Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কাটমানি নালিশে বন্ধ রাস্তার কাজ

স্থানীয় সূত্রের খবর, দেশপ্রাণ ব্লকের ঝাওয়া সমবায় সমিতি থেকে কাজিবসান বাসন্তী মন্দির পর্যন্ত ঢালাই রাস্তার কাজ চলতি মাসে শুরু হয়েছিল।

এই রাস্তা ঢালাই নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র

এই রাস্তা ঢালাই নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বামুনিয়া শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৯ ০০:২৭
Share: Save:

কয়েকজন গ্রামবাসী এবং ঠিকাদারের বিরুদ্ধে সম্প্রতি হেনস্থার অভিযোগ দায়ের করেছেন এক পঞ্চায়েত সদস্যা। সেই অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে রবিবার জুনপুট থানায় দরবার করলেন একাংশ গ্রামবাসী। তাঁদের এবং ওই ঠিকাদারের পাল্টা অভিযোগ, তৃণমূলের ওই পঞ্চায়েত সদস্যা রাস্তা তৈরির কাজে বাধা দিচ্ছেন, কাটমানিও চেয়েছেন। ঠিকাদার সেই টাকা দিতে অস্বীকার করাতেই এখন মিথ্যা মামলায় ‘ফাঁসানো’র চেষ্টা হচ্ছে। দু’পক্ষের টানাপড়েনে মাঝখান থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে রাস্তার কাজ।

স্থানীয় সূত্রের খবর, দেশপ্রাণ ব্লকের ঝাওয়া সমবায় সমিতি থেকে কাজিবসান বাসন্তী মন্দির পর্যন্ত ঢালাই রাস্তার কাজ চলতি মাসে শুরু হয়েছিল। দেশপ্রাণ ব্লকের বামুনিয়া ও চালতি পঞ্চায়েতের সীমানা এলাকায় পূর্ব মহিষাগোট ও পশ্চিম ঝাওয়া গ্রামের বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ঢালাই রাস্তার। সেই মতো দেশপ্রাণ পঞ্চায়েত সমিতি থেকে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে ওই রাস্তার ৪৫০ মিটার ঢালাই হচ্ছিল।

রাস্তা তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার দেবাশিস দাসের অভিযোগ, পূর্ব ঝাওয়ার সদস্যা অঞ্জনা মিশ্র ত্রিপাঠি দিন রাস্তা তৈরির জন্য কাটমানি চেয়েছিলেন। তা না দেওয়ায় কয়েক দিন আগে রাস্তা তৈরির কাজে বাধা দেন অঞ্জনা। তাতে গ্রামবাসীরা অঞ্জনার কাজের প্রতিবাদ করেন। অভিযোগ, এর পরেই অঞ্জনা ঠিকাদার-সহ স্থানীয় কয়েকজন গ্রামবাসীর নামে জুনপুট উপকূল থানায় রাস্তা তৈরিতে অনিয়ম, তাঁকে হেনস্থা এবং শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেছেন। এর ফলে রাস্তার কাজ বন্ধ করেছেন ওই ঠিকাদার।

দেবাশিস বলেন, ‘‘অঞ্জনা কাটমানি হিসেবে আমার কাছে ৭০ হাজার টাকা চেয়েছিলেন। তার মধ্যে ৪০ হাজার টাকা দিয়েছি। বাকি ৩০ হাজার টাকা দিতে পারিনি। তাই রাস্তার কাজ চলার সময় ঘটনাস্থলে এসে ঢালাইয়ের পাটাতন ছুঁড়ে ফেলে দেন অঞ্জনা। তারপর জুনপুট উপকূল থানায় আমার নামে শ্লীলতাহানি-সহ আরও বেশ কিছু মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন। সে জন্য কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি।’’ পঞ্চায়েত সদস্যার কাটমানি চাওয়ার ব্যাপারে দেবাশিস অবশ্য কোথাও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি।

এ দিকে, ঠিকাদার ও গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে, এই দাবিতে স্থানীয়েরা আন্দোলনে নামে। গ্রামে মাইকে প্রচার করা হয়। রবিবার সকালে গ্রামবাসীরা জুনপুট থানায় দরবার করে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন জানা বলেন, “ঠিকাদার নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই রাস্তা তৈরি করছিলেন। তিনি যাতে দুর্নীতি করতে না পারেন, সে কয়েকজন গ্রামবাসী দল বেঁধে রাস্তা তৈরির কাজে নজরদারি চালাচ্ছিলেন। অঞ্জনা ঠিকাদারের কাজে বাধা দেওয়ায় তাঁরা প্রতিবাদ করেছিলেন। সে জন্য সকলের বিরুদ্ধে অঞ্জনা মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছেন।’’

আন্দোলনের কথা শুনে দেশপ্রাণ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তরুণ জানা জুনপুট থানায় যান। তাঁর আশ্বাস পাওয়ার পরে গ্রামবাসীরা ফিরে যান। রবিবার বিকেলে তাঁরা কাজিবসান কলেজ মোড়ে অঞ্জনার আচরণের প্রতিবাদে সভা করেন। সেই সভায় বামুনিয়া ও চালতি পঞ্চায়েতের প্রধানও যান। তাঁরা গ্রামবাসীকে আশ্বস্ত করেন, ওই রাস্তার কাজ শীঘ্রই শুরু হবে এবং মামলা কেন করা হল তা পঞ্চায়েত সমিতি এবং বিডিও-কে জানানো হবে। ফরিদপুরের পঞ্চায়েত সদস্য কল্লোল পাল বলেন, “গ্রামবাসীদের ও ঠিকাদারের অভিযোগ সত্যি কি না, সে নিয়ে আমরা বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতিকে জানাচ্ছি।’’

যাঁর দিকে অভিযোগের আঙুল সেই অঞ্জনার প্রতিক্রিয়া জানতে এ দিন ফোন করা হয়েছিল। তবে তিনি ফোন ধরেননি। আর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তরুণ জানার বক্তব্য, “এই রাস্তা মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। কেন কাজ বন্ধ হল, তা জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bribe Corrruption
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy