ভিজে রাস্তা দিয়ে আস্তে আস্তেই বাইক চালাচ্ছিলেন প্রভাস মাইতি। রাস্তার বড় বড় গর্তগুলো জলে টইটম্বুর। ছোট পুকুর বললেও হয়। হঠাৎ পাশ দিয়ে গেল একটা বাস। আর রাস্তার ওই গর্তের সেই জলে বাইক থামিকে দাঁড়িয়ে পড়লেন ভিজে চুপচুপে প্রভাসবাবু।
হয়তো কিছুটা তাড়া ছিল বছর আঠাশের সপ্তকের। বর্যার জলে ভরা গর্তটা দেখে আন্দাজ করতে পারেনি কতটা ভয়ঙ্কর সেটা। আর চার চাকার গাড়িটা সেই গর্তে পড়তেই গাড়ি এক পাশে কাত।
এরমই রাস্তার হাল হলদিয়া শহর জুড়ে। বর্ষার জল জমে সেই রাস্তাই হয়ে উঠেছে আরও ভয়ঙ্কর। রাস্তার যে গর্ত তৈরি হয়েছে সেখানে একটু সচেতন না থাকলে দুর্ঘটনা অবশ্যম্ভাবী। কঙ্কালসার এমন রাস্তা দিয়ে যাতায়াতে যেমন ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ, তেমনই বাড়ছে ক্ষোভ।
হাতিবেড়িয়া থেকে দত্তেরচক ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা দিয়ে হাঁটাচলা দুষ্কর হয়ে উঠেছে। স্টেশন লাগোয়া এই রাস্তা দিয়ে দিনে বাস, লরি-সহ ভারি যানবাহন করে। বিভিন্ন কোম্পানির আবাসনও রয়েছে এখানে। ভারতীয় বিদ্যাভবনের মত স্কুল রয়েছে। সেখানে রাস্তার এই হাল হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের কর্মী উৎপল মাইতি বিরক্ত হয়েই বলেন, ‘‘সাইকেল চালিয়ে অফিস যাই। রাস্তার অবস্থা এত খারাপ যে দশবার থমকে দাঁড়াতে হয়। আর বর্ষায় তো রাস্তা আরও বেহাল। যে কোনও দিন বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটবে।’’
দুর্গাচক থেকে সিপিটি মার্কেট এবং মঞ্জুশ্রী মোড় পর্যন্ত ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের রাস্তায় সারাদিন জল জমে রয়েছে। সঙ্কীর্ণ এই রাস্তা দিয়ে পাশাপাশি দুটো গাড়ি যেতে পারে না। আর এবড়োখেবড়ো রাস্তা দিয়ে হাঁটাও কষ্টসাধ্য। গাড়ির চাকা রাস্তায় ঢুকে যায়। ফলে বিপত্তির সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। এলাকার বাসিন্দা দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, “এমন রাস্তা দিয়ে ঠিকভাবে হাঁটতেই পারি না। গাড়ি যাবে কী করে? দিন কয়েক আঘেই একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল। তারপরও তো পুরসভা চোখ বুজে রয়েছে।’’
শহরের ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড জুড়ে গিয়েছে এইচপিএল লিঙ্ক রোড। এখানে রয়েছে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস, ইন্ডিয়ান অয়েলের বটলিং প্লান্ট-সহ আদানি, ইমামির মতো কারখানা। আর খোদ সেই এলাকারও রাস্তা বেহাল। এই এলাকা দিয়ে নিত্যদিন ভারী গাড়ি যাতায়াত করে। কোথাও রাস্তার পিচ উঠে গিয়েছে, কোথাও বড় গর্ত আর কোথাও বা এবড়োখেবড়ো রাস্তা। শিল্পাঞ্চলের রাস্তার এমন হাল যে লরিচালকরাও এই রাস্তা পার করতে কিছুটা গাড়ির গতি কমিয়েই দেন। রবীন্দ্র-নজরুল সরণি-সহ ১৯ নম্বর ওয়ার্ড, ভবানিপুর থানা থেকে বেগম রোকেয়া হস্টেল পর্যন্ত ২০,২১ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের রাস্তাও বেহাল। ভেঙে গিয়েছে মিৎসুবিসির কারখানা যাওয়ার রাস্তাও।
আর রাস্তার এমন পরস্থিতির কথা মানছেন হলদিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ মণ্ডলও। তিনি জানিয়েছেন, রাস্তা খারাপের বিষয়ে কাউন্সিলররা জানিয়েছেন। দ্রুত রাস্তা সারাই শুরু হবে। আর রাস্তা সারাইয়ের আশ্বাস দিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীও। শুভেন্দু বলেন, ‘‘শিল্পাঞ্চলের রাস্তা খুব খারাপ হয়ে পড়েছে। হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের পক্ষ থেকে আপাতত রাস্তা সারাইয়ের ব্যবস্থা করা হবে। আর বর্ষা থামলে পাকাপাকি ভাবে রাস্তা সারাই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy