—ফাইল চিত্র।
নুন আনতে পান্তা ফুরায় পরিবারে। পড়াশোনা সেখানে যেন বিলাসিতা। তবু নিজের তৃতীয় মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন পটাশপুর-২ ব্লকের বাসিন্দা নিমাই দাস। সেই পড়াশোনাই বন্ধ হতে বসেছিল দু’কিলোমিটার দূরের স্কুলে হেঁটে যাতায়াতের যন্ত্রণায়।
শবর পরিবারের সেই মেয়েকেই টিফিনের খরচ বাঁচিয়ে সাইকেল কিনে দিল তার সহপাঠীরা।
পটাশপুর ২ ব্লকের শ্রীরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বড়কমোড়দা মৌজায় রয়েছে শবর পাড়া। সেখানেই বাড়ি নিমাইয়ের। মেয়ে কবিতা বাগমারি নারী কল্যাণ শিক্ষা সদনের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। পরিবার সূত্রের খবর, আর্থিক কারণে গত জুলাই থেকে কবিতা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। পরিজনেরা তাকে স্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়িতে পরিচারিকার কাজের জন্য নিয়ে যায়। বিষয়টি জানতে পেরে কবিতাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনেন স্কুলের শিক্ষিকারা।
তবে বাড়ি ফিরলেও অভাবের কারণেই গত দেড় মাস স্কুলে যায়নি কবিতা। বিষয়টি জানতে পেরে গত সপ্তাহে তাঁর বাড়িতে আসেন শিক্ষাকা। স্কুল সূত্রের খবর, তখনই স্কুলে যাতায়াতের জন্য তাঁদের কাছে একটি সাইকেলের আর্জি রাখে কবিতা। জানায়, বাড়ি থেকে রোজ দু’কিলোমিটার হেঁটে তাঁকে স্কুলে যেতে হয়। বিষয়টি জানার পরেই কবিতার সহপাঠী সানিয়া, বিউটিরা একজোট হয়। তারাই টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে একটি সাইকেল কিনে ফেলে কবিতার জন্য। এ দিন স্কুলেই তাকে সেই সাইকেলটি উপহার দেওয়া হয়।
সাইকেল পেয়ে খুশি কবিতা। আর তার সহপাঠীদের কাজে খুশি স্কুলের শিক্ষিকারও। এ দিন বাগমারি নারী কল্যাণ শিক্ষা সদনের প্রধান শিক্ষিকা সুতপা মাইতি বলেন, ‘‘পারিবারিক সমস্যার কারণে মেয়েটি গত মাস থেকে স্কুলে আসেনি। বাড়িতে গিয়ে স্কুলে আসার কথা বলতে ও সাইকেলের আবদার করে। সহপাঠীরা টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে কবিতাকে সাইকেল কিনে দিয়েছে।’’
কবিতাকে সহপাঠীরা সাইকেল কিনে এ দিন উপহার দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু এর পরে প্রশ্ন উঠে এসেছে শবরদের জীবনযাত্রার মান নিয়ে। শবরদের সাহায্য করার জন্য খোদ উদ্যোগী হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু পটাশপুরের ওই শবর পাড়া তথা নিমাইদের অভিযোগ, তাঁরা সরকারি তরফে কোনও রকম সাহায্য পাননি। নিমাইয়ের পরিবার জানাচ্ছে, তাদের বিপিএল কার্ড রয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেই কার্ড থেকে পাওয়া চাল-গমে সংসার চলে না। কখনও কখনও তাঁদের ভিক্ষাবৃত্তিও করতে হয় বলেও দাবি। কবিতার মা কাজল দাস বলেন, ‘‘রেশনের চাল গম আটজনের পরিবারের সকলের কুলোয় না। বাধ্য হয়ে ভিক্ষে করতে হয়।’’
আবাস যোজনা বা সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা কী আপনারা পান না? কাজল জানাচ্ছেন, আবেদন করে জাতিগত শংসাপত্র তাঁরা এখনও পাননি। আর সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যাপারে তাঁরা তেমন ভাবে জানেনই না। তাঁর দাবি, এ ব্যাপারে সরকারের তরফে কিছু সচেতনও করা হয়নি।
এ ব্যাপারে পটাশপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চন্দন সাউ বলেন, ‘‘শবর পরিবারদের জন্য সরকারি প্রকল্পে সব রকমের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়। প্রকল্প থেকে কেন ওই পরিবারেরা বঞ্চিত, স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের পাঠিয়ে তা খোঁজ নেওয়া হবে। দ্রুত সমস্যা সমাধান করা হবে।’’ জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ওই পরিবারগুলি সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনও খবর নেই। খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy