পুরসভার প্যাডে এই বিজ্ঞপ্তি ঘিরেই দেখা দিয়েছে বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র
ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূল প্রশাসন ও দলকে এক করে ফেলেছে বলে বার বার সরব হয়েছে বিরোধীরা। যদিও অভিযোগ মানতে নারাজ শাসক দল তথা তৃণমূল। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ যে অমূলক নয় তার প্রমাণ দিলেন তৃণমূল পরিচালিত হলদিয়ার পুরসভার চেয়ারম্যান। প্রশাসনিক পদে থেকেও পুরসভার প্যাডেই তৃণমূলের বিভিন্ন কমর্সূচি পালনের জন্য দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন তিনি। যা নিয়ে ফের শাসক দলের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে দলের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে বাম, বিজেপি সকলেই।
পেট্রল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি, কোল ইন্ডিয়ার বেসরকারীকরণ নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি রাজ্যে তৃণমূল সরকারের বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের প্রচারের জন্য দলীয় কর্মীদের বলা হয়েছে। হলদিয়া পুরসভার অফিসিয়াল প্যাডে দেওয়া সেই নির্দেশনামায় সই করেছেন খোদ পুরপ্রধান শ্যামল কুমার আদক। উল্লেখ্য, তৃণমূলের শীর্য নেতৃত্ব থেকে ৬ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত দফায় দফায় ওই সব কর্মসূচির পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেইমতো কর্মসূচি পালনের জন্য কাউন্সিলরদের নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। পুরসভার প্যাডে এ হেন দলীয় নির্দেশ নিয়ে দানা বেঁধেছে বিতর্ক। উল্লেখ্য, রাজ্য ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিরোধীদের পক্ষ থেকে বারবারই তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসন এবং শাসক দল সমার্থক হয়ে গিয়েছে। বিরোধীদের সেই অভিযোগ, কার্যত সিলমোহর বসিয়েছে পুরপ্রধানের এই পদক্ষেপ।
এই পরিস্থিতিতে পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে দলের হয়ে কাজ করার পাশাপাশি অযোগ্যতার অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। হলদিয়ার বাম বিধায়ক তাপসী মণ্ডল বলেন, ‘‘আসলে পুরপ্রধান যে পদে বসে রয়েছেন সেই পদের মর্ম তিনি বোঝেননি। সে জন্যই দলের কর্মসূচি আর প্রশাসনিক কাজকর্ম সব গুলিয়ে ফেলেছেন।’’ বিজেপির তমলুক জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক নবারুণ নায়েক বলেন, ‘‘আসলে বন্দর থেকে ধার করে পুরপ্রধান দামী উপদেষ্টা নিয়ে এসেছেন তো! সে জন্যই গন্ডগোলটা হচ্ছে। উনি প্রশাসনিক কাজকর্ম আর দলীয় কর্মসূচির মধ্যে তফাতটাই বুঝতে পারছেন না।’’
শুধুমাত্র বিরোধীরাই নয়, পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তাঁর নিজের দলের লোকজনই। পুরপ্রধানের এ হেন পদক্ষেপ নিয়ে তৃণমূলের মধ্যে মতবিরোধ শুরু হয়েছে। প্রাক্তন পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ মণ্ডল বলেন, ‘‘একজন পুরোপ্রধান হলেন পুরএলাকার এক নম্বর নাগরিক। তিনি দলীয় কর্মসূচিতে কখনওই পুরপ্রধান হিসেবে সই করতে পারেন না। আসলে পুরপ্রধান শ্যামল কুমার আদক অন্য দলে যেতে চাইছেন। তাই যাওয়ার আগে তিনি তৃণমূলকে কালিমালিপ্ত করতে চাইছেন।’’ হলদিয়ায় দলের ব্লক সভাপতি থাকতে কী ভাবে পুরপ্রধান দলীয় কর্মসূচিতে সই করেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ। এক তৃণমূল কাউন্সিলর বলেন, ‘‘শহর তৃণমূলের তরফে এই নির্দেশিকা হওয়া উচিত ছিল। তার পরিবর্তে সরকারি প্যাডে নির্দেশিকা দিয়ে পুরপ্রধান কী ভাবে তাতে সই করলেন সেটাই কারও মাথায় ঢুকছে না। তা ছাড়া এ ব্যাপারে ব্লক সভানেত্রীর মতামতই অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। নির্দেশিকাতেও তাঁরই সই থাকা উচিত ছিল।’’ দলের মধ্যে এমন আচরণে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছায়াও প্রকট হচ্ছে বলে তৃণমূলের একাংশর মত। ব্লক তৃণমূল সভানেত্রী মধুরিমা মণ্ডল বলেন, ‘‘সরকারি প্যাডে দলীয় নির্দেশ দেওয়া যায় না। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে তবেই মন্তব্য করব। আর দলের কর্মসূচি পালনের ব্যাপারে আমার কাছে এখনও কোনও নির্দেশ আসেনি।’’
যদিও তাঁর বিরুদ্ধে এ হেন অভিযোগ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে পুরপ্রধান শ্যামল কুমার আদক বলেন, ‘‘আমি নির্বাচিত চেয়ারম্যান। কারও কাছে জবাবদিহি করতে পারব না। কোনও প্রতিক্রিয়াও দেব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy