সৈকত শহর দিঘার জগন্নাথ ধামের ধারে তৈরি হচ্ছে মন্দিরের প্রধান দফতর। হচ্ছে অগ্নি নির্বাপণকেন্দ্র এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রও। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের গেস্ট হাউসে তৈরি করা হচ্ছে এই সংক্রান্ত পরিকাঠামো। এর জন্য ওই গেস্ট হাউস জেলা পরিষদের তরফে রাজ্য সরকারের অধীনস্থ ‘হিডকো’কে হস্তান্তর করা হল।
নিউ দিঘার ভোগী ব্রহ্মপুরে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে জগন্নাথ ধাম গড়ে উঠছে। ২০ একর জমিতে এই মন্দির গড়ে উঠছে। আগামী ৩০ এপ্রিল মন্দির উদ্বোধন হবে। তার আগে পুরীর মতো দিঘা জগন্নাথ ধামে পূণ্যার্থীদের ভিড়ের কথা মাথায় রেখে নজরদারি এবং যে কোনও পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে পরিকাঠামো গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। কিন্তু, পরিকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জমি নিয়ে তৈরি হয় সমস্যা। গত বছর ডিসেম্বরে মন্দিরের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে জানিয়েছিলেন, জেলা পরিষদের গেস্ট হাউসেই গড়ে উঠবে পুলিশ ফাঁড়ি।
২০১৭ সালে ওই ভবন গড়ে তোলার কাজ শুরু করে জেলা পরিষদ। চারতলা ভবনের জন্য ছ’কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। সেই কাজ অনেকটা বাকি থাকলেও আর অর্থ বরাদ্দ করেনি জেলা পরিষদ। এমন পরিস্থিতিতে মন্দিরের নজরদারির জন্য জেলা পুলিশের তরফে অস্থায়ী ফাঁড়ি চালু হয়েছিল ওই ভবনে। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে আনুষ্ঠানিক ভাবে ওই গেস্ট হাউস রাজ্য সরকারের অধীনস্থ সংস্থা ‘হিডকো’র হাতে হস্তান্তর করেছে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। এরপর ওই ভবন দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ করে সেখানে জগন্নাথ ধামের প্রধান কার্যালয় খুলতে চাইছে ‘হিডকো’। পাশাপাশি ওই ভবনে পূণ্যার্থীদের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা, অগ্নি নির্বাপণেরও ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। শুধু তাই নয় উদ্বোধনের দিন এবং তারপর প্রচুর মানুষের ঢল নামবে বলে মনে করছে জেলা প্রশাসন। তাই গাড়ির পার্কিং নিয়ে ও চিন্তায় রয়েছে আধিকারিকেরা।
সম্প্রতি মন্দিরের পাশে এক হোটেল ব্যবসায়ীর জমি নিয়েছে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ। ওই উদ্যোগপতিকে তিন একর জমি লিজ়ে দিয়েছিল পর্ষদ। প্রথমে সেখানে রথ রাখার কথা চিন্তাভাবনা করেছিল প্রশাসন। কিন্তু সেই জমি ফেরত দিতে রাজি হননি ওই শিল্পপতি। হাই কোর্টে মামলাও করেছিলেন তিনি। পরে পর্ষদের তরফে ওই ব্যবসায়ীকে নিউ দিঘার ‘বি-ওয়ান সেক্টরে’ বিকল্প জমির প্রস্তাব দেওয়া হয়। তাতে তিনি রাজি হন। এরপর ওই লিজ় জমি ফেরত নিয়ে হিডকোর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে পর্ষদের তরফে। গাড়ি পার্কিংয়ের পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে সেখানে। পরিকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে জগন্নাথ ধামের দু’দিকে যে জমির সমস্যা ছিল, তা মিটে যাওয়া স্বস্তিতে আধিকারিকেরাও।
এ বিষয়ে শিল্পপতি নিত্যহরি কুণ্ডুর প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি বলেন, ‘‘জেলা পরিষদের গেস্ট হাউস হস্তান্তর হয়ে গিয়েছে। জগন্নাথ ধামের প্রধান কার্যালয়-সহ কিছু পরিকাঠামো গড়ে উঠবে। আর গাড়ি পার্কিংয়ের কথা মাথায় রেখে মন্দিরের পাশে এক শিল্পপতিকে, যে জমি লিজ়ে দেওয়া হয়েছিল, তা-ও ফেরত নেওয়া হয়েছে। আপাতত আর কোনও সমস্যা থাকল না।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)