কে এই হসিনুদ্দিন, অভিজিৎ দলবেরা এবং মঞ্জু দলবেরা? কী ভাবে এঁদেরই তৃণমূলের ‘মুখ’ বলছেন দলের শাসক দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। কারা হবেন পঞ্চায়েত প্রার্থী, কারা পাবেন দলের টিকিট, শনিবার কেশপুরের সভা থেকে তার ইঙ্গিত দিয়ে দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে তিনি জানালেন প্রার্থী বাছবেন স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রার্থী কারা হবেন, সেটা বলতে গিয়ে অভিষেক দেখালেন হসিনুদ্দিনের মতো ‘অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব’কে, অভিজিৎ এবং মঞ্জু দলবেরার মতো তৃণমূল স্তরের কর্মীদের। বললেন, ‘এঁরাই নতুন তৃণমূলের মুখ’। তাঁরাই আগামী পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী হবেন।
কে এই হসিনুদ্দিন, অভিজিৎ দলবেরা এবং মঞ্জু দলবেরা? কী ভাবে এঁদেরই তৃণমূলের ‘মুখ’ বলছেন শাসকদলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক? কেশপুরে সভা চলাকালীন এই তিন জনকে মঞ্চে ডাকেন অভিষেক। প্রথমে তিনি শেখ হসিনুদ্দিনের খোঁজ শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রী আবাস নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে যখন শাসকদলকে নিশানা করছেন বিরোধীরা, তখন হসিনুদ্দিনের মতো মানুষকে ব্যতিক্রমী হিসাবে তুলে ধরেন অভিষেক।
প্রথমে সস্তা সাদা জামা, এক মুখ দাড়ি, চোখে চশমা পরা এক ব্যক্তিকে কাঁধে হাত রেখে অভিষেক তুলে আনেন মঞ্চে। সভায় উপস্থিত জনতাকে দেখিয়ে বলেন, ‘‘এই মানুষটিকে দেখে কী মনে হয়? তৃণমূল দুর্নীতিগ্রস্ত? এই লোকটিকে দেখে মনে হয় চোর? যাঁরা বলছেন, তৃণমূলের প্রধানকে টাকা দিয়ে বাড়ি পেতে (আবাস যোজনার) হয়, এই ভদ্রলোক— তাঁর নামে বাড়ি এসেছে। তিনি গিয়ে পঞ্চায়েত প্রধানকে বলেছেন যে তাঁর বাড়ির দরকার নেই।’’
অভিষেক জানান, ওই ভদ্রলোক জানিয়েছিলেন তাঁর ছেলে বড় হয়েছে। বাড়ির তৈরির জন্য যদি ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা নেন, সেই বাড়ি ঠিক ভাবে তৈরি করতে আরও ৩ লক্ষ টাকা খরচ হবে তাঁর। তখন তিনি মেয়ের বিয়ে দিতে পারবেন না। অভিষেকের কথায়, ‘‘এটাই বাংলার সংস্কৃতি, এই হসিনুদ্দিনের মতো লোকেরাই তৃণমূলের মুখ হতে চলেছেন। এঁদেরই আমরা স্বীকৃতি দেব। করেকম্মে খাওয়ার দিন শেষ।’’ অভিষেকের সংযোজন, ‘‘শুধু পশ্চিম মেদিনীপুরের জন্য নয়, এই নিয়ম সারা বাংলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।’’ একেই নতুন তৃণমূল বলে অভিষেক জানান, হসিনুদ্দিনের মেয়ের বিয়ের জন্য তিনি চিন্তা করেন। তাঁর মেয়ের দায়িত্ব তিনি নিজে নিচ্ছেন। মঞ্চে তাঁকে আলিঙ্গন করেন তিনি।
এর পর আর এক দম্পতিকে মঞ্চে ডেকে নেন অভিষেক। নীল পাড় সাদা শাড়ির এক মহিলাকে দেখিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘ইনি মঞ্জু দলবেরা। কেশপুর গোলার পঞ্চায়েতের সদস্যা। ওঁর স্বামী তৃণমূলের বুথ সভাপতি।’’ পাশের সাদা চেক শার্টের যুবকে দেখিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘ইনি অভিজিৎ দলবেরা। মঞ্জু দলবেরার স্বামী। ইনি সেই নির্দিষ্ট বুথের বুথ সভাপতি। এঁদের কী মনে হয় আপনাদের? এক জন গ্রাম পঞ্চায়েত মেম্বার (সদস্য), তাঁর স্বামী ১০ বছর বুথ সভাপতি আছেন।’’ ওই দম্পতিকে দেখিয়ে দলীয় নেতৃত্বকে অভিষেকের বার্তা, ‘‘যাঁরা দেখান আমাদের ব্লক সভাপতি, ফুলেফেঁপে উঠেছেন। তাঁদের দেখাচ্ছি। আমার মিটিংয়ে আজ আমার ছবি থাকবে না। অভিজিৎ দলবেরা এবং মঞ্জু দলবেরার ছবি থাকবে।’’
কেন এই বার্তা? অভিষেকের ব্যাখ্যা, ‘‘অভিজিৎ দলবেরার মা, মঞ্জুদেবীর শাশুড়ির নামে ঘর বরাদ্দ করা হয়েছিল। মঞ্জু দেবী ব্লক অফিসে গিয়ে বলেছেন, আমার স্বামী বুথের সভাপতি। আমি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যা। আমি তৃণমূল করি। আমি ঘর নেব না।’’ এর পর ওই দম্পতির বাড়ির ছবি দেখান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। বলেন, ‘‘একটু বৃষ্টি হলে চাল চুঁইয়ে জল পড়ে। এমন দশা এই পরিবারের। এই হচ্ছে পঞ্চায়েতে তৃণমূলের মুখ। আমি গর্ববোধ করি যে, আমি এমন একটি দলের সাধারণ সম্পাদক যেখানে অভিজিৎবাবু এবং মঞ্জুদেবীর মতো এক জনকে পেয়েছি। প্রত্যেক তৃণমূল কর্মী যাঁরা এই মিটিং চাক্ষুষ করছেন, তাঁরা শপথ নিন, এ ভাবেই মানুষের হয়ে কাজ করবেন।’’ অভিষেক জানান, অভিজিতের বাড়ি তৈরির দায়িত্ব নেবে দল। এবং অভিজিতের দায়িত্ব থাকবে এমন কর্মী তিনি আরও তৈরি করবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy