লক্ষ্য স্বনির্ভরতা। আর সেই লক্ষ্যপূরণেই বন্দিদের স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে ক্যান্টিনের সূচনা হয়েছিল মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। জামাকাপড়, প্রসাধনীর পাশাপাশি বিরিয়ানি, চিলি চিকেন, সিঙাড়া, রসগোল্লা সবই মিলছে সেখানে। তবে সব থেকে বেশি চাহিদা তেলেভাজা আর মুড়ির। পরিস্থিতি দেখে বন্দিদের দিয়ে জেল চৌহদ্দিতেই মুড়ি বানানো শুরু হয়েছে। ৬ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দির হাতে তৈরি সেই মুড়ি শুধু জেলের ক্যান্টিনে নয়, বিক্রি হচ্ছে বাজারেও। দামও তুলনায় কম। খোলাবাজারে যেখানে এক কিলো মুড়ির দাম ৪৪ টাকা, সেখানে জেলে তৈরি মুড়ি বিকোচ্ছে কিলো প্রতি ৪০ টাকায়। মেদিনীপুর জেলের সুপার দেবাশিস চক্রবর্তীর কথায়, “সম্প্রতি এখানে মুড়ি তৈরি শুরু হয়েছে। আশা করি উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে।”
জেলের অন্ধকার কুঠুরিতে সাজা খাটার দিনগুলোতে বন্দিদের আয়ের বন্দোবস্ত বরাবরই ছিল। তবে তা মূলত জেল চত্বর সাফসুতরো রাখা, বাগান বানানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। সশ্রম সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরা কাজের ধরন অনুযায়ী দিনে ২৬, ৩০ ও ৩৫ টাকা পেয়ে থাকে। বন্দিদের স্বনির্ভরতার পরিধি আরও বাড়াতেই গত বছর ২৭ মে মাত্র ৩৬৫ টাকা দিয়ে চিপস, চানাচুর ও মুড়ি দিয়ে ক্যান্টিনের পথচলা শুরু হয় মেদিনীপুর জেলে। দায়িত্ব দেওয়া হয় বন্দিদের নিয়ে তৈরি ‘খাই খাই’ স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে। ক্রমে ক্যান্টিনের বহর বাড়ে। গত অগস্টে জেল চত্বরে আলাদা ঘর বরাদ্দ করতে হয় ক্যান্টিনের জন্য। এখন সেখানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাক, তেল, সাবান, সুগন্ধীর পাশাপাশি রকমারি খাবার পাওয়া যাচ্ছে। জেলের বন্দিরাই এখানে ক্রেতা। মাসে লাভের পরিমাণ ১ লক্ষ টাকারও বেশি। জেল সুপার দেবাশিসবাবু বলছিলেন, “লাভের অর্ধেক টাকা দেওয়া হয় ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রিজনার্স ফান্ড’-এ। বাকি টাকা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা সমান ভাগে ভাগ করে নেন।’’ তবে খরচে লাগাম টানতে একজন বন্দিকে মাসে ৫০০ টাকার বেশি কুপন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
ক্যান্টিন চালুর পরই শুরু হয়েছে বন্দিদের দিয়ে মুড়ি বানানো। কারা দফতরের ডিজি অরুণ গুপ্তের কাছ থেকে অনুমতি পাওয়ার পরে মুড়ি তৈরির মেশিন এনে শুরু হয়েছে কাজ। বন্দিদের তৈরি মুড়ি থাকছে ক্যান্টিনে, ৫০০ গ্রামের প্যাকেটের দাম ২০ টাকা। খোলাবাজারে মুড়ি বিক্রি করে যে আয় হচ্ছে, তা কারা দফতরের তহবিলেই জমা পড়ছে। দিনে গড়ে কত মুড়ি তৈরি হচ্ছে জেলে? মেদিনীপুর জেলের এক কর্তার জবাব, “এখন ৬ জন এই কাজে যুক্ত রয়েছেন। দিনে দেড় থেকে দুই কুইন্ট্যাল মুড়ি তৈরি করা হচ্ছে।”
বন্দিদের স্বনির্ভর করতে রাজ্যের বিভিন্ন সংশোধনাগারে নানা সামগ্রী তৈরি শুরু হয়েছে অবশ্য অনেক আগেই। যেমন, দমদম সেন্ট্রাল জেলে বন্দিরা পাটের দড়ি দিয়ে ব্যাগ তৈরি করেন। আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে তৈরি হয় জিন্সের প্যান্ট। এই সব সামগ্রী বিভিন্ন জেলে সরবরাহ করা হয়। এই সব সংশোধনাগারে ক্যান্টিনও চলছে বহু দিন ধরে। এ ক্ষেত্রে পথ দেখিয়ে ছিল দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। সেখানেই প্রথম চালু হয়েছিল আবাসিকদের জন্য ক্যান্টিন। সে দিক থেকে একটু দেরিতেই মেদিনীপুরের মতো মফফ্সলের জেলে এই ব্যবস্থা হয়েছে একটু দেরিতেই।
মেদিনীপুর জেলে বর্তমানে বন্দির সংখ্যা প্রায় ১৪০০। এর মধ্যে প্রায় ৮০০ জন সাজাপ্রাপ্ত। আপাতত ক্যান্টিন চালাচ্ছেন ১২ জন আর মুড়ি তৈরির কাজে যুক্ত রয়েছেন ৬ জন। আরও বেশি সংখ্যক বন্দিকে স্বনির্ভরতা প্রকল্পের আওতায় আনতে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন কর্তৃপক্ষ। আরও কয়েকটি যন্ত্র এনে বেশি পরিমাণ মুড়ি বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সেই সঙ্গে আগামী দিনে বন্দিদের দিয়ে অন্য সামগ্রী তৈরির পরিকল্পনাও করা হচ্ছে। জেল সুপার দেবাশিসবাবুর কথায়, “কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। ধীরে ধীরে তা বাস্তবায়িত করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy