Advertisement
E-Paper

রসদ পেয়েও কেন ঝিমিয়ে দল, প্রশ্ন উঠছে সিপিএমেই

এত জ্বলন্ত বিষয় হাতের কাছে থাকা সত্ত্বেও তেড়েফুঁড়ে আন্দোলনে দেখা যাচ্ছে না বিরোধী দল সিপিএমকে। বরং, সব কিছুকে শেষ পর্যন্ত ধর্মের মোড়কে নিয়ে গেলেও বিজেপিকে বেশি সক্রিয় দেখা যাচ্ছে রাস্তায়।

‘ব্রিগেড চলো’র ডাক দিয়ে অশোকনগরে সমাবেশে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।

‘ব্রিগেড চলো’র ডাক দিয়ে অশোকনগরে সমাবেশে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। —নিজস্ব চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৫:৫৯
Share
Save

প্রখর গ্রীষ্মে কি শীতঘুমে ধরেছে সিপিএমকে! দলের মধ্যেই এখন উঠতে শুরু করেছে এই প্রশ্ন!

মাদুরাইয়ে সিপিএমের নতুন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে এম এ বেবি বলেছিলেন, ‘‘ত্রুটি চিহ্নিত ও আত্মসমীক্ষার প্রক্রিয়া চলেছে এই পার্টি কংগ্রেসে। এর পরে নিজেদের এলাকায় ফিরে গিয়ে আমরা সাধারণ মানুষের দাবি-দাওয়া নিয়ে নতুন করে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ব।’’ কিন্তু পার্টি কংগ্রেস মিটে যাওয়ার পরে বঙ্গ সিপিএমে উল্টো ছবি! নিয়োগ-দুর্নীতির ধাক্কায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে, প্রতিবাদী শিক্ষকদের উপরে পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগ ঘিরে বিতর্ক বেধেছে। তার মধ্যেই আবার সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদের নামে আগুন জ্বলছে মুর্শিদাবাদের একাংশে। কিন্তু এত জ্বলন্ত বিষয় হাতের কাছে থাকা সত্ত্বেও তেড়েফুঁড়ে আন্দোলনে দেখা যাচ্ছে না বিরোধী দল সিপিএমকে। বরং, সব কিছুকে শেষ পর্যন্ত ধর্মের মোড়কে নিয়ে গেলেও বিজেপিকে বেশি সক্রিয় দেখা যাচ্ছে রাস্তায়।

পরিস্থিতির নিরিখে সিপিএমের বড় অংশই অবশ্য ময়দানে নেমে শোরগোল ফেলতে এবং প্রয়োজনে প্রশাসনের সঙ্গে সম্মুখ সমরে যেতে উদগ্রীব। ওই অংশের বক্তব্য, দলের তরফে সে ভাবে সমন্বয় হচ্ছে না। যদিও সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের যুক্তি, আর জি কর-কাণ্ডের মতো নি‌য়োগ-দুর্নীতির ক্ষেত্রেও তাঁরা শিক্ষকদের প্রতিবাদকে ‘ছিনতাই’ (হাইজ়্যাক) করতে চান না। শিক্ষকেরা তাঁদের এই সঙ্কটে ‘অরাজনৈতিক’ প্রতিবাদ চাইছেন। সেই প্রতিবাদের পাশে থেকে দলের শিক্ষক ও ছাত্র সংগঠনকে দিয়ে নিজস্ব কর্মসূচি করাতে চাইছেন সিপিএম নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, পার্টি কংগ্রেস শেষে দলের কাজে ছুটি নিয়ে বাইরে গিয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। শহরে ফিরেই তিনি রবিবার অশোকনগরে মিছিলে গিয়েছেন। তাঁর মুর্শিদাবাদ যাওয়ার কথা আজ, সোমবারই।

সিপিএমের অন্দরেই একাংশের মত, শিক্ষকদের প্রতিবাদ ‘দখল’ না-করেও দলের দৃশ্যমানতা আরও বাড়ানোর অনেক সুযোগ আছে। দলের রাজ্য কমিটির এক তরুণ সদস্যের কথায়, ‘‘এই রকম পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি বিরোধী নেত্রী থাকতেন, রাজ্য অচল করে দেওয়া হত! আমরা সেই তুলনায় কিছুই করিনি। প্রয়োজনে ছাত্র-যুবদের আরও বেশি করে ময়দানে নামিয়ে প্রতিবাদ জোরালো করা যায়। বাম আমলে অন্তত স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) পরীক্ষা ঠিক ভাবে হত, এটা বলার জায়গায় তো আমরাই আছি।’’ দলের এক বর্ষীয়ান নেতার মতে, ‘‘সামনে ব্রিগেড সমাবেশ বলে তার প্রস্তুতিতে অনেকটা নজর দিতে হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু শিক্ষকদের বড় অংশও চান, তাঁদের সমস্যার সমাধান এবং দোষীদের শাস্তির দাবিতে আমরা আরও সক্রিয় ভূমিকা নিই। মুর্শিদাবাদের ঘটনা নিয়েও আমাদের আরও এগিয়ে এসে শান্তি-সম্প্রীতির কর্মসূচি নেওয়া উচিত।’’

দল ঝিমিয়ে পড়েছে, এই তত্ত্ব অবশ্য মানছেন না সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিম। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাদের শিক্ষক, ছাত্র, আইনজীবী সংগঠন রাজ্যের নানা জায়গায় সক্রিয় ভাবেই প্রতিবাদ, আন্দোলন করছেন। তবে আর জি করের ঘটনার মতো এখানেও আমরা ভুক্তভোগী শিক্ষকদের প্রতিবাদ ‘হাইজ়্যাক’ করা আমাদের লক্ষ্য নয়। তাতে রাজনীতির রং লাগানো হচ্ছে বলে সরকারের আরও গুলিয়ে দিতে সুবিধা হবে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমরা বসে নেই! মানুষের জীবন-জীবিকা, দৈনন্দিন সমস্যার প্রশ্নে নানা ভাবে আমরা পথেই আছি।’’ প্রসঙ্গত, মাদুরাইয়ে পার্টি কংগ্রেসের অবসরেও বাংলার নিয়োগ-দুর্নীতির কথা তুলেছিলেন সেলিম।

শিক্ষকদের চাকরি বাতিলের পরে আইনজীবী এবং সিপিএম সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্যকে সরাসরি আক্রমণে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিকাশ নিজের মতো করে তার জবাব দিচ্ছেন। সেখানেও দল হিসেবে সিপিএমের তেমন তৎপরতা চোখে পড়ছে না, এমন প্রশ্ন আছে। সিপিএম সূত্রের খবর, বিকাশ যে কায়দায় ‘যোগ্য-অযোগ্য’ প্রশ্নের মোকাবিলা করছেন, তার সঙ্গে সিপিএমের ভাবনায় কিছু ফারাক থাকছে। তাই মেপে পা ফেলতে চাইছেন দলীয় নেতৃত্ব।

এত কিছু মাপতে গিয়ে দলের অবশিষ্ট পরিসরও হাতছাড়া হয় কি না, আশঙ্কা দেখা দিয়েছে সিপিএম শিবিরেই!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CPIM Mohammed Selim

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}