খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের পালস পোলিয়ো ইউনিট। নিজস্ব চিত্র
জন্মের পর থেকেই এক সদ্যোজাতের টিকাকরণ চলছিল সরকারি হাসপাতালে। ছ’সপ্তাহ বয়সে অভিভাবকেরা পোলিয়ো টিকা দিতে তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন হাসপাতালেই। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে হন্যে হয়ে ঘুরেও হাসপাতালে ওই প্রতিষেধক মেলেনি। অগত্যা বাইরে থেকে কিনে এনে পোলিয়োর টিকা দিতে হয়েছে।
গত কয়েকমাস ধরে ইঞ্জেক্টেবল পোলিয়ো ভ্যাকসিন (আইপিভি)-এর আকাল দেখা গিয়েছে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে। বিপাকে পড়েছেন শিশুর পরিজনেরা। মিলছে না ভিটামিন-এ বুস্টারও। ফলে, ক্ষুব্ধ শিশুর পরিজনেরা।
সমস্যা মানছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। তবে তাঁদের দাবি, পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ না হওয়াতেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “আইপিভি ও ভিটামিন এ বুস্টার একেবারে পাওয়া যাচ্ছে না তেমন নয়। কিন্তু পরিমাণে কম পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের হাসপাতালে শিশুর চাপ এতটাই বেশি যে আমরা সকলকে একসঙ্গে তা দিতে পারছি না।” এই পরিস্থিতিতে বাইরে থেকে
কিনতে হচ্ছে টিকা। আর সে ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী দুঃস্থরা।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, শিশুর জন্মের পর থেকে প্রতিটি টিকাকরণই জরুরি। শুধু খড়্গপুর নয়, জেলার অন্য সরকারি হাসপাতালগুলিতে একই সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। পাওয়া যাচ্ছে না আইপিভি ও ভিটামিন-এ টিকা। আইপিভি মূলত শিশুর শরীরে পোলিয়ো বুস্টার হিসাবে দেওয়া হয়। মুখে পোলিয়ো খাওয়ানোর পাশাপাশি এই ইঞ্জেক্টশন দিয়ে পোলিয়োর প্রতিষেধকের কার্যক্ষমতা আরও বাড়ানো হয়। আর অন্ধত্ব মোকাবিলায় শিশুকে দেওয়া হয় ভিটামিন-এ বুস্টার। হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অরবিন্দ মাহাতো বলেন, “আইপিভি ও ভিটামিন-এ প্রতিষেধক শিশুর শরীরে প্রয়োজন রয়েছে। আইপিভি বুস্টার হিসাবে কাজ করে। ভিটামিন-এ চোখের দৃষ্টির জন্য দেওয়া হয়।”
এই পরিস্থিতিতে আশঙ্কায় শিশুর পরিজনেরা। খড়্গপুরের কৌশল্যার বাসিন্দা লুনা মৈত্র বলেন, “আমার শিশুর জন্য গত কয়েক মাস ধরে ভিটামিন-এ বুস্টারের জন্য খড়্গপুর হাসপাতালে ঘুরছি। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না। বহু মানুষ পোলিয়ো টিকা পাচ্ছে না। শিশুর প্রতিষেধক নিয়ে গাফিলতি উচিত নয়।”
হাসপাতালের সুপার জানিয়েছেন, জেলা থেকেই এই টিকা আসে। এটা প্রয়োজন মতো কিনে নেওয়া যায় না। জানা গিয়েছে, এই হাসপাতালের উপর মহকুমার দশটি ব্লক নির্ভরশীল হওয়ায় প্রতি সপ্তাহে প্রায় আটশো শিশু আসছে। সেই অনুপাতে টিকা সরবরাহ না হওয়ায় সমস্যা দেখা যাচ্ছে।
সমস্যা মানছে স্বাস্থ্য দফতরও। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “আসলে এই সমস্যা রাজ্য জুড়েই রয়েছে। আমাদের যা চাহিদা রয়েছে সেই পরিমাণ আইপিভি আসছে না। আর ভিটামিন বুস্টার তো একেবারেই আসছিল না। সম্প্রতি আমরা কিছু ভিটামিন প্রতিষেধক পেয়েছি। সেগুলি সব হাসপাতালে ভাগ করে দেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy