আমপানের ঝোড়ো ইনিংসে বিপর্যস্ত উপকূলের জেলা। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে ও তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ। পূর্ব মেদিনীপুর জুড়ে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট পরিষেবাও বিঘ্নিত। মোবাইল ও নেট দুর্ভোগে এই জোড়া কাঁটা বৃহস্পতিবার আমজনতাকে তো বটেই, ভুগিয়েছে প্রশাসনিক কর্তাদেরও। ক্ষয়ক্ষতির খবর সংগ্রহের সমস্যা হয়েছে।
পরিস্থিতি একটাই খারাপ ছিল যে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে ভিডিয়ো কনফারেন্সে যোগ দিতে পারেননি পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পার্থ ঘোষ। এ দিন দুপুর আড়াইটা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী জেলাশাসকদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সের নির্ঘণ্ট ছিল। কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা প্রশাসনিক অফিস থেকে সংযোগ স্থাপনই করা যায়নি ইন্টারনেটের সমস্যায়। জেলাশাসক বলেন, ‘‘ঝড়ের জেরে জেলায় বিদ্যুৎ, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যহত হচ্ছে। ইন্টারনেট ব্যবস্থার সমস্যায় এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর ভিডিয়ো কনফারেন্সে যুক্ত হতে পারা যায়নি। তবে জেলার পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্ট রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়েছি।’’ জেলাশাসক জানান, টেলিফোন ও ইন্টারনেট পরিষেবা স্বাভাবিক করতে বিএসএনএল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিদ্যুৎ,. পানীয় জল সরবরাহ চালু করা, রাস্তাঘাট মেরামতি-সহ পুনর্গঠনের কাজে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
জেলা বিদ্যুৎ দফতর ও প্রশাসন সূত্রের খবর, বুধবার দুপুরের পরে ঘূর্ণিঝড় আমপানের দাপট বাড়তেই উপকূলবর্তী দিঘা, কাঁথি, খেজুরি, নন্দীগ্রাম, হলদিয়া, তমলুক-সহ গোটা জেলাতেই ছোট-বড় প্রচুর গাছ ভেঙে বিদ্যুতের তারের উপরে পড়ে। জেলা জুড়ে কয়েক হাজার বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে, তার ছিঁড়ে ও ট্রান্সফর্মার বিকল হয়ে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ এলাকা। তমলুক জেলা হাসপাতাল-সহ সব মহকুমা ও গ্রামীণ হাসপাতাল, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ভরসা ছিল জেনারেটর।
জেলা বিদ্যুৎ দফতর সূত্রের খবর, ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে জেলার নন্দীগ্রাম, খেজুরি, হলদিয়া, তমলুক, রামনগর, এগরায় সব থেকে বেশি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা দেড় হাজারের বেশি। কয়েকশো ট্রান্সফর্মার বিকল হয়েছে আর কয়েক হাজার কিলোমিটার লম্বা বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ বিপর্যয় মোকাবিলা করতে বুধবার রাত থেকেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ দফতরের ইঞ্জিনিয়ার, আধিকারিক, কর্মী ও ঠিকদার সংস্থার কর্মীরা মেরামতির কাজে নামেন। দীর্ঘক্ষণ চেষ্টার পরে বৃহস্পতিবার বিকেল নাগাদ তমলুক শহর, হলদিয়া শিল্পাঞ্চল, কাঁথি ও এগরা শহরে ফের বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। তবে জেলার বেশিরভাগ এলাকা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যে পর্যন্ত বিদ্যুৎহীনই রয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় তমলুক, কাঁথি, হলদিয়া, এগরা ও পাঁশকুড়া পুর এলাকা ও গ্রামীণ এলাকাতেও পানীয় জল সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। গ্রামীণ এলাকায় সাব-মার্সিবল পাম্প অচল হয়ে যাওয়ায় জলসঙ্কট বেড়েছে। তমলুকের পুর-প্রশাসক রবীন্দ্রনাথ সেন বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় জেনারেটর দিয়ে পাম্পহাউস চালাতে হয়েছে। জলের পরিমাণ কম থাকায় দোতলার উপরে জল সরবরাহে সমস্যা হয়। বহুতলে পানীয় জল পেতে অসুবিধা হচ্ছে।’’
ঝড়ের দাপটে জেলা জুড়ে মোবাইলের টাওয়ার-সহ টেলিফোন যোগাযোগও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিপর্যস্ত হয়েছে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট পরিষেবা। বিএসএনএল-সহ বিভিন্ন বেসরকারি মোবাইল সংস্থার গ্রাহকদের ফোনে পেতে দুর্ভোগের সীমা ছিল না। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় বিভিন্ন ব্লকের প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গিয়ে খুব সমস্যা হচ্ছে। কথা শোনা যাচ্ছে না। বিভিন্ন এলাকায় ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব পেতে ও ত্রাণ সামগ্রী পাঠাতে সমস্যা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy