Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
‘রেফার’-এ বাড়ছে হয়রানি

প্রতিষেধকের ভাঁড়ারে টান জেলা জুড়ে

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার সব সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল মিলিয়ে প্রতি মাসে ২ হাজার প্রতিষেধক লাগে। কিন্তু  গত দু’মাস  ধরে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ তলানিতে ঠেকায় এমন সমস্যা তৈরি হয়েছে।

তমলুক জেলা হাসপাতালে লাগানো বিজ্ঞপ্তি। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

তমলুক জেলা হাসপাতালে লাগানো বিজ্ঞপ্তি। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৮ ০৭:২০
Share: Save:

মহিষাদলের ইটামগরা গ্রামের চার বছরের শিশু সুলতানা খাতুন ও তার জেঠতুতো দিদি বছর সাতেকের শাবানা খাতুন খেলার সময় রাস্তার কুকুর আঁচড়ে দিয়েছিল। পরিবারের লোকেরা দু’জনকে মহিষাদল গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকের সুপারিশে দুই শিশুকে নির্দিষ্ট কয়েকদিন অন্তর জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক (আন্টি র‍্যাবিস ভ্যাকসিন) দেওয়াও হচ্ছিল। নিয়মানুযায়ী মোট পাঁচটি ইঞ্জেকশন দেওয়ার কথা। কিন্তু তিনটি ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরে মহিষাদল গ্রামীণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান ইঞ্জেকশন শেষ। এরপর দুই শিশুকে বাকি দুটি ইঞ্জেকশন দেওয়ার জন্য তমলুক হাসপাতালে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়।

বুধবার তমলুক জেলা হাসপাতালে সুলতানার মা মুর্শিদাবিবি বলেন, ‘‘মহিষাদল গ্রামীণ হাসপাতালে তিন বার জলাতঙ্কের প্রতিষেধক দেওয়ার পর জানানো হয়েছিল সেখানে আর প্রতিষেধক নেই। বাকি দু’টি ইঞ্জেকশন নিতে তমলুকে যেতে হবে। তাই আজ এখানে এসেছি।’’ একইভাবে সাবানাকে নিয়ে জেলা হাসপাতালে বাকি দু’টি ইঞ্জেকশনের জন্য এসেছেন মা সাদেয়া বিবি। দু’জনেরই অভিযোগ, হাসপাতালে ওষুধ না থাকাতেই তাঁদের এ ভাবে হয়রানি হতে হয়েছে।

শুধু মহিষাদল গ্রামীণ হাসপাতাল নয়, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং হাসপাতালে জলাতঙ্কের প্রতিষেধকের ভাঁড়ার শূন্য বলে অভিযোগ। এর ফলে কুকুর, বিড়াল, হনুমানের কামড় বা আঁচড়ে আক্রান্ত রোগীদের প্রতিষেধক নিতে এসে হায়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে। সকলকেই প্রতিষেধক নেওয়ার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে তমলুকে জেলা হাসপাতালে। কিন্তু জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগীরা প্রতিষেধক নিতে ভিড় করায় তমলুক হাসপাতালেও প্রতিষেধকের ভাঁড়ার প্রায় শেষ বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বুধবার রীতিমত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, জলাতঙ্কের প্রতিষেধকের সরবরাহ না থাকায় সাময়িক ভাবে ওই ইঞ্জেকশন দেওয়া বন্ধ থাকবে। কারণ যে পরিমাণ প্রতিষেধক রয়েছে তাতে ‘আগে এলে আগে পাওয়ার’ ভিত্তিতে রোগীদের দিতে তা শেষ হয়ে যাবে। ফলে নতুন করে আসা রোগীদের আর প্রতিষেধক দেওয়া যাবে না।

জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, জলাতঙ্কের প্রতিষেধকের সরবরাহ প্রায় দু’মাস ধরে বন্ধ থাকায় জেলার বিভিন্ন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, গ্রামীণ হাসপাতালে রোগীর ভিড় বেড়েছে। সেখানে প্রতিষেধক না পাওয়ায় জেলা হাসাপাতালে ভিড় বাড়ছে। ফলে জেলা হাসপাতালে প্রতিদিন যেখানে গড়ে ২০-২৫ জন নতুন রোগী আসত এখন তা ৩০-৪০ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আগে আসার ভিত্তিতে প্রতিষেধক দিতে গড়ে প্রায় ৮০-৯০ টি ইঞ্জেকশন লাগছে। ফলে এখানেও দ্রুত ইঞ্জেকশন ফুরিয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালে এই প্রতিষেধক বিনামূল্যে মিললেও খোলা বাজারে এক একটি ইঞ্জেকশনের দাম প্রায় ৩৪০ টাকা। অর্থাৎ ৫টি ইঞ্জেকশনের দাম ১৭০০ টাকা। যা গরিব পরিবারের পক্ষে খরচ করা বেশ কষ্টসাধ্য। এদিকে সময়মত প্রতিষেধক না নিলে বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার সব সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল মিলিয়ে প্রতি মাসে ২ হাজার প্রতিষেধক লাগে। কিন্তু গত দু’মাস ধরে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ তলানিতে ঠেকায় এমন সমস্যা তৈরি হয়েছে।

সমস্যার কথা স্বীকার করে পূর্ব মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘জলাতঙ্কের প্রতিষেধক সরবরাহকারী সংস্থাগুলি ঠিকমত সরবরাহ করতে না পারায় এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। ওই প্রতিষেধক সরবরাহের ব্যাপারে একটি সংস্থার সঙ্গে কথা হয়েছে। আশা করছি এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Vaccine Supply
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE