Advertisement
E-Paper

তিন দেশকে কাছে এনেছিল বাংলা ভাষা

ব্রিজ খেলার আসরের স্মৃতি যতটা শান্তির, কাজটা ততটা সহজ ছিল না। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ সিয়েরা লিওন। বেআইনি হিরের খনির দখল নিয়ে বিবাদ থেকে গৃহযুদ্ধ।

সিয়েরা লিওনে ছবিতে বাম দিক থেকে তৃতীয় জন।

সিয়েরা লিওনে ছবিতে বাম দিক থেকে তৃতীয় জন। নিজস্ব চিত্র।

আরিফ ইকবাল খান

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:৩৮
Share
Save

হেলিকপ্টারের নীচে আসর বসেছিল ব্রিজ খেলার। খেলোয়াড় দুই দেশের বাঙালি সেনাকর্মী। ছাউনিতে বাবুর্চি রাঁধছেন মুরগির ঝোল। দেশীয় পদ্ধতিতে। খেলার উত্তেজনায় কথা হচ্ছে মাতৃভাষা— বাংলায়। দেশটা সুদূর আফ্রিকায়। সিয়েরা লিওনে বাংলা ভাষা আত্মিক যোগ তৈরি করেছিল ভারত-বাংলাদেশের সেনাকর্মীর মধ্যে। আসলে তিনটি দেশকে কাছে এনেছিল বাংলা ভাষা।

বিভাস রায়চৌধুরী ভারতীয় বায়ুসেনার প্রাক্তন কর্মী। বর্তমানে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালের মানবসম্পদ বিভাগে মুখ্য ম্যানেজার। ভাষা দিবসের আগে সিয়েরা লিওনের স্মৃতি জোড়া লাগাচ্ছিলেন সংস্থার আবাসনে বসে।

ব্রিজ খেলার আসরের স্মৃতি যতটা শান্তির, কাজটা ততটা সহজ ছিল না। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ সিয়েরা লিওন। বেআইনি হিরের খনির দখল নিয়ে বিবাদ থেকে গৃহযুদ্ধ। তা ঠেকাতে রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিসেনা হিসেবে ভারতীয় সেনাবাহিনী সে দেশে গিয়েছিল। গিয়েছিল বাংলাদেশের সেনাও। ২০০০ সালের প্রথম দিকেই সে দেশে যান বিভাস। ২০০০ সালের শেষে যায় বাংলাদেশের সেনা। ভারতীয় বিমান বাহিনীর বাঙালি আর বাংলাদেশের সেনার বাঙালি সংস্কৃতি, ভাল ব্যাবহার সিয়েরা লিওনবাসীর মনে গভীর রেখাপাত করেছিল। তাঁরা অনেকে শিখে নিয়েছিল কিছু বাংলা শব্দ। বিভাস বলেন, ‘‘আমাদের দেখলেই বলতো ‘জয় বাংলা’। ছোট্ট ছোট্ট বাংলা শব্দে ওরা ছুঁয়ে যেত আমাদের।’’

বিভাস জানান, সিয়েরা লিওনে শান্তি ফিরে আসার পর দেশের পুনর্গঠনে বাংলাদেশ সেনা ৫৪ কিমি রাস্তা বানিয়েছিল। বাংলাদেশের বহু পুরনো বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ আছে তাঁর। বিভাস বলেন, ‘‘ভারতীয় আর্মি বিবাদের আগাছা উপড়ে যে জমি তৈরি করেছিল তাতে শান্তি আর সৌহার্দ্যের বীজ রোপণ করেছে বাংলা আর্মি। সেই দেশের মায়া আমরা ভুলতে পারিনি।’’

কিন্তু সৌহার্দ্যের বাইরে ভয়ঙ্করতাও দেখেছেন। বিভাস বলেন, ‘‘দু’ধরনের মানুষ দেখে ছিলাম। হাফ স্লিভ আর স্লিভলেস। যুদ্ধে যাঁদের দু’টি হাত কনুই থেকে কাটা তাঁরা স্লিভলেস। আর যাঁদের হাতের কব্জি কাটা তাঁরা হাফ স্লিভ।’’ এই ভয়ঙ্করতায় শান্তি ছিল সিয়েরা লিওনবাসীর প্রীতি। রুগিইয়াটু, প্যাট্রিসিয়াটু, মার্গারেট। তাঁরা চিঠি দিতেন। কোনও চিঠিতে দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক চিত্র। আবার কোনও চিঠি দলা পাকানো কান্নার। যদিও ইংরেজিতেই ছিল সেই সব চিঠি।

সিয়েয়া লিওনের সংবিধানে বাংলাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। শান্তি স্থাপনে বাঙালিদের ভূমিকাকে সম্মান জানাতে। বিভাস বলেন, ‘‘কেউ কেউ নিজের আগ্রহে শিখেছেন কিছু কিছু শব্দ, গান। কিন্তু সরকারি ভাবে বা বৃহৎ অর্থে বাংলার চল দেখিনি। তবে যে জায়গাতেই থেকেছি ওঁদের আন্তরিকতা হৃদয় ছুঁয়েছে।’’ ফিরে আসার সময়ে পেয়েছেন নানা উপহার।

বিভাস বলেন, ‘‘আবার যাব সিয়েরা লিওন।’’ বাংলা ভাষা স্বীকৃতি পেয়েছে যেখানে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Haldia

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}