এই হোর্ডিং ঘিরেই বিতর্ক। পরে এটি ছিঁড়ে দেওয়া হয়। —নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলের সাম্প্রতিক রদবদল ঘিরে ক্ষোভের আঁচ মিলছিল সমাজমাধ্যমে। ভার্চুয়াল দেওয়াল ছাড়িয়ে সেই ক্ষোভ এ বার ফ্লেক্স-হোর্ডিংয়েও।
রেলশহর খড়্গপুরের বেশ কয়েকটি জায়গায় রবিবার সকালে ‘তৃণমূল কর্মীবৃন্দে’র তরফে প্রচারিত ওই সব ফ্লেক্স-হোর্ডিং দেখা যায়। তৃণমূলের জেলা কমিটির রদবদল নিয়ে ক্ষোভের কথা রয়েছে সেখানে। রয়েছে ‘নিজস্ব ভুবন’ গড়ার তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিতও।
পশ্চিম মেদিনীপুরে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতিই আছেন। জেলা চেয়াম্যান পদেও ফের দীনেন রায়কেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নতুন পদপ্রাপ্তি বলতে তিন কো-অর্ডিনেটর মানস ভুঁইয়া, শিউলি সাহা ও প্রদীপ সরকারের। রেলশহরের পুর প্রশাসক তথা বিধায়ক প্রদীপের এই গুরুত্ব বৃদ্ধির প্রেক্ষিতেই হোর্ডিং পড়েছে এবং এ ক্ষেত্রে তৃণমূলের জেলা নেতা দেবাশিস চৌধুরীর ভূমিকাই সামনে এসেছে।
খরিদায় দেবাশিস ওরফে মুনমুন পরিচালিত তৃণমূল কার্যালয়ের উল্টো দিকের হোর্ডিংয়ের বয়ান, ‘দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংগ্রামের মূল্য যেখানে নেই, যেখানে মূল্য পায় চালাকি, সেখানে বেদনা অবশ্যম্ভাবী। এই বেদনা থেকে জন্ম নিতে পারে নিজস্ব ভুবন।’ এই হোর্ডিং পুরনো তৃণমূল কর্মীরা দিয়েছেন বলে দাবি করলেন খরিদার কার্যালয়ে বসে থাকা কয়েকজন। দলে পুরনোরা অসম্মানিত বলে মত দেবাশিসেরও। তাঁর আরও অভিযোগ, এ দিন সন্ধ্যায় পুলিশ পার্টি অফিসের সামনের হোর্ডিং ছিঁড়ে দিয়েছে। পুলিশ অভিযোগ মানেনি। আর গোটা ঘটনায় বিজেপির ইন্ধন দেখছেন প্রদীপ নিজে।
ইতিমধ্যে পূর্ব মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে মূলত শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামীরা সমাজমাধ্যমে ‘দাদার বঞ্চনা’ নিয়ে সরব হয়েছেন। দলের অন্দরের খবর, একসময় প্রদীপও শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠই ছিলেন। তবে পরে দূরত্ব বাড়ে। আর গত পুর-নির্বাচনের পর থেকে প্রদীপের সঙ্গে দেবাশিসের সম্পর্কে চিড় ধরে। প্রদীপ হন পুরপ্রধান। দেবাশিস কাউন্সিলরই থেকে যান। তারপর গত বিধানসভা উপ-নির্বাচনে জেতেন প্রদীপ। এ বার তাঁর প্রাপ্তি দলের জেলা কো-অর্ডিনেটরের পদ। প্রদীপের এমন রকেট গতিতে উত্থান মেনে নিতে পারছেন না দেবাশিস অনুগামীরা।
এ দিন দেবাশিসের সামনেই ১০নম্বর ওয়ার্ডের যুব তৃণমূল সভাপতি শান্তনু দাস বলেন, “শহরে বছর পাঁচেক ধরেই পুরনোরা বঞ্চিত হচ্ছে। আর নতুনরা দলের সামনের সারিতে এসে শহরে তোলাবাজি করছে। আমরা এটা মানতে পারছি না। পরিস্থিতি না বদলালে আমাদের নতুন কিছু ভাবতে হবে।” তৃণমূলের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি বিশু অধিকারীর বক্তব্য, “দীর্ঘদিন ধরে মুনমুনদার সঙ্গে দলটা নিষ্ঠার সঙ্গে করেও আমরা বঞ্চিত। আর কয়েকজন দলে পা রেখেই একের পর এক পদ পেয়ে চলেছে। এ ভাবে দল চললে কি বিজেপির সঙ্গে লড়াই করা যাবে?” আর দেবাশিস বলছেন, “এটা ঠিক যে আমরা পুরনোরা অসম্মানিত হচ্ছি। স্বাভাবিকভাবে কর্মীদের আবেগের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে। এই আবেগকে সমর্থন জানাচ্ছি।”
তৃণমূলের পুরনো নেতা দীনেন রায় অবশ্য এ বারও জেলা চেয়ারম্যান পদ পেয়েছেন। তাহলে পুরনোরা বঞ্চিত বলছেন কেন? দেবাশিসের জবাব, “দীনেনদার মতো কয়েকজন পুরনো তো বঞ্চিত হয়ে নেই। শুরু থেকেই জেলার পদে রয়েছেন। কথাটা হচ্ছে বঞ্চিত পুরনো কর্মীদের নিয়ে।”
এ প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূলের সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, “প্রকৃত তৃণমূলরা কখনও দলবিরোধী কথা বলবে না। রাজ্য যে জেলা কমিটি গড়ে দিয়েছে তাতে জেলার সকলে মান্যতা দিয়েছে বলেই জানি।’’ খড়্গপুরের বিষয়টি নিয়ে শহর সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করে মন্তব্য করবেন বলে জানান তিনি। আর যাঁকে নিয়ে এই ক্ষোভ, সেই প্রদীপেরও বক্তব্য, “যাঁরা এটা করছে তাঁরা প্রকৃত তৃণমূলের কেউ নয়। আমার ধারণা বিজেপির কিছু লোক এটা করছে।” প্রত্যুত্তরে দেবাশিসের কটাক্ষ, “শিশুসুলভ মন্তব্য করে বিজেপির সঙ্গে লড়াই করা যাবে না।” শহরের বাসিন্দা বিজেপির রাজ্য সম্পাদক তুষার মুখোপাধ্যায়েরও খোঁচা, “বিধায়ক এখন সব কিছুতে বিজেপির ভূত দেখছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy