‘নিম বাবা’। ফি বছর ভৈরব উৎসবের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় প্রশাসনকে।

বহরমপুর শহরে ১০০-রও বেশি ভৈরব পুজো হয়। শহরের খাগড়া এলাকার ভৈরবতলায় ‘ভৈরব বাবা’ এবং সৈয়দাবাদের ‘নিম বাবা’কে ‘সবচেয়ে জাগ্রত’ বলে মনে করেন ভক্তেরা। জেলা ছাড়িয়ে দূরদূরান্ত থেকে ভক্তেরা ছুটে আসেন কার্তিক মাসের শেষ দিন। শনিবার তাই পুজো থেকে বিসর্জনের শোভাযাত্রা পর্যন্ত পুলিশি নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা বহরমপুরকে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে বড় পুজোগুলোর সামনে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ।

‘নিম বাবা’র পুজোর ইতিহাস বলতে গিয়ে পুজো উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, নিমগাছের তলায় ‘বাবা’র পুজো হয়। পুজোর সময়ে ‘বাবা’র হাতে নিমগাছের ডাল দিতে হয়। সে জন্য নাম ‘নিম বাবা’। পুজো কমিটির সম্পাদকের দাবি, ‘‘প্রতি বছর এক জন করে ভক্ত পুজোর সমস্ত খরচ বহন করেন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘২০৯০ সাল পর্যন্ত পুজো দেওয়ার বুকিং করে রেখেছেন ভক্তেরা।’’ অন্য দিকে, বহরমপুর শহরের খাগড়া এবং ইন্দ্রপ্রস্থ এলাকায় সুন্দর ভারতী স্কুলের দুই দিকে ‘প্রেম বাবা’ এবং ‘ডাব বাবা’র জনপ্রিয়তা বেশি। রয়েছেন ‘প্রেম বাবা’, ‘ব্রেকআপ বাবা’। প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ে গিয়েছেন। অথচ কী ভাবে তাঁকে মনের কথা বলবেন বুঝতে পারছেন না? মনোবাঞ্ছা নিয়ে ‘প্রেম বাবা’র কাছে ছুটে যান ভক্তেরা। আবার দীর্ঘ দিনের প্রেম হঠাৎ ভেঙে গিয়েছে। কিন্তু, ‘ওকে ছাড়া থাকব কী ভাবে?’— এমন উচাটন মন নিয়ে তরুণ-তরুণীরা ছুটে যান ‘ব্রেকআপ বাবা’র কাছে।

‘ভৈরব বাবা’র মূর্তির উচ্চতা ২০ থেকে ৩০ ফুট হয়। প্রায় ১৫০ বছর ধরে বহরমপুরে এই পুজো হচ্ছে। রাজকমল সরকার নামে এক পুজো উদ্যোক্তা বলেন, ‘‘সব মিলিয়ে এখন একশোর বেশি ভৈরব পুজো হয়। ‘ভৈরব বাবা’ ও ‘নিম বাবা’র জনপ্রিয়তা সর্বাধিক। তবে ইদানীং ‘ব্রেকআপ বাবা’ ও ‘ইমার্জেন্সি বাবা’র কাছেও মানুষের ভিড় বাড়ছে।’’ দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে ‘ব্রেকআপ বাবা’র কাছে মানত দিতে আসা কাপড়ের ব্যবসায়ী তরুণ নস্কর জানালেন, প্রায় দেড় বছর তিনি বিদেশে ছিলাম। ওই সুযোগে প্রেমিকার বাড়ির লোকজন তাঁকে অন্য এক জনের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিলেন। বন্ধুর কথা মতো তিনি বিদেশ বিভুঁইয়ে ‘ব্রেকআপ বাবা’র কাছে পুজোর মানত করেছিলেন। ওই ব্যবসায়ীর দাবি, ‘‘সাত দিনের মধ্যে প্রেমিকার বিয়ে ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়েছিলাম। পরে প্রেমিকার বাবা নিজে থেকে আমাকে তাঁর মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছেন। বাবা কতটা জাগ্রত হলে এটা সম্ভব এক বার ভেবে দেখুন তো!’’

একই অঙ্গে নানা রূপ ভৈরবের। নানা সমস্যায় জর্জরিত তরুণ-তরুণী থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ছুটে আসছেন তাঁর কাছে। এক পুজো উদ্যোক্তার কথায়, ‘‘অনেকে বুজরুকি বলবেন। কিন্তু ওই যে কথায় আছে, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহু দূর।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Murshidabad kartik maas puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy