কাজ বন্ধ হলদিয়া বন্দরে। —নিজস্ব চিত্র
বন্দরে শ্রমিক বিক্ষোভ। যার জেরে শুক্রবার রাত পর্যন্ত বন্ধ রইল হলদিয়া বন্দরের একাধিক বার্থে মাল ওঠানো-নামানোর কাজ!
বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে চলা ওই বিক্ষোভে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের মারধর করার অভিযোগও উঠেছে শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শুক্রবার এ নিয়ে বন্দরে শ্রমিক সরবরাহকারী ঠিকাদার সংস্থার পক্ষ থেকে হলদিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ জানানো হয়। যার ভিত্তিতে শেখ আজাদ (বাবলু) নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে শনিবার হলদিয়া মহকুমা আদালতে তোলা হবে বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছে। ধৃত ব্যক্তি যুব-তৃণমূলের জেলা সহসভাপতি তথা হলদিয়ার পুর-পারিষদ (ক্রীড়া) শেখ আসগর আলির অনুগামী বলে স্থানীয়দের দাবি।
বন্দর প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার বিকেলে রানিচকে বন্দরের প্রশাসনিক ভবনে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলেন বেশ কয়েকজন শ্রমিক। মূলতঃ দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসা ওই অস্থায়ী শ্রমিকদের সুপারভাইজার হিসাবে নিয়োগের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন তাঁরা। অভিযোগ, স্মারকলিপি দিয়ে ফেরার পথে ওই অস্থায়ী শ্রমিকদের উপর দুষ্কৃতীরা চড়াও হয়। কয়েকজনকে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের অফিসে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
ওই ঘটনার প্রতিবাদে এবং দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে বাকি শ্রমিকেরা ওই দিন বিকেল থেকে বন্দরে কাজ বন্ধ করে দেন। ওই শ্রমিকেরা হলদিয়া বন্দরের ২, ৮, ৪ বি-সহ একাধিক বার্থে পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজ করেন। তাঁরা বিক্ষোভ শুরু করায় কাজে প্রভাব পড়ে। কর্মবিরতির জেরে হলদিয়া বন্দরে চারটি জাহাজও আটকে পড়ে। অস্থায়ী শ্রমিকেরা স্থানীয় এক ঠিকাদার সংস্থার অধীনে কাজ করেন। ওই সংস্থার মালিক আসগর আলির বাবা শেখ মোজাফফ্র। তিনি বলেন, ‘‘কয়েকদিন ধরে বাইরে ছিলাম। বৃহস্পতিবার বিকেলে বেশ কয়েজন দুষ্কৃতি অস্থায়ী শ্রমিকদের মারধর করেছে বলে শুনেছি। তারপর শ্রমিকেরা কাজ করেননি। এর ফলে একাধিক বার্থে চাল, কয়লা, আকরিক লোহা, ম্যাঙ্গানিজ পড়ে রয়েছে।’’ পাশাপাশি, তাঁর অভিযোগ, ‘‘শ্রমিকরা চুক্তির বাইরে প্রতিমাসে অতিরিক্ত পাঁচ হাজার টাকা দাবি করছেন। তবে শ্রমিকদের কথা ভেবে অতিরিক্ত ১০০০ টাকা দিতে সম্মত হয়েছি। সেটাও মানতে চাইছেন না শ্রমিকেরা।’’
শুক্রবার অস্থায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে বন্দর আধিকারিকেরা বৈঠক করেন। শেষে শুক্রবার রাতে কর্মবিরতি ওঠে বলে হলদিয়া বন্দর প্রশাসন সূত্রের খবর। এ ব্যাপারে হলদিয়া বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার (ট্রাফিক) অভয় মহাপাত্র বলেন, ‘‘কর্মবিরতি জেরে হলদিয়া বন্দরে শুক্রবার চারটি জাহাজের পণ্য সম্পূর্ণ খালাস করা যায়নি। আমদানি ও রফতানিকারকদের ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে হচ্ছে।’’ যদিও কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যান বিনীত কুমার বলেন, “অস্থায়ী শ্রমিকদের একটি ছোটখাটো বিক্ষোভ হয়েছিল। এদিন তা মিটে গিয়েছে। বন্দরের কাজকর্ম স্বাভাবিকই ছিল।’’
উল্লেখ্য, অস্থায়ী শ্রমিকেরা যে ঠিকাদার সংস্থার অধীনে কাজ করেন, তার মালিক কিছুদিন আগেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এরপর তাঁর সংস্থার অস্থায়ী শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা দেওয়া হচ্ছিল না বলেও অভিযোগ উঠেছিল। এমন আবহে হলদিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান পদ থেকে শ্যামলকুমার আদক সরে যাওয়ার পরেই শ্রমিক ভবনে ‘দখল’ নিয়ে শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর ঠাণ্ডা লড়াই শুরু হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। শ্রমিকদের একাংশের দাবি, সেই লড়াইয়ের একদিকে রয়েছএন শহর তৃণমূল সভাপতি তথা পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ মণ্ডল। অন্যদিকে রয়েছেন আসগর আলি।
অবশ্য শ্রমিকদের বিক্ষোভ প্রসঙ্গে দেবপ্রসাদ এ দিন বলেন, ‘‘শ্রমিকদের মারধর করা হয়েছে। তারপর বন্দরের কাজকর্ম বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে দলের ভাবমূর্তি যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য রাজ্য নেতৃত্ব কে জানিয়েছি।’’ আর আসগরের কথায়, “অনৈতিকভাবে একটি ঠিকাদার সংস্থার কয়েকজন অস্থায়ী শ্রমিক সুপারভাইজার হতে চেয়েছিল। তা নিয়ে কিছু সমস্যার জন্য কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। কথাবার্তা বলে বন্দরের পরিষেবা স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।’’
বন্দরের অচলাবস্থার জন্য শাসকদলকে কাঠগড়ায় তুলে হলদিয়া বন্দরের ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের নেতা প্রদীপকুমার বিজলী বলেন, “এক জনের (আসগর আলি) বাবা ঠিকাদার সংস্থার মাথায় থেকে শ্রমিকদের পাওনা আটকে রেখেছেন। আর তাঁর ছেলে তৃণমূল নেতা হয়ে শ্রমিকদের মারধর করছে। শ্রমিকেরা এই রকমের শোষণ নীতি মেনে নেবেন না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy