গাছ কাটা নিয়ে জটিলতা। প্রতীকী চিত্র।
সবুজ রক্ষার বন দফতরের পাশাপাশি এখন আগের চেয়েও বেশি সক্রিয় পুলিশ। নিয়ম পালনে যাতে ফাঁকি না থাকে মূলত সে বিষয়ে নজর তাদের। এর ফলে পাচার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও বহু ক্ষেত্রে বেড়েছে জটিলতাও।
কয়েকমাস আগের ঘটনা। সে সময় গাছ কাটা নিয়ে পুলিশি ধড়পাকড় চলছিল জোরকদমে। ফলে গাছ কাটার অনুমতি নিয়ে টালবাহানা চলছিল। সেই সময় আন্দোলন নামতে দেখা গিয়েছিল ঘাটাল মহকুমা শ’মিল অ্যাসোসিয়েশনকে। তারা গাছ কাটার নিয়ম সরলীকরণের আর্জি জানিয়েছিল। সংগঠনের দাবি ছিল, গাছ কাটা নিয়ে পুলিশ ও বন দফতরের ‘জুলম’ বন্ধ করতে হবে। বন দফতরকে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে গাছ কাটার অনুমতি দিতে হবে। সংগঠনের পক্ষে শিশির মাঝি বলেন, “আমরা সমস্ত নিয়ম মানব। কিন্তু সরলীকরণ করতে হবে।” একই বক্তব্য, মেদিনীপুর পূর্ব ও পশ্চিম জেলা কাষ্ঠ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি সুব্রত রায়েরও।
পুজোর ঠিক আগে। নিজের বাড়ির পাশে দু’টি গাছ কাটতে বন দফতরের কাছে গিয়েছিলেন পেশায় গৃহশিক্ষক সমর ঘোষাল (নাম পরিবর্তিত)। বন দফতরের নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে জমাও দিয়েছিলেন তিনি। একদিন পর বন দফতর থেকে তাঁকে জানানো হয়, পুলিশের থেকে একটা অনুমোদন নিতে হবে। পুলিশের কাছে যেতেই চক্ষু চড়কগাছ সমরবাবুর। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ সটান বলে দেয়, এখন গাছ কাটা চলবে না। কোনও ঝামেলা হলে মেটাতে পারব না। আমার রায়তি জায়গার উপর গাছের কথা বললেও পুলিশ শুনতে চায়নি, বলে যা হবে পুজোর পর।’’ পুজোর পরে অনুমতি নিয়ে সেই গাছ দুটি কাটতে সক্ষম হলেও, অযথা মাস দেড়েক দেরি হওয়ায় পুলিশের অতি সক্রিয়তাকেই দুষছেন তিনি।
নিয়ম বলছে, গাছ কাটতে হলে প্রথমে বন দফতরে আবেদন করতে হবে। তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের সম্মতি জরুরি ছিল। এখন অবশ্য সেই নিয়ম আরও কড়া হয়েছে। প্রধানের সম্মতির পাশাপাশি এখন বিডিও কিম্বা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অথবা ভূমি কর্মাধ্যক্ষের অনুমতি নিয়ে আবেদন করতে হয়। তা ছাড়া জমির সঠিক কাগজপত্র জমা দিতে হয়। কত গুলি গাছ, কী প্রকার গাছ তার উল্লেখ করে টাকা জমা দিতে হয়। অনলাইনে সেই টাকা জমা দিয়ে বন দফতরে আবেদন করলে তারা তা খতিয়ে দেখে। ভূমি দফতর থেকে জমির সত্যতা যাচাই করার পর গাছ কাটার অনুমতি মেলে। গাছ কটার পর জড়ো করে বন দফতরকে জানাতে হবে। তারপর টিপি (ট্রানজিট পারমিট) হাতে পাবেন গাছ মালিক।
গাছ কাটার ক্ষেত্রে খাতায় কলমে সে ভাবে পুলিশের ভূমিকা নেই। কিন্তু সম্প্রতি গড়বেতায় গাছ কাটা নিয়ে দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই পরিস্থিতি বদলে যায়। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সক্রিয় হয় পুলিশ। শুরু হয় ধরপাকড়। ফলে গাছ পাচার রুখতে পুলিশের ভূমিকা অনেক বেড়েছে। বন দফতরও অনেক সময় বল ঠেলে দিচ্ছে পুলিশের কোর্টে। বন দফতরের এক কর্মীর অভিজ্ঞতা, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ। তাই নির্দেশ মানতে গিয়ে নিয়মটা অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা গিয়েছে। আবার নির্দেশ মানতে গিয়ে বন দফতর আর পুলিশের মধ্যে যেন একটা ঠান্ডা প্রতিযোগিতাও শুরু হয়েছে। তার ফল ভুগছেন সাধারণ মানুষ।”
রায়তি জমির মালিকেরা গাছ কাটতে গিয়ে যেমন পুলিশের নানা প্রশ্নের মুখে পড়ছেন, তেমনি সরকারি স্তরেও তৈরি হচ্ছে জটিলতা। গোয়ালতোড়ের এক বনকর্মী শোনালেন সেরকমই এক অভিজ্ঞতার কথা। তিনি জানান, জেলার এক জায়গায় একটি পুকুড় পাড়ে পঞ্চায়েতের জমিতে কতগুলি আকাশমণি গাছ ছিল। পুকুড় পাড় সংস্কারের জন্য নিয়ম মেনে আকাশমণি কাটার প্রয়োজন হয়েছিল। পঞ্চায়েতের তরফ থেকে গাছ কাটার বিষয়টি বন দফতর ও পুলিশকে জানানো হয়। বন দফতর জানায়, পুলিশ যা করার করবে। পুলিশের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেতে দেরি হওয়ায় বিলম্বিত হয় পুরো প্রক্রিয়া। দিন দশেক পরে কাটা হয় গাছ। কাঠ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই মনে করাচ্ছেন, নিয়ম মানা হোক। কিন্তু এতদিন বন দফতর গাছ কাটার ক্ষেত্রে নিয়মে বেড়ি দেয়নি কেন। হঠাৎ করে কেন এত সক্রিয়তা। কাঠ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বন দফতরে গেলে তারা ভূমি দফতরে পাঠাচ্ছে। ভূমি দফতর আবার ব্লক অফিস পাঠাচ্ছে। এতে তো বিলম্ব হচ্ছে। বাড়ছে হয়রানি।
জেলা পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক বলছেন, সার্বিকভাবে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গাছ কাটার ব্যাপারে পুলিশ সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে না। বেআইনি হবে গাছ কাটার খবর কিংবা কাঠ পাচার হলে পুলিশ ধরপাকড় চালাচ্ছে। প্রয়োজনে মামলা করছে। এইটুকুই। (শেষ)
(তথ্য সহায়তা: অভিজিৎ চক্রবর্তী, রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy