nঅভিরামপুরে টহল কেন্দ্রীয় বাহিনীর। নিজস্ব চিত্র।
ভোটের আগে কোনও খুন ঘিরে যা যা হয় তা সবই হল।
মঙ্গলবার রাতে পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ের মকরামপুরের অভিরামপুরে বোমাবাজি ও গুলি চলার অভিযোগ ওঠে। পিঠে গুলি লেগে মারা যান তৃণমূলকর্মী সৌভিক দোলাই (২৬)। বোমার আঘাতে আহত হন আরও দুই তৃণমূলকর্মী। ঘটনার পরপরই অভিযোগ উঠেছিল, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এই খুন। বুধবার সকাল থেকে এই অভিযোগের সুর বাড়াতে থাকে বিজেপি। অভিযোগ অস্বীকার করে খুনের দায় বিরোধী দলের দিকেই ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে তৃণমূল। বিজেপি দাবি জানাতে থাকে, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে এলাকায় এনে টহল দেওয়া হবে। বিকেলে পূরণ হয় বিজেপির দাবি। অজ্ঞাতপরিচয়দের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃতের দাদা। খড়্গপুর এসডিপিও দীপক সরকার বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি। ঘটনার তদন্ত চলছে।’’ এ দিন রাত পর্যন্ত এই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি।
এলাকায় কান পাতলে উঠে আসছে শাসকদলের অন্তর্দ্বন্দ্বের কথাই। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মিহির চন্দ বনাম জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি সূর্যকান্ত অট্ট—এই দুই শিবিরে বিভক্ত শাসক শিবির। অঞ্চল সভাপতি লক্ষ্মী শিট সূর্যকান্তের অনুগামী হিসেবে পরিচিত। ২০১৮ সালের ২৩ অগস্টে মকরামপুর দলীয় কার্যালয়ে বিস্ফোরণে প্রথমে আহত ও পরে মৃত্যু হয় তরতাজা তিনজন তৃণমূল কর্মীর। অভিযোগ উঠেছিল, মকরামপুর প্লাস্টিক কারখানার শ্রমিক ইউনিয়নের দখলদারি ঘিরে দ্বন্দ্বে বোমাবাজি ও তার জেরে প্রাণহানি হয়। অভিযোগ ওঠে লক্ষ্মীর দিকে। তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয় দল। নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মিহিরের অনুগামী বলে পরিচিত নাকফুড়ি মুর্মুকে। দ্বন্দ্ব চলতে থাকে। পরে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান লক্ষ্মী। ভোটের আগে ফের দায়িত্বে আনা হয় লক্ষ্মীকে। মিহির, সূর্যকান্ত একসঙ্গে মিলে ফিরিয়ে আনেন তাঁকে। ফের বাড়ে দ্বন্দ্ব। এরপর মঙ্গলবার রাতের ঘটনা।
মঙ্গলবার রাতে নারায়ণগড়ে দলের মিটিং শেষ করে অভিরামপুর এলাকায় জাতীয় সড়কের ধারে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন তৃণমূলের কয়েকজন। বাইকে তিনজন এসে বোমাবাজি করে। পরে দু রাউন্ড গুলি চালানো হয়। ঘটনার আগেই আড্ডা ভেঙে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন নাকফুড়ি। সৌভিকের গুলি লেগেছিল। বোমায় আহত হয়েছেন অমিত মণ্ডল ও সীতারাম মুর্মু নামে দুই তৃণমূল কর্মী। তিনজনকে উদ্ধার করে রাতেই খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রেফার করা হলে পথেই মৃত্যু হয় সৌভিকের।
মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকেও লক্ষ্মী-সহ অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে। লক্ষ্মীর বক্তব্য, ‘‘দল আস্থা রেখে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। কেন এসব করতে যাব।’’ প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি নাকফুড়ি বলেন, ‘‘লক্ষ্মী শীট আমাকে মারার চেষ্টা করেছিল। না পেরে আমার সহযোগীকে মারল।’’ আহত অমিত দলে নাকফুড়ির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। সূর্যকান্ত বলেন, ‘‘ঘটনা ব্যক্তিগত কোনও সমস্যা থেকে হতে পারে। কিংবা বিরোধীদের চক্রান্ত হলেও হতে পারে।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাস বলেন, ‘‘তৃণমূল নিজেরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। দোষ চাপানো হচ্ছে বিজেপির উপর।’’ দ্রুত কেন্দ্রীয়বাহিনী টহলের দাবি করেন শমিত।
মঙ্গলবার রাতে ঘটনার পর থেকেই বিশাল পুলিশ বাহিনী এলাকায় টহল দিচ্ছিল। এ দিন বিকেলে এলাকায় সিআরপিএফকে ঘোরাল রাজ্য পুলিশ। এদিন মৃত তৃণমূল কর্মী সৌভিকের বাড়ির সামনে, মকরামপুর বাজার এলাকা ও ঘটনাস্থলে টহল দেয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। এলাকা ঘুরে দেখে। তবে ঘটনাস্থল ও মকরামপুর বাজার এলাকায় নেমে রুট মার্চ করলেও মৃতের বাড়ির সামনে সিআরপিএফকে গাড়ি থেকে নামানো হয়নি। সঙ্গে ছিলেন রাজ্য পুলিশের কর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy