প্রতীকী ছবি।
দিন কয়েক আগে পথ দুর্ঘটনায় এক যুবক গুরুতর জখম হয়েছিলেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে তাঁকে শালবনি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে আনা হয়েছিল। জখম যুবকের রক্তের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু শালবনির এই হাসপাতালে রক্ত ছিল না। শারীরিক পরিস্থিতি দেখে ওই যুবককে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, রক্তের অভাবে প্রায়শই মেডিক্যালে রোগীদের রেফার করার ঘটনা ঘটে। তারপরেও বেশিরভাগ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্ক গড়ার দিকে নজর নেই স্বাস্থ্য দফতরের।
পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশির ভাগ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের পরিস্থিতি কম-বেশি এমনই। আশঙ্কাজনক রোগীর রক্ত প্রয়োজন হলে পরিজনেদের মেদিনীপুর-খড়্গপুরেও ছুটতে হয়। এরফলে, মাঝে মধ্যে সমস্যাও হয়। আশঙ্কাজনক রোগীদের হাসপাতালে না রেখে ‘রেফার’ করে দিতে হয়। সমস্যার কথা মানছে স্বাস্থ্য দফতরও। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার স্বীকারোক্তি, “সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে রক্তের ইউনিট থাকা প্রয়োজন।” একইসঙ্গে, তাঁর সংযোজন, “এই হাসপাতালগুলিতে ব্লাড ব্যাঙ্ক গড়ে তোলার জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে। একে একে পরিকাঠামো তৈরি করা হবে। ইতিমধ্যে পরিকাঠামো তৈরির কাজটা শুরুও হয়েছে।” জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, “সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে পরিকাঠামো উনম্নতমানের। তবে সব হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্ক নেই। ব্লাড ব্যাঙ্ক না থাকায় কিছু সমস্যা তো হয়ই। রক্তের ইউনিট চালু করতে হলে নূন্যতম কয়েকটি পরিকাঠামো গড়ে তোলা জরুরি। সব সুপার স্পেশালিটিতেই ব্লাড ব্যাঙ্ক গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। এ জন্য জেলার দিক থেকে যা পদক্ষেপ করার করা হচ্ছে।”
পশ্চিম মেদিনীপুরে এখন ৩টি ব্লাড ব্যাঙ্ক রয়েছে। মেদিনীপুর মেডিক্যালে, ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ও খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে। ‘ব্লাড স্টোরেজ ইউনিট’ রয়েছে ২টি। চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে ও বেলদা গ্রামীণ হাসপাতালে। জেলার ঘাটাল, শালবনি ও ডেবরায় ৩টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। চালুও হয়েছে। এরমধ্যে শালবনি ও ডেবরায় ব্লাড ব্যাঙ্কই নেই। ডেবরা হাসপাতালের এক চিকিত্সক মানছেন, “শুধু তো ডেবরা নয়, সবং, পিংলা ও আশপাশের এলাকার মানুষও এই হাসপাতালে আসেন। কখনও কখনও রক্তের প্রয়োজন হয়। রক্তের প্রয়োজন হলে তখন খড়্গপুর থেকে আনতে হয়। খড়্গপুরে রক্ত না পেলে তখন মেদিনীপুরে যেতে হয়। এখানে ব্লাড ব্যাঙ্ক গড়ে উঠলে এই সমস্যা থাকত না।”
শালবনি হাসপাতালেও গোয়ালতোড়, চন্দ্রকোনা রোড ও তার আশপাশের এলাকার মানুষ আসেন। শালবনি, ডেবরা- দু’টি হাসপাতালই জাতীয় সড়কের পাশে। শালবনির উপর দিয়ে গিয়েছে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক। ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক গিয়েছে ডেবরা দিয়ে। নানা সময়ই রক্তের প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটলে। জখমদের হাসপাতালে আনা হয়। দ্রুত রক্ত না মিললে সমস্যা হয়।
অস্ত্রোপচারের সময়ও রক্তের প্রয়োজন হয়। রক্ত না থাকলে অস্ত্রোপচার পিছিয়ে দিতে হয়। ৩০-৩৫ শতাংশ প্রসূতি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করেন। এই সময়ে অন্তত এক ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হয়। রক্ত না মিললে তখন সমস্যা হয়।
কখনও কখনও মেদিনীপুর মেডিক্যালের ব্লাড ব্যাঙ্কও রক্তশূন্য হয়ে পড়ে। তখন সমস্যা আরও বেশি হয়।
জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা মানছেন, “এই দুই এলাকা সব দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। পাশ দিয়ে জাতীয় সড়ক চলে গিয়েছে। ডেবরা, শালবনির মতো সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্ক থাকা সত্যিই জরুরি। ব্লাড ব্যাঙ্ক গড়ে তোলার জন্য জেলা থেকে সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy