গড়বেতা: হাতে সময় নিয়ে রামনবমী পালনের প্রস্তুতি শুরু করেছে গেরুয়া শিবির। সঙ্ঘ পরিবারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই গড়বেতার তিনটি ব্লকেই শুরু হয়ে গিয়েছে রামনবমী পালনের প্রস্তুতি। কোথাও হয়েছে দেওয়াল লেখা। কোথাও বৈঠক। বেশি সংখ্যক এলাকা ছুঁতে এ বার ছোট ছোট বাইক মিছিলের কথা ভেবেছে সঙ্ঘ।
রামনবমী ৬ এপ্রিল। বিগত বেশ কয়েকটি বছরে গড়বেতার তিনটি ব্লক এলাকায় রামনবমীর প্রস্তুতি শুরু হত ৪-৫ দিন আগে থেকে। এ বার সপ্তাহ তিনেক আগে থেকেই গড়বেতা, চন্দ্রকোনা রোড, গোয়ালতোড় এলাকার রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) ঘনিষ্ঠ বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দল ওই দিন পালনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। ওই দুই শাখার পক্ষ থেকে গড়বেতায় দেওয়াল লিখন হয়েছে। সেখানে রামনবমীর দিনে বাইক মিছিল ও শোভাযাত্রায় দলে দলে যোগ দেওয়ার ডাক দেওয়া হয়েছে। প্রস্তুতি সভাও করা হয়েছে অনেক জায়গায়।
হিন্দু জাগরণ মঞ্চের দক্ষিণবঙ্গের প্রচার প্রমুখ চন্দ্রকোনা রোডের পারিজাত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শ্রীরামনবমী পালনের প্রস্তুতিতে এখনও পর্যন্ত ১৮ টি বৈঠক হয়ে গিয়েছে। বাইক র্যালিতে যাঁরা শামিল হবেন তাঁদের নাম, ফোন নম্বর, বাইকের নম্বর জানাতে একটি কাগজ পাঠানো হবে। তার প্রস্তুতিও চলছে।’’
সঙ্ঘের এক কার্যকর্তা জানাচ্ছেন, তাঁরা এ বার ছোট ছোট কর্মসূচির প্রতি বেশি জোর দিচ্ছেন। লক্ষ্য আরও বেশি সংখ্যক এলাকার মানুষের কাছে পৌঁছনো। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক নীলকমল পাল বলেন, ‘‘আমাদের শ্রীরামনবমী পালনের উদ্দেশ্য নিষ্ঠাভিত্তিক সনাতন ভিত্তিক কার্যক্রম করা। প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি পাড়ায় শ্রীরামের পুজো হোক, সৎসঙ্গ হোক, রামকথা হোক— এটাই আমাদের উদ্দেশ্য। তাই প্রতি এলাকায় ছোট করে হলেও র্যালির চেষ্টা থাকছে।’’
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এ বার ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় একশো জায়গায় রামনবমীর দিন বাইক মিছিল ও শোভাযাত্রা করতে সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠেরা প্রস্তুতি শুরু করেছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ অবশ্য মনে করছেন, রামনবমীতে ছোট ছোট কর্মসূচির অন্যতম মূল কারণ, এতে প্রশাসনের থেকে বাধা আসার সম্ভাবনা কম। গতবছর রামনবমীর কর্মসূচি নিয়ে বিভাজন তৈরি হয়েছিল গড়বেতায়। গড়বেতায় দু’টি জায়গা থেকে দুটি মিছিল বেরিয়েছিল। তেমন ঘটনা রোখাও এ বার আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরুর একটি কারণ। সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ এক কার্যকর্তা বলেন, ‘‘আমাদের নিজেদের মধ্যে ঐক্য যদি না থাকে, তাহলে কীভাবে বলব হিন্দু ঐক্যের কথা! তাই শ্রীরামনবমী পালনে বিভাজন যাতে না হয় সেটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ সেজন্যই কি অনেক আগে থেকে প্রস্তুতি? ওই সঙ্ঘ কর্তা বলছেন, ‘‘সেটাও যেমন আছে, তেমনি সনাতনীদের মধ্যেও একতা বাড়ছে। প্রচার, আবেগ বাড়ছে।’’
বিজেপির নেতা-কর্মীরা মূলত সঙ্ঘ পরিবারের কর্মসূচিতেই থাকেন। তবে কোথাও কোথাও দলীয় ভাবেও কর্মসূচি করে বিজেপি। এ বার কী হবে? বিজেপির নেতা-কর্মীরা জানাচ্ছেন, তাঁরা এখন দলের জেলা ও রাজ্য সভাপতি কে হবেন, সেদিকেই তাকিয়ে। সেই কাজ হয়ে গেলেই রামনবমীর প্রস্তুতিতে নেমে পড়বেন তাঁরা। গতবছর চন্দ্রকোনা রোডে রামনবমীর মিছিলে তৃণমূল নেতাদেরও হাঁটতে দেখা গিয়েছিল। গড়বেতার বিধায়ক উত্তরা সিংহও বাইক মিছিলে ছিলেন। তবে এ বার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। এখন তৃণমূলের কর্মীরা ব্যস্ত ভোটার তালিকার কাজে। গড়বেতার তিনটি ব্লকের তৃণমূল নেতৃত্ব মানছেন, এ বার রামনবমী পালনের কোনও কর্মসূচি এখনও পর্যন্ত নেই।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)