সুপ্রকাশ গিরি। —ফাইল চিত্র।
শিশির অধিকারীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে এবং তাঁকে ‘গুরুদেব’ বলে সম্বোধন করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন কাঁথি পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান সুবল মান্না। তার পর প্রথমে সুবলকে শো-কজ় এবং পরে তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, শিশিরকে প্রণামের ‘শাস্তি’ হিসাবেই সুবলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে দল। বৃহস্পতিবার সেই সুবলের পদেই আসীন হলেন রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরির পুত্র সুপ্রকাশ গিরি। এর আগে তিনি ওই পুরসভারই উপপুরপ্রধান বা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছিলেন।
বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে চেয়ারম্যান পদে বসেন সুপ্রকাশ। অখিল-পুত্রের দাবি, কাঁথি পুরসভায় উন্নয়ন থমকে গিয়েছিল। তাঁর কথায়, “এ বার পুর পরিষেবায় রাজ্যের সেরা হয়ে ওঠার লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করব।” তবে প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবল প্রসঙ্গে সুপ্রকাশের উক্তি, “আগের চেয়ারম্যান উন্নয়নের কাজে অনীহা দেখিয়েছেন। তার প্রতিবাদেই আমরা সরব হয়েছিলাম। এ বার সেই জট কাটবে।”
বৃহস্পতিবার পুরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে দলের জেলা সভাপতি পীযূষকান্তি পন্ডা, সাধারণ সম্পাদক তরুণ জানা, মন্ত্রী অখিল গিরি, কাঁথি শহর তৃণমূলের চেয়ারম্যান হরিসাধন দাস অধিকারী-সহ জেলা নেতৃত্ব গোপন বৈঠকে বসেন। সেখানে দলের হুইপ বা নির্দেশ পড়ে শোনানো হয়। দলের রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ অনুযায়ী, সুপ্রকাশ গিরিকে চেয়ারম্যান এবং নিরঞ্জন মান্নাকে ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ করার নির্দেশ জারি হয়। সেই নির্দেশ মেনেই এ দিন দলের সমস্ত পুরসদস্যেরা একযোগে নতুন চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের নামে সিলমোহর দেন।
কাঁথি পুরসভার ২২টি আসনের মধ্যে ১৭টি আসনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল। চেয়ারম্যান হয়েছিলেন সুবল মান্না। কিন্তু মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই দলের কাউন্সিলরদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে সুবলের। একাধিক ক্ষেত্রে দলীয় কাউন্সিলরদের পাত্তা দিতেন না সুবল, এমন অভিযোগ ওঠে। তবে সুবলের দাবি ছিল, তিনি উন্নয়নের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কিছু কাউন্সিলর অনৈতিক ভাবে সুযোগসুবিধা চাইলে তিনি তা দেননি।
এরই মধ্যে গত ২৩ ডিসেম্বর কাঁথির একটি বেসরকারি স্কুলের অনুষ্ঠানে গিয়ে কাঁথির সাংসদ শিশিরের সঙ্গে এক মঞ্চে বসেছিলেন সুবল । শিশির যখন নিজের বক্তব্য শেষ করে ফিরছিলেন, সেই সময় সুবল তাঁকে প্রণাম করেন। তার পর মঞ্চে বলতে উঠে শিশিরকে নিজের ‘গুরুদেব’ হিসেবে অভিহিত করেন সুবল। এই ঘটনার পর দলের জেলা সভাপতি তাঁকে শো-কজ় করেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শো-কজ়ের জবাব চাওয়া হলেও সুবল জবাব দেননি। এর পরই দলের রাজ্য নেতৃত্ব সুবলকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ পাঠান। কিন্তু সেই নির্দেশের পরও সুবল যথারীতি অফিস করেন। তিনি ইস্তফা নিয়ে কোনও নির্দেশ পাননি বলে পাল্টা দাবি করেন। সূত্রের খবর, তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব সুবলকে পদত্যাগ করার বার্তা পাঠায়। অনড় সুবল জানিয়ে দেন, তিনি কোনও ভাবেই পদত্যাগ করবেন না।
গত ২রা জানুয়ারী ১৬ জন তৃণমূল কাউন্সিলর দল বেঁধে সুবলের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আসেন। তবে নিয়ম মেনে সুবল কোনও বৈঠক ডাকেননি। তার পরেই নিয়ম মেনে ১৫ দিন অতিক্রান্ত হতেই ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রকাশ গিরির নেতৃত্বে অনাস্থা ডেকে সুবলকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করা হয়। এই নিয়ে সুবল হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেও বিশেষ সুবিধা পাননি।
বৃহস্পতিবার পুরসভার চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব নিয়ে সুপ্রকাশ বলেন, “দলের নির্দেশ মেনেই আগের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করে নতুন বোর্ড দায়িত্ব নিয়েছে। তবে উন্নয়নের ক্ষেত্রে সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান সুবল মান্না অথবা বিরোধী কাউন্সিলারদের ওয়ার্ড পিছিয়ে থাকবে না। কাঁথি শহরে নিত্য যানজট-সহ যে সমস্ত সমস্যায় মানুষ জর্জরিত, সেগুলির সুষ্ঠু সমাধান করাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy