তখনও চলছে ঘেরাও। নিজস্ব চিত্র
একে শীত। তার উপর বৃষ্টি। এসবকে সঙ্গী করেই রাতভর চলল বিক্ষোভ।
বৃহস্পতিবার দাঁতনের মালযমুনা কালীপ্রসন্ন স্মৃতি বিদ্যাপীঠের ভিতরে আটকে রইলেন শিক্ষা প্রশাসনের আধিকারিকেরা। বন্ধ স্কুলগেটের বাইরে তাঁবুতে রইল খুদেরা। সঙ্গে অভিভাবক আর ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের বিক্ষোভকারীরা। দাবি, সাঁওতালি মাধ্যম স্কুলে স্থায়ী শিক্ষক দিতে হবে। বাড়াতে হবে পরিকাঠামো। মূলত এই দুই দাবিতে বৃহস্পতিবার স্কুল শুরুর আগে থেকেই শুরু হয়েছিল অবস্থান বিক্ষোভ। ফলে ক্লাস হয়নি বৃহস্পতিবার। রাতভর বিক্ষোভের পর শুক্রবার দুপুরে বেলদা মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সুমনকান্তি ঘোষের হস্তক্ষেপে ঘেরাও মুক্ত হন শিক্ষা আধিকারিকেরা। তারপর অবস্থান-বিক্ষোভ উঠলেও তার জেরে ক্লাস হয়নি এ দিনও।
বিক্ষোভের খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে মালযমুনা কালীপ্রসন্ন স্মৃতি বিদ্যাপীঠে হাজির হন খড়্গপুর মহকুমা অ্যাসিস্ট্যান্ট ইন্সপেক্টর অব স্কুল, দাঁতন ১ যুগ্ম বিডিও, দাঁতন চক্রের বিদ্যালয় পরিদর্শক। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন তাঁরা। আলোচনায় ছিলেন প্রধান শিক্ষক এবং কয়েক জন সহকারী শিক্ষক। দফায় দফায় হয় আলোচনা। কিন্তু সমাধানসূত্র মেলেনি। শিক্ষা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকেও লাভ হয়নি। ফলে ঘেরাও হয়েই থাকতে হয় আধিকারিকদের।
স্কুলের একটি ঘরেই হয় থাকার আয়োজন। স্কুলে রয়েছে হস্টেল। সেখানেই রান্না হয় ডিম-ভাত। রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে শীত বাড়ে। কোনওক্রমে রাত কাটে যুগ্ম বিডিও, শিক্ষা আধিকারিকদেরও। প্রধান শিক্ষক সৌমেন বাগ বলেন, ‘‘হস্টেলে রান্না করে খাওয়া হয়েছে। সারারাত ঘুম হয়নি। ওরা ধামলা, মাদল বাজিয়েছে সারারাত। আধিকারিকদের নিয়ে খুব খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে।’’ খড়্গপুর মহকুমা অ্যাসিস্ট্যান্ট ইন্সপেক্টর অব স্কুল মানস সামন্ত বলেন, ‘‘বারবার আলোচনা হয়েছে। তবে দাবি থেকে ওরা সরতে চাননি। ফলে ঘেরাও হয়ে থাকতে হয়েছে সারারাত। কষ্ট হয়েছে। সে আর কী করা যাবে।’’
কষ্ট হয়েছে পড়ুয়াদেরও। তাঁবুতেই রাত কেটেছে তাদের। পড়ুয়া, অভিভাবক ও ভারত জাকাত পারগানার সদস্যদের জন্য খিচুড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গভীর রাত পর্যন্ত বেজেছে ধামসা-মাদল। উঠেছে স্লোগান। ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের দাঁতন রাজগাড় মুলুক শাখার নেতৃত্ব সূর্যকান্ত মুর্মু বলেন, ‘‘গত ২৭ নভেম্বর জেলা, রাজ্য ও শিক্ষামন্ত্রীকে বিষয়টি জানানো হয়। কোনও পদক্ষেপ হয়নি। নতুন বিদ্যালয়ের অনুমতি ও চারজন স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।’’ এদিন দুপুরে বেলদা মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সুমনকান্তি ঘোষ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। প্রশাসন জেলা নেতৃত্বকে আশ্বস্ত করার পরেই আন্দোলন তোলা হয়। ঘেরাও মুক্ত করে দেওয়া হয় আধিকারিকদের। জেলা নেতৃত্ব রবীন্দ্রনাথ মুর্মু বলেন, ‘‘আগামী ৬ জানুয়ারি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হবে। সেখানে কোনও সমাধান না হলে ফের বৃহত্তর আন্দোলনে যাব।’’ ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে সারারাত ধরে আন্দোলন ? রবীন্দ্রনাথের মন্তব্য, ‘‘আমাদের কোনও উপায় ছিল না। অভিভাবকদেরও চাপ ছিল আমাদের ওপর।’’
বেলদা মহকুমা পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘আন্দোলনে পাঁচজন শিক্ষক যুক্ত ছিলেন। প্রয়োজনে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ আর জেলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক চাপেশ্বর সর্দার বলেন, ‘‘যে মূল দুটি দাবি তা নিয়ে আমাদের তো কিছু করার নেই। রাজ্য দফতরে সমস্ত বিষয়টি লিখিত জানিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy