Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
হাঁসফাঁস হাসপাতাল/১

মুমূর্ষুর ভরসা হাতপাখা

গনগনে দিন। রাতেও অস্বস্তি। ভ্যাপসা গরমে প্রাণান্তকর অবস্থা হাসপাতালেও। মস্ত ঘরে হাতে গোনা পাখা। তার বাতাস রোগীর গায়ে লাগে না। অনেক হাসপাতালে আবার নেই পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা। এই অবস্থায় কেমন আছেন রোগীরা? খোঁজ নিল আনন্দবাজারপানীয় জলেরও সমস্যা রয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যালে। ট্যাপকল পর্যাপ্ত নয়। সোমবার দুপুরে তাপমাত্রার পারদ যখন ৪০ ডিগ্রি, তখন হাসপাতাল চত্বরে গলা ভেজানোর মতো জল খুঁজে পাননি রোগীর বাড়ির কেউ কেউ।

গায়ে লাগে না সিলিং ফ্যানের হাওয়া। স্বস্তির খোঁজে রোগীর মাথায় পাখার বাতাস। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

গায়ে লাগে না সিলিং ফ্যানের হাওয়া। স্বস্তির খোঁজে রোগীর মাথায় পাখার বাতাস। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৯ ০০:৪৪
Share: Save:

জ্বর নিয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রভাতী বেরা। শয্যা জোটেনি। ঠাঁই হয়েছে ওয়ার্ডের পাশের বারান্দায়। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘একে শরীর খারাপ। তার উপরে গরমে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছি। সিলিং ফ্যানের হাওয়া গায়ে লাগছে না। ভরসা বলতে হাত পাখা। এই পরিস্থিতি থেকে কবে যে রেহাই মিলবে জানি না।’’

সোমবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি রোগীকেই হাতপাখা দিয়ে হাওয়া করছেন পরিজনেরা। ওয়ার্ডে হোক কিংবা ওয়ার্ডের বাইরের বারান্দা— সব জায়গায় একই অবস্থা। মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডুর অবশ্য দাবি, ‘‘সব ওয়ার্ডেই পর্যাপ্ত পাখা রয়েছে। তবে অসহ্য গরম। তাই অনেকের অস্বস্তি হচ্ছে।’’ হাসপাতালের নতুন ভবনের তিন তলায় ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ডের পাশের বারান্দায় ৪০ জনের বেশি রোগী রয়েছেন। বারান্দার এদিকে-সেদিক মিলিয়ে ৯টি সিলিং ফ্যান রয়েছে। মাথার উপরে পাখাগুলো ঘুরছে। তবে তাতে রোগীদের এতটুকু স্বস্তি নেই। কারণ হাওয়া বড়ই কম!

জেলার সব থেকে বড় সরকারি হাসপাতাল হল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। হাসপাতালে ৬৬০টি শয্যা রয়েছে। শয্যার থেকে রোগী বেশি। গড়ে ৭৫০-৮০০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। মেদিনীপুর গ্রামীণের বাসিন্দা অরূপ নন্দীর মা কল্পনা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়েছিলেন। অরূপের কথায়, ‘‘হাসপাতালে গরমে খুবই সমস্যা হয়। শয্যা মেলেনি। তাই মা একদিন মেঝেতেই ছিলেন। পরে ছুটি করে নিয়ে চলে আসি। কারণ ভ্যাপসা গরমে মেঝেতে থাকাই মুশকিল হয়ে পড়েছিল।’’ শুধু রোগী নয়, গরমে হাঁসফাঁস দশা রোগীর পরিজনদেরও। হাসপাতাল চত্বরে কয়েকটি গাছ রয়েছে। সেই গাছের ছায়াতেও দাঁড়িয়ে থাকা দায়!

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

পানীয় জলেরও সমস্যা রয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যালে। ট্যাপকল পর্যাপ্ত নয়। সোমবার দুপুরে তাপমাত্রার পারদ যখন ৪০ ডিগ্রি, তখন হাসপাতাল চত্বরে গলা ভেজানোর মতো জল খুঁজে পাননি রোগীর বাড়ির কেউ কেউ। নতুন ভবনের সামনে যে ট্যাপকল রয়েছে, সেখান দিয়ে জল পড়ে না। পুরনো ভবনের সামনের ট্যাপকল দিয়েও জল পড়ে না। জলের জোগান বলতে রয়েছে একটি ওয়াটার-এটিএম আর তার পাশে চারটি ট্যাপকল। সেখানেও অনেক সময়ে আবর্জনা জমে থাকে বলে অভিযোগ। জল নেওয়ার জায়গায় লম্বা লাইন থাকছে। নিরুপায় হয়ে টাকা দিয়ে জলের বোতল কিনে সঙ্গে রাখছেন অনেকে। দিলীপ মাহাতো নামে এক রোগীর পরিজনের কথায়, ‘‘হাসপাতালে পরিস্রুত পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। গলা ভেজানোর জন্য মাঝেমধ্যে বাইরের দোকানে গিয়ে জলের বোতল কিনে আনছি।’’ এর সঙ্গে রয়েছে মশার উপদ্রব। হাসপাতালের এক নার্সের কথায়, ‘‘চারদিকে থিকথিক করছে রোগী। এর উপর রোগীর পরিজনেদের ভিড়। মাত্র ক’টা পাখায় কী হয়! গরমে হাঁসফাঁস করতে করতেই কাজ করতে হচ্ছে।’’ হাসপাতালে তো পানীয় জলেরও সমস্যা রয়েছে? মেডিক্যালের অধ্যক্ষের আশ্বাস, ‘‘আরও একটি ওয়াটার-এটিএম করার পরিকল্পনা রয়েছে।’’ লোডশেডিং হলে পাম্পে জল তোলা, ওটি, এসএনসিইউ-র মতো জরুরি বিভাগে এসি চালুর কাজে সমস্যা হয়। জেনারেটর চালিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়। হাসপাতালের এক আধিকারিক মানছেন, ‘‘বিদ্যুৎ বিপর্যয় হলে জেনারেটর ভরসা।’’

শুধু মেডিক্যাল নয়, গ্রামীণ হাসপাতালগুলোরও একই পরিস্থিতি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার স্বীকারোক্তি, ‘‘টানা গরম থাকায় অনেকেই সমস্যায় পড়ছেন।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy