—প্রতীকী চিত্র।
বাড়িতে এসে গিয়েছে দলের প্রতীক। মনোনয়ন জমা দিতে প্রস্তুত প্রার্থী। শেষ মুুহূর্তে সেই প্রার্থীই বদল করে দিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। আটঘাঁট বেঁধে প্রার্থী তালিকা তৈরিতে একাধিক পদক্ষেপের পরেও পূ্র্ব মেদিনীপুরের একাধিক এলাকায় যে ভাবে শেষে প্রার্থী বদল হচ্ছে, তাতেই দলের অন্দরে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনই বিস্মিত রাজনৈতিক মহলও। আর দলের তরফে টিকিট না পেয়ে তৃণমূল নেতাদের একাংশের নির্দল হিসাবে মনোনয়ন দেওয়ার হিড়িক বজায় রয়েছে শেষ দিনেও।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের ৬০ নম্বর আসনে শেষ মুহূর্তে প্রার্থীবদল করেছেন তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব। কাঁথি-১ ব্লকের রাইপুর এবং মহিষাগোট গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে গঠিত জেলা পরিষদের এই আসন। বুধবার রাতে ওই আসনের জন্য যুব তৃণমূল নেতা অরূপ করে নাম ঘোষণা করেন রাজ্য নেতৃত্ব। তাঁকে দলীয় প্রতীক পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার সকালে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কথা ছিল অরূপের। তবে তার আগেই এদিন সকালে দলের তরফে অরূপকে মনোনয়ন জমা দিতে নিষেধ করা হয়। দলীয় প্রতীক তাঁর বাড়ি থেকে ফেরত নিয়ে আসা হয়। এরপর ওই আসনে জেলা পরিষদের প্রার্থী হিসাবে আনোয়ারউদ্দিনের নাম ঘোষণা করা হয়। আনোয়ার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি। একসময় অধিকারী পরিবারের কাছের লোক হলেও সম্প্রতি আনোয়ার মন্ত্রী অখিল গিরির 'ঘনিষ্ঠ' বলে জেলা তৃণমূলের একাংশের দাবি। তিনি এদিন কাঁথি মহকুমা শাসকের দফতরে গিয়ে মনোনয়ন জমা দেন। তাঁকে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে অরূপ বলছেন, "একেবারে শেষ মুহূর্তেই বারণ করা হয়েছে। আপাতত কিছু বলছি না। আগামী ২০ জুনের পর যা বলার বলব।’’
এদিকে, নন্দীগ্রাম থেকে জেলা পরিষদের প্রার্থী হিসাবে রাতারাতি শেখ সুফিয়ানের নাম পাল্টে দেওয়া হয়েছে। তা নিয়েও তাঁর অনুগামীরা ক্ষুব্ধ। পঞ্চায়েতে প্রার্থী বাছাই করতে ‘নব জোয়ার’ কর্মসূচিতে মতামত জানিয়েছিলেন দলের বুথের সভাপতিরা। জেলা পরিষদ এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে প্রার্থীদের নাম সুপারিশ করেছিলেন ব্লক সভাপতিরা। এছাড়া, তৃণমূলের প্রার্থী কে হবেন, তা নিয়ে সমীক্ষা করেছিল দলের ভোট কুশলী সংস্থা 'আইপ্যাক'। ভোটের মনোনয়ন পর্ব শেষের নির্ধারিত এক দিন আগে বুধবার তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের তরফে জেলা পরিষদের ৭০টি এবং পঞ্চায়েত সমিতির ৬৬৫টি আসনে প্রার্থী তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয় সমস্ত ব্লক সভাপতিদের কাছে। এর পরে এত কিছু সত্ত্বে একই আসনে প্রার্থীবদল ঘটছে বারবার।
তৃণমূল সূত্রের খবর, কাঁথি-১ ব্লকের তিনটি জেলা পরিষদ আসনের মধ্যে দুটি আসনে কারা প্রার্থী হবেন, তা বুধবার ব্লক সভাপতি জানিয়ে দেন। তবে, জেলা পরিষদের ৬০ নম্বর আসনটিতে একাধিক দাবিদার হওয়ায় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়নি। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই আসনে আনোয়ার এবং অরূপের পাশাপাশি, আবু সোহেল নামে আরও এক সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা গিয়েছিল। হাই কোর্টের আইনজীবী আবু সোহেলকে জেলা তৃণমূলের একটা বড় অংশ প্রার্থী হিসাবে চেয়েছিলেন।
বুধবার সন্ধ্যায় এ বিষয়ে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে একপ্রস্ত আলোচনায় বসেন রাজ্য তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। সোহেল এবং আনোয়ার দুজনেই সংখ্যালঘু। দুজনকে বাদ দিয়ে পরে রাতে অরূপের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। তার পরেও প্রার্থী বদল! এ প্রসঙ্গে কাঁথি-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি গণেশ মহাকুড় বলছেন, "জেলা পরিষদের একটিমাত্র আসনে প্রার্থী পদ নিয়ে জটিলতা ছিল। পরে রাজ্য নেতৃত্ব আনোয়ারউদ্দিনকে জেলা পরিষদের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেছেন।’’
এদিকে, প্রার্থী হতে না পেরে তৃণমূল নেতৃত্বের মধ্যে নির্দল হিসাবে মনোনয়ন জমা দেওয়া চলছেই। পটাশপুরের মথুরা অঞ্চলের প্রধান-সহ ১১ জন তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য গণ ইস্তফা দায়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছ’জন নির্দলে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। পঁচেট অঞ্চল থেকে পাঁচজন তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নির্দলে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। পটাশপুর-১ ব্লকে তৃণমূলের কোন্দল চরমে। পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আহাদ আলি ও কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মুক্তিরঞ্জন বেরাকে এবারে তৃণমূল টিকিট দেয়নি। এই দুজন বরাবরই বর্তমান ব্লক তৃণমূলের সভাপতি পীযূষ পন্ডার বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা হিসাবে পরিচিত।
দলের টিকিট না পেয়ে পশ্চিম পালপাড়া বুথ থেকে আহাদ আলি পঞ্চায়েতে নির্দলে মনোনয়ন জমা দেন। তবে টিকিট না পেয়ে এবার ভোট ময়দান থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন মুক্তিরঞ্জন। এ ব্যাপারে পটাশপুর-১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি পীযূষ বলেন, ‘‘শীর্ষ নেতৃত্বের পাঠানো তালিকা অনুযায়ী তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছে। আর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সবার ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকার রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy