টাইম কলে জল তোলার এমন হুড়োহুড়ি নিত্যদিনের ঘটনা। ঘাটালের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে।
এলাকায় বাস
ঘাটাল পুর এলাকার জনসংখ্যা ৫৪ হাজার ৬৯৩। এখানে বাস ১১ হাজার ৯৫টি পরিবারের। ১৭ ওয়ার্ডের এই জনপদের বেশিরভাগ অংশই বন্যা কবলিত। ফি বছর ১২টি ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
চাহিদা ও উৎস
পানীয় পুরসভার পাঁচটি জলাধার ও ২০টি পাম্প হাউস আছে। দিনে তিনবার করে পুরশহরে জল সরবরাহ করা হয়। পুরসভা সূত্রের খবর, দিনে প্রায় ২৭ লক্ষ গ্যালন জল সরবরাহ হয়। এমনিতেই প্রতি মানুষের দৈনিক জলের গড় চাহিদা ১২০ লিটার (স্নান, বাসন ধোওয়া, কাপড় পরিষ্কার সহ অনান্য)। পুরসভার তথ্য বলছে, জনসংখ্যার নিরিখে পুরসভা চাহিদার তুলনাই বেশি জল সরবরাহ করে। কারণ, ওই হিসাবে দিনে শহরে জল প্রয়োজন ১৪ লক্ষ ৬৬ হাজার ৬৬ গ্যালন। সেখানে জল সরবরাহ হয় ২৭ লক্ষ গ্যালন।
পরিকল্পনার ফাঁক
আসলে ঘাটালের ভৌগোলিক অবস্থান অনেকটা কড়াইয়ের মতো। বন্যা কবলিত হওয়ায় ঘাটাল শহরের ১২টি ওয়ার্ডের (আলমগঞ্জ, আড়গোড়া, কৃষ্ণনগর, শুকচন্দ্রপুর, চাউলি, সিংহপুর-সহ প্রভৃতি এলাকা) সমস্ত বাড়িই উঁচু। ফলে ওই সব এলাকায় জলের সংযোগ থাকলেও বহু বাসিন্দাই ঠিকমতো জলই পায় না। এটা পুরসভারও অজানা নয়। পুরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শুভাশিস মাইতি বলেন, “টাইম কলের সংখ্যা কমছে। বাসিন্দাদের সংযোগ নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থার কারণেই শহরের সব ওয়ার্ডে সমান ভাবে পুরসভার জল পৌঁছায় নি। এর জন্য আমাদের আলাদা পরিকল্পনা করতে হবে।
জল চুরি
শহরে ক্রমশ টাইম কলের সংখ্যা কমছে। শহরের আনুমানিক ৮০০টি টাইম কল রয়েছে। আর মোট পরিবারের মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার বাড়িতে জলের সংযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাউন্সিলর বলেই ফেললেন, “পুর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং কাউন্সিলরদের পক্ষপাতিত্বের কারণেই বেশিরভাগ বাসিন্দা জলের সমস্যায় জেরবার। নজরদারি না থাকায় বহু বাড়ির মালিক পুরসভার সংযোগ নেওয়ার পর বাড়িতে অতিরিক্ত জল ট্রাঙ্কে ভর্তি করার জন্য নিজস্ব মেশিন ব্যবহার করেন। ফলে ওই সময় টাইম কলে জল খুবই কম পড়ে। ফলে যাঁদের সংযোগ নেই, তাঁরা জল পান না। আর এই সংখ্যাটাই বেশি।”
নজরের অভাব
ঘাটালের বহু এলাকায় পুরসভার জল থেকেই চাষও করেন বাসিন্দারা। শহরের একাধিক ওয়ার্ডে একটু নজর দিলেই এমন দৃশ্য চোখে পড়বে। পুরসভার চেয়ারম্যান বিভাস ঘোষের বক্তব্য, “আমরা এ বার জল চুরি বন্ধ করতে কড়া ব্যবস্থা নেব। ধরা পড়লে লাইন কেটে দেওয়া থেকে জরিমানাও করা হবে। তা না হলে এই প্রবণতা বন্ধ করা যাবে না।” পুরসভার বাস্তুকার তপন ঘোষের দাবি, “সচেতনতার অভাবেও জলের অপচয় হয়। এটা বন্ধ হওয়া জরুরি। মানুষের অভ্যাসও পরিবর্তন না হলে পুকুরের জল ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না।”
শহরের অন্য একটি ওয়ার্ডে কল খোলা। জল পড়ে চলেছে একনাগাড়ে।
ঘাটতি কেন
কোন এলাকায় কত জনসংখ্যা এবং সেখানে কত সংযোগ বা টাইম কল আছে, সে দিকে পুরসভার খেয়াল নেই। যেমন, শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে জলের সংযোগ রয়েছে ২২৪টি পরিবারে। ওই ওয়ার্ডের দুলে পাড়ায় মোট বাসিন্দা প্রায় ৮০০। টাইম কল রয়েছে ১২টি। পাঁচটি বাড়িতে জলের সংযোগ রয়েছে। এক বাসিন্দার কথায়, “পুরসভার তথ্য যে ভুল তা বলছি না। কিন্তু এখানে এত মানুষ, সেখানে নাম মাত্র টাইম কলে এত মানুষের জলের চাহিদা মিটবে কী করে”? চেয়ারম্যান বিভাস ঘোষ অভিযোগ স্বীকারও করেছেন। বলেন, “আমাদের ত্রুটি তো রয়েইছে। নজরদারিরও অভাব রয়েছে। এখন নতুন বসতি গড়ে উঠছে। সেখানে টাইম কল দেওয়া যাচ্ছে না।”
নতুন ভাবনা
পুরসভা সূত্রের খবর, সামনের বোর্ড মিটিংয়ে কাউন্সিলরদের কাছ থেকে সমস্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে। কোন ওয়ার্ডে বেশি পুকুরের জল ব্যবহার হচ্ছে-তাও জানাতে বলা হয়েছে। ওই তথ্য পাওয়ার পরই আসল সমস্যা জানা যাবে। জলের যোগান দেওয়ার পরই সচেতনতার উপর জোর দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে সমস্যা সমাধান সম্ভব বলে মত পুরসভার।
ছবি: কৌশিক সাঁতরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy