Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
State employees General strike

শিক্ষকদের হাজিরা কত? দেখলেন তৃণমূল নেতারা

এ দিনই ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল ছাত্র সংগঠন  ডিএসও। এই  ধর্মঘট ঘিরে বিক্ষিপ্ত অশান্তি হয়েছে মেদিনীপুর থেকে বেলদা।

অনুরোধ: স্কুলে না ঢোকার আর্জি ধর্মঘটীদের। ঘাটাল বিদ্যাসাগর উচ্চ বিদ্যালয়ে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

অনুরোধ: স্কুলে না ঢোকার আর্জি ধর্মঘটীদের। ঘাটাল বিদ্যাসাগর উচ্চ বিদ্যালয়ে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৩ ০৯:৪০
Share: Save:

শিক্ষকদের আন্দোলনে তাপ বাড়ালেন ছাত্ররা। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাজিরা দেখলেন তৃণমূল নেতারা।

শুক্রবার মহার্ঘ ভাতার দাবিতে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ডাকা ধর্মঘটে শামিল হলেন সরকার পোষিত বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার অনেক বিদ্যালয়েই এ দিন শিক্ষক-শিক্ষিকারা না আসায় পঠনপাঠন হয়নি। সংগ্রামী যৌথমঞ্চের ডাকা ধর্মঘটে এ দিন ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রাম ব্লকে সত্তর শতাংশ স্কুল বন্ধ ছিল। খোদ জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মু যে স্কুলে শিক্ষকতা করেন, সেই খড়িকা ভীমার্জুন মহাকুল এসসি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কেবল প্রধান শিক্ষক অনুপকুমার জানা উপস্থিত ছিলেন। আর কোনও শিক্ষক-শিক্ষিকা-শিক্ষাকর্মী এ দিন আসেননি। আসেনি কোনও পড়ুয়াও। অনুপ বলছেন, ‘‘ধর্মঘটীরা স্কুলের বাইরে ছিলেন। তাঁরা চলে যাওয়ার পর স্কুলে ঢুকে বিকাল পর্যন্ত ছিলাম। অফিশিয়াল কাজ করেছি। আর কেউ এদিন স্কুলে আসেননি।’’ স্কুলের শিক্ষক জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলছেন, ‘‘বিধানসভার অধিবেশনের জন্য কলকাতায় আছি। সেই কারণে জেলায় থাকতে পারিনি।’’

এ দিনই ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল ছাত্র সংগঠন ডিএসও। এই ধর্মঘট ঘিরে বিক্ষিপ্ত অশান্তি হয়েছে মেদিনীপুর থেকে বেলদা। অশান্তি হয়েছে মেদিনীপুর কলেজ ও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে। সকাল থেকেই কলেজের সামনে ধর্মঘটের সমর্থনে স্লোগান দিচ্ছিলেন ডিএসও- র কর্মীরা। পুলিশি নজরদারি ছিল আশেপাশে। এক সময় টিএমসিপি র‌ কিছু কর্মী জড়ো হন। এরপর দু'পক্ষ কার্যত হাতাহাতিতে জড়ায়। ডিএসও- র অভিযোগ, টিএমসিপি- র বহিরাগতেরা হামলা চালিয়েছে। পাল্টা টিএমসিপি- র দাবি, কলেজের গেট আটকে পিকেটিং করছিলেন কিছুজন। সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদ করেছেন। একই ঘটনা ঘটে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে। ডিএসও- র দাবি, টিএমসিপি- র ছেলেদের আক্রমণে বিবেকানন্দ বর্মণ নামে এক ছাত্র গুরুতর জখম হয়েছেন।‌ তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বেলদাতে ছাত্র ধর্মঘটের সমর্থনে পিকেটিং করার সময় ডিএসও-র উপর আক্রমণ করা হয় বলে অভিযোগ। এতে এক ডিএসও কর্মী আহত হন। প্রতিবাদে ডিএসও বেলদা ট্রাফিক স্ট্যান্ডের সামনে প্রতিবাদ সভা করে।

ছাত্র সংগঠন যখন নিজেদের মধ্যে গোলমালে ব্যস্ত, তখন অনেক বিদ্যালয়েই ক্লাস না করে আন্দোলনে সামিল হয়েছেন শিক্ষক - শিক্ষিকারা। মেদিনীপুর কেশপুর, শালবনির স্কুলে স্কুলে শিক্ষক, শিক্ষিকাদের হাজিরা ছিল কম। পঠনপাঠন ব্যাহত হয়েছে। গড়বেতার তিনটি ব্লকের কিছু বিদ্যালয়ে শিক্ষক - শিক্ষিকাদের উপস্থিতি ছিল কম। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব স্কুলে স্কুলে গিয়ে হাজিরার হিসাব নিয়েছেন। খড়্গপুরের অতুলমণি বালিকা বিদ্যালয়ে কোনও শিক্ষিকা না আসায় ক্লাস হয়নি। বালিচক বালিকা বিদ্যালয়ে এ দিন শিক্ষিকারা আসেননি। ঘাটাল মহকুমার বিদ্যালয় গুলিতে ধর্মঘটে মিশ্র সাড়া মিলেছে। একাধিক বিদ্যালয়ে পঠনপাঠন হয়নি। ঘাটাল বিদ্যাসাগর হাইস্কুলে ব্যারিকেড করে রাখেন ধর্মঘটীরা। ওই স্কুলে প্রধানশিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষকরা এলেও, ক্লাস হয়নি বলে জানা গিয়েছে। ঘাটাল বসন্তকুমারী বালিকা বিদ্যালয়ের সামনেও ব্যারিকেড থাকলেও প্রধানশিক্ষিকা সহ অনেক শিক্ষিকাই স্কুলে এসেছিলেন। তৃণমূল প্রভাবিত প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের জেলার চেয়ারম্যান শান্তুনু দে বলেন, ‘‘শিক্ষক - শিক্ষিকাদের এই আন্দোলন এ দিন ব্যর্থ হয়েছে।’’ উল্টো সুর শোনা গিয়েছে এবিপিটিএ এর রাজ্য নেতা ধ্রবশেখর মণ্ডলের গলায়। তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ৪৩০০ প্রাথমিক স্কুলের মধ্যে ২৮০০ স্কুল বন্ধ ছিল। ছাত্রছাত্রী না থাকায় ১৮ শতাংশ স্কুলে মিড ডে মিল হয়েছে।’’

সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের দাবি, এদিন ঝাড়গ্রাম জেলায় সার্বিক ভাবে প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল মিলিয়ে ৭০ শতাংশ স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকা-শিক্ষাকর্মীরা যোগ দেননি। পঠনপাঠন হয়নি। বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কার্যত বন্ধ ছিল। জেলা শহরের কুমুদকুমারী ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ সেনগুপ্তের দাবি, ‘‘দু’জন বাদে বাকি সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা-শিক্ষাকর্মী এসেছিলেন। স্বাভাবিক পঠনপাঠন হয়েছে।’’ ঝাড়গ্রাম সাধু রামচাঁদ মুর্মু বিশ্ববিদ্যালয়েও পঠনপাঠন হয়েছে। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) শক্তিভূষণ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এদিন জেলার ৫০ শতাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকা-শিক্ষাকর্মী অনুপস্থিত ছিলেন।’’ এ দিন বিভিন্ন স্কুলে হাজির হয়ে তৃণমূলের নেতাদের উপস্থিতির খোঁজ নিতেও দেখা যায়।

অন্য বিষয়গুলি:

State employees General strike midnapore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy