চন্দ্রেশ্বর খাল খননে জমি মালিকদের সম্মতি আদায়ে দাসপুরের জনপ্রতিনিধি ও নেতৃত্বদের একাংশের ভূমিকা নিয়ে অনেক আগেই প্রশ্ন উঠেছিল তৃণমূলের অন্দরে। এ বার দলের অন্তর্তদন্তেও মান্যতা পেল সেই অভিযোগ। দাসপুরের বিধায়ক, দাসপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি-সহ সেখানার একাধিক ব্লক নেতৃত্ব যে মাঠে নেমে জমির সম্মতি আদায়ে নিষ্ক্রিয়— তা রাজ্য নেতৃত্বের কানেও পৌঁছেছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।
সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি ও তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ মানতে চাইছেন না। দাসপুরের বিধায়ক মমতা ভুঁইয়া বলছেন, “এখনও নামা হয়নি, এটা ঠিক। তবে এতদিন বিধানসভা চলছিল। ব্যস্ত ছিলাম। তাছাড়া এখনও তো তালিকা পাইনি। তালিকা হাতে এলেই নামব।” দাসপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকমার পাত্রের কথায়, “মাস্টার প্ল্যান কার্যকর করতেই হবে। সরকারি প্রকল্প। ইতিমধ্যেই প্রশাসনিক বৈঠক করা হয়েছে। কিন্তু জমি মালিকদের তালিকা এখনও দফতর থেকে দেওয়া হয়নি। তালিকা না পেলে কার বাড়ি যাব।”
দাসপুর এলাকায় চন্দ্রেশ্বর খালকে শিলাবতী নদীর সঙ্গে যোগ করতে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার খাল খনন করার প্রস্তাব রয়েছে। তার জন্য জমি জরুরি। ওই খালটি বৈকুন্ঠপুর থেকে কাটা শুরু হবে। দাসপুর ১ ব্লকের বৈকুন্ঠপুর, চাঁদপুর-সহ লাগোয়া গ্রামগুলির উপর দিয়ে গিয়ে গুড়লিতে শিলাবতীর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হবে খালটিকে। তার সংযোগস্থলে বসানো হবে স্লুইস গেট। এই সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার খাল খননের জন্য প্রায় ২৪০ একর জমি প্রয়োজন। তার মধ্যে কিছু সরকারি জমি রয়েছে। বাকি জমি কিনতে হবে। সেই নিয়েই শুরু হয়েছে টানাপড়েন। ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গিয়েছে চন্দ্রেশ্বর খাল খনন বিরোধী প্রতিবাদী কমিটি। ওই কমিটির দাবি, খাল খনন হলে নতুন করে প্লাবিত হবে দাসপুর। তাই জমি দেওয়া হবে না। গ্রামবাসীদের নিয়ে ওই কমিটি ইতিমধ্যেই একাধিক বার রাস্তায় নেমে আন্দোলনও করেছে। যদিও সদ্য গঠিত ওই কমিটির অনেক সদস্য অবশ্য পুরো বিষয়টি নিয়ে অবগত নয়। শুধুমাত্র নতুন করে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই ওই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন অনেকে।
এই পরিস্থিতিতে দাসপুরের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে সরকারের লক্ষ্য ও মাস্টার প্ল্যান নিয়ে বোঝানোর কাজ যাঁদের, সেই জনপ্রতিনিধিদের একাংশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। দাসপুরের রাশ দলের হাতে থাকলেও কী ভাবে প্রতিবাদী আন্দোলন কমিটি গজিয়ে উঠল, সেই প্রশ্নও তুলছেন অনেকে। এর মধ্যে পরিস্থিতি বুঝতে দলের তরফে অন্তর্তদন্তও হয়। তাতেই দাসপুরে ব্লক নেতৃত্বের একাংশের নিষ্ক্রিয়তা সামনে চলে এসেছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)